May 2, 2024, 11:54 pm


আবু তাহের বাপ্পা:

Published:
2024-03-02 12:59:35 BdST

বিউবোর প্রিপেইড মিটার ক্রয়ত্রুটিযুক্ত মিটার কারিগরি মূল্যায়ণে উত্তীর্ণ করার অভিযোগ


বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ক্রয় প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের অনিয়ম প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৫০ হাজার পিস করে ৪ টি সিঙ্গেল থ্রিফেজ ২ লাখ পিস ও ১০ হাজার থ্রিফেজ করে ৫ লটে ২ লাখ ১০ হাজার পিস প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহব্বান করে বিউবো। ৫টি দরপত্রের জন্য সর্বমোট ৫ টি দেশি বিদেশি কোম্পানি অংশগ্রহণ করে। অভিযোগ উঠেছে একটি বিদেশি কোম্পানির মিটারে মারাত্মক ত্রুটি থাকার পরও কারিগরী মূল্যায়নে ওই প্রতিষ্ঠানকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে পরবর্তী ধাপের জন্য। নিম্ন মানের প্রিপেইড মিটারগুলো সহজেই টেম্পারিং করা সম্ভব এবং সেগুলো থেকে সঠিক রিডিং আসবে না। ফলে বিউবো বিপুল পরিমান রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা বিদেশি সানসিং নিংবো স্মার্ট ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেড নামক ওই প্রতিষ্ঠান রহস্যজনকভাবে উত্তীর্ণ করেছে। সানসিং নিংবো স্মার্ট ইলেকট্রনিক কোম্পানী দরপত্রের বাতিলের অনুচ্ছেদ লংঘন করেছে এবং নানাবিধ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সানসিং নিংবো স্মার্ট ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেড এর দরপত্র মূল্যায়নে এবং তাদের ডেমোস্ট্রেশনে বেশ কিছু অনিয়ম দেখা যায়। বিউবোর দরপত্রে চাহিদা ছিল মিটার অবশ্যই আলট্রাসনিক ওয়েলডেড হতে হবে; যা দরপত্রে “ক্লস নম্বর আই টি টি ২১ দশমিক ১ সেকশন ৭ দমশিক ৬ দশমিক ২ (৬) বর্ণিত ছিল। সেখানে বলা হয় অবৈধভাবে মিটার খোলা রোধ করার বিষয়ে। সানসিং নিংবোর মিটারে প্রয়োজনীয় সুরক্ষ‍া নেই, সেগুলো সহজেই খোলা যায় এবং খোলা বা কাটার কোন দাগ দেখা যায় না।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদ্যুতের মিটারের ক্ষেত্রে এটি বড় দুর্বলতা। কারণ কোন কোন গ্রাহক এই সুযোগ নিয়ে মিটার খুলে বিদ্যুৎ চুরি করতে পারবে এবং বাইরে থেকে বোঝার ও কোনো উপায় থাকবে না। এধরনের নিম্নমানের মিটার ব্যবহার করা হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তথা সরকারের রাজস্ব আয় মারাত্মক ব্যাহত হবে। মিটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ রিলের ব্যপারেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে সানসিং নিংবো। বিউবোর দরপত্রের চাহিদা ছিল রিলে থাকবে বিউবোর চাহিদা অনুযায়ী খ্যাতনামা কিছু ব্র্যান্ডের। কিন্তু তাদের ৪ টি স্যাম্পল মিটারের মধ্যে ৩ টিতেই রিলে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপত্তির দেশ, ব্র্যান্ড এবং নির্দিষ্টতা রিলেতে খোদাই করা বা চিহ্নিত করা ছিলো না। যা সুস্পষ্ট নিয়ম ও বিধির লংঘন।

জানা গেছে, অপর কোম্পানীর থেকে পাওয়া স্যাম্পল মিটারের রিলে খুলে রিলেতেই ব্র্যান্ডের নাম খোদাই করা পাওয়া গেছে। অথচ প্রতারণার উদ্দেশ্যে সানসিং নিংবো নামক এই চাইনিজ কোম্পানী আলাদা একটি খাপ বানিয়েছে তাতে কেজির নাম নামমাত্র প্রিন্ট ছিল। এটিকে প্রতারণা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞগন নিশ্চিত করেন যে তাদের মিটারের রিলে কেজি রিলে নয়। নিম্নমানের সিলিং এবং কমদামী, নন-ব্র্যান্ড রিলে তারা ব্যবহার করেছে তাদের পণ্য স্বল্পদামে তৈরির জন্য। তাদের দরপত্র বাতিলের কিছু আবশ্যকীয় শর্ত লংঘন করেছে বিদেশি এই কোম্পানীটি। রিজেকশন ক্লজ অমান্য করার কারণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী দরপত্র বাতিল করা উচিত বলে বিউবোর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তারা আরও বলেন, সানসিং নিংবোর পণ্যগুলো কোনভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সরকার পুন:রায় অর্থ ব্যয় করে এসব নিম্নমানের পরিবর্তণ করতে হবে যা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ। এতে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা যথাযথ সেবা গ্রহন থেকে বঞ্চিত হবে এবং বিউবো তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, বিউবো এর আগেও একবার সানসিং নিংবোর কাছ থেকে ১৫ ‍হাজার মিটার ক্রয় করে। ওইসব মিটারের প্রত্যেকটিতেই সমস্যা ছিল। সেগুলোতে পুনরায় ফার্মওয়ার পরিবর্তন করে প্রচুর সময় নষ্ট ও অর্থ ব্যায় হয়। মিটারগুলো যেসব জায়গায় লাগানো হয় সেসব জায়গা থেকে প্রচুর অভিযোগ জমা হয় বিউবো বিক্রয় এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলো থাকে। সমস্যায় অতিষ্ট হয়ে প্রান্তিক বিউবোর বিক্রয় এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলো চায় না এই কোম্পানির মিটার তাদের এলাকায় লাগিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়াতে।

পর্যবেক্ষেনে দেখা গেছে, ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা তাদের ডেমোন্সট্রেশনের সময় স্যাম্পল মিটার স্ক্রু ডাইভার দিয়ে সহজেই খুলে ফেলার এবং নখের সামান্য আঁচড়ে রিলের নাম উঠে যাওয়ার ভিডিও ধারণ করেছেন। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের তথ্য অগ্রাহ্য করে তাদের পাশ করানো হচ্ছে কারসাজির মাধ্যমে। হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত মারাত্মক সমস্যা থাকার পরেও রহস্যজনক কারনে তাদের উত্তীর্ণ করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, সানসিং নিংবোর মিটারগুলোকে বলা যায় ‘জিনজিরার’ মাল। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করায় তারা কমদামে মিটার সরবরাহ করতে পারবে। এতে তাদের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কারন সস্তা পণ্য এবং সম্ভাব্য জয়ী কোম্পানিকে সহায়তা দিতে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠাণের বড় একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে।এক্ষেত্রে বড় ‍অংকের লেনদেনের তথ্যও জানিয়েছেন অনেকে।
এ বিষয়ে সানসিং নিংবোর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিম্নমানের ও ত্রুটিপূর্ণ মিটার সংগ্রহের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌ. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ যদি দরপত্রে উল্লেখিত শর্ত লংঘন করে থাকে তাদের কাছ থেকে মিটার সংগ্রহ করা হবে না। এক্ষেত্রে বিউবোর স্বার্থ সংরক্ষণ করেই কাজ করা হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা