May 19, 2024, 4:43 pm


কূটনৈতিক ডেস্ক

Published:
2024-01-06 00:20:22 BdST

নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্র কি নিষেধাজ্ঞা দেবে?


আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নানা রকম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা, চ্যালেঞ্জ সবকিছু মোকাবিলা করেই এখন নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ।

যদিও বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারপরও নির্বাচন নিয়ে একটি উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

তবে এই নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় শঙ্কা এবং উৎকন্ঠা যে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যাচ্ছে তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা।

নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে কিনা—এ নিয়ে এখন কূটনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পরপরই কম্বোডিয়া বা নাইজেরিয়ার মতো বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে—এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নানা রকম ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন তার নির্বাচনী প্রচারণার শেষ ভাগে এসে।

তিনি বলেছেন যে, পোশাক শিল্পের ওপর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে তারাই বিপদে পড়বে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, আটলান্টিকের ওপারের নিষেধাজ্ঞাকে শেখ হাসিনা ভয় পান না।

নিষেধাজ্ঞার এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যেই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসবে না।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন নিষেধাজ্ঞার আশায় বসে আছে। নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন তারা জমাতে পারেনি। আর এই আন্দোলন জমাতে না পারার ফলে এখন তাদের একমাত্র আশার আলো হল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের পরপরই বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসবে। এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই মেনে নেবে না। ফলে সরকারের অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে পড়বে এবং নির্বাচনের পর এই সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বৈধতা দেবে না। 

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা দিবে কি দিবে না বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কূটনীতিক এবং পররাষ্ট্রনীতির অংশ। তবে যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৪/৫ মাস ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে অবস্থান পরিবর্তন করছে তা বিস্ময়কর এবং এখান থেকে মনে করা হয় যে, শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো নিষেধাজ্ঞা নাও দিতে পারে।

২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ কমিয়ে ফেলেছে। এমনকি গতকাল নির্বাচন কমিশনার যে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছিলেন কূটনীতিকদের জন্য, সেই ব্রিফিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অনুপস্থিত ছিলেন। তার বদলে একজন মার্কিন প্রতিনিধিকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল।

স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী নয়। এর ব্যাখ্যা দু রকম ভাবে দেওয়া যেতে পারে।

কূটনীতিকরা মনে করছেন, এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনেই করছে না বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে। সে কারণে তারা নির্বাচনের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আর এই কারণেই তারা অপেক্ষা করছে নির্বাচনের পরে তারা যা কিছু করবে। আর এর ফলে নির্বাচনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারে। একাধিক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হতে পারে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। 

অন্যদিকে, কোনো কোনো কূটনীতিকরা মনে করছেন যে, আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ আছে। এই নির্বাচনের পরপরই যদি ভারতের সঙ্গে অভিন্ন কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে কাছে পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, তাহলে হয়তো নিষেধাজ্ঞা দেবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এমনিতেই নানারকম চাপের মুখে আছে। সেই কারণেই এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এড়িয়েই যাবে। যেভাবে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি নিলে এই উপমহাদেশেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা