April 28, 2024, 1:35 pm


বিশেষ প্রতিবেদন:

Published:
2024-03-13 20:05:39 BdST

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর অধিদপ্তর জুড়ে এখনও শিকড় গেড়ে আছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট


স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চলতি মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করছে। দেশের অবৈধ ও ভূয়া ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।তার প্রতি জনগনের প্রত্যাশা ও আকাশছোঁয়া। দেশবাসীও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ডাঃ সামন্ত লাল সেন।স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও এ খাতে কি করনীয় তা তিনি ভালো করেই জানেন। এ খাতে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা হলো প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও দলীয় বিবেচনায় ডাক্তারদের আলাদা আলাদা ফোরাম। আর এদের ছত্রছায়ায় দেশব্যাপী হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো ঘিরে হয় অরাজকতা।

স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামগ্রিক কার্যক্রম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এ কার্যক্রম ঘিরে দেশব্যাপী কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরেরৃৃ মধ্যে নিজস্ব একটি বলয় সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা হাসিলে তৎপর থাকে। স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত সমূহের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে অঙ্গাঁঅঙ্গি ভাবে জড়িত। দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু তাই নয় বেসরকারী পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন এনজিও সেবা প্রদান করছে। সেক্ষেত্রে ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে এনজিওদের স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ করেছে।

যদি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সমূহের জনবল ও উপকরণ সরবরাহের চেষ্টার ত্রুটি না থাকলেও জনগণ তার ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এর পেছনে প্রধান কারণ এই খাতের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যক্তিগণ চাওয়া পাওয়া ও ক্ষমতা প্রয়োগ। আর এই ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়াকে ঘিরেই দুর্নীতি ও অনিয়মের যাত্রা শুরু। দীর্ঘদিন যাবৎ একই চেয়ারে কর্মরত থাকার কারনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের প্রভুসুলভ আচরণ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি মনে করতে শুরু করে দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

অতি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর স্বল্পতার কারনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে বাধাগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
“দ্য ফিন্যান্স টুডে” স্বাস্থ্য খাতে সেবা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা ধরনের অসংগতি খুঁজে পায়। এ নিয়ে দেশব্যাপী আমাদের বিচক্ষণ অনুসন্ধানী সংবাদ কর্মীরা ব্যাপক অনুসন্ধানে নামে। একে একে বের হয়ে আসতে শুরু করে থলের বিড়াল।

দেশের জনগণের সাথে সম্পৃক্ত সেবা মূলক খাতে অন্যতম পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।এ খাতের সমস্ত অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের নীল কুটির হয়ে ওঠে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়। এখানে থেকেই সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম, সেবা সমূহের উপকরণ সরবরাহ, প্রচার ও প্রসার, লজিষ্টিক সাপোর্ট ও প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেবা কার্যক্রম, ক্লিনিক সমূহ, এনজিও সমূহ ও নিয়োগ,বদলী, পদোন্নতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতি বছর বাজেট, টেন্ডার, কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি প্রদান করা হয় বিধায় এখানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘিরে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট তৈরি হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ একই সিন্ডিকেটের কবলে থাকার কারনে সেবা সমূহ প্রশ্নের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী টেন্ডার, তদবীর ও দুর্নীতি করে ফুলে ফুঁফে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার ফলে ধরাকে সরাজ্ঞান করতে থাকে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের সচিব মোঃ আজিজুর রহমান দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর সর্বপ্রথম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন।

ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের মধ্যে দীর্ঘদিন দাপটে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঢাকার বাইরে বদলীর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর অধিদপ্তর জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। অত্যন্ত সাহসী ও কঠোর মনোভাব নিয়ে তিনি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা চালাচ্ছে যা দেশব্যাপী কর্মরত প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তাও কর্মচারীদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে।

এ অধিদপ্তরের প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দাপট।ইতোপূর্বে প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিয়মিত হওয়ার পরে ও সর্বোচ্চ ৩১ বছর পর্যন্ত একই চেয়ারে থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। আবার অনেকের যোগ্যতা থাকার পরেও তাদের কাঙ্খিত পদে পদায়ন করা হয়নি। উপযুক্ত ব্যক্তিরাও হয়েছে পদ বঞ্চিত। অনেকে হতাশা নিয়েই চাকুরী জীবন শেষ করতে যাচ্ছে।

সচিব আজিজুর রহমান দৃঢ় পদক্ষেপ সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি পরায়ন অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঢাকার বাহিরে শাস্তিমূলক বদলী করলে ও এখন ও সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য রয়েছে বহাল তবিয়তে।উক্ত সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা কর্মস্থলে না গিয়ে ঢাকায় বসে তদবির বানিজ্য করে বেড়াচ্ছে।

বিগত সময়ে নানা কারণে বিতর্কিত দুর্নীতি পরায়ন একজন কর্মকর্তা সিনিয়রদের ডিঙ্গিঁয়ে পরিচালক পদে পদায়নে অধিদপ্তর জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। সর্ষের মধ্যে ভুত রেখে ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। পুরো অধিদপ্তর এর সিংহভাগ অর্থ উপকরণ ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ব্যয় করা হয়। অতএব বড় বড় মালিকরা ঠিকাদারদের নজর ও সখ্যতা এ বিভাগকে ঘিরে। যদি চলতি বছর উপকরণ সংগ্রহ ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরেও সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাত অত্যন্ত লম্বা। বিগত ৫ বছরের কার্যাদেশ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ, হিমালয় ট্রেডিং হেলাল এন্টারপ্রাইজ, ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলোই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

সারা দেশে নিয়োগ বদলী ও পদোন্নতি নির্ধারনে একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো । এদের অনেকেই ঢাকার বাইরে বদলী করলেও মূলত এরাই ঘুরে ফিরে তদবির করে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অতি সম্প্রতি খুলনা বিভাগের বদলীতে ব্যাপক বাণিজ্য হয়েছে এ জাতীয় তথ্য উঠে এসেছে।

দুর্নীতিপরায়ণ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও এদের কার্যকালীন সময়ের দুর্নীতির বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতিবাজরা পুরো অধিদপ্তকেই কলঙ্কিত করেছে। করোনা কালীন সময়ের পূর্বে প্রায় সংস্রাধিকআউটসোসিং কর্মী নিয়োগ ব্যাপক বানিজ্য হয়েছে।

দেশ ব্যাপী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমস্ত কাজের মুল্যায়ন নির্ধারিত হয় তাদের কর্ম মুল্যায়নে ও অডিট/নীরিক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু নীরিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।এ বিভাগে ৩১ বছর পর্যন্ত একই চেয়ারে কর্মরত রয়েছে এমন একাধিক কর্মকর্তা ও রয়েছে ।এ বিভাগের আবুল কালাম আজাদ যার রুমে ডা: মনোয়ার হোসেন আত্মহত্যা করেছে। অথচ তার এখন পর্যন্ত কোন বিচার হয়নি। কাজী মাসুমা ও ফজলুল কাদের স্বামী -স্ত্রী ৩১ বছর যাবৎ কর্মরত। শফীকুল ইসলাম ধনাঢ্য ব্যক্তি, মিরপুর রাইন খোলায় নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। ক্ষমতাধর মোতাহার হোসেন গ্রামের বাড়ী পাবনা বেড়া। এ সমস্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আমলনামা ও অবৈধ সম্পদের তালিকা দ্য ফিনান্স টুডে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

উপকরণ সংগ্রহ বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার কেনাকাটা করে এ বিভাগ থেকে । তাই প্রভাবশালী ঠিকাদারগনের দৃষ্টি এ বিভাগ ঘিরে। কর্মকর্তা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট মিলেই বিভিন্ন বিভাগ থেকে পন্যের তালিকা তৈরি করে থাকে। আর এ তালিকা ধরে উপকরণ সংগ্রহ করা হয়।

দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এ অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুসঙ্গঁ। ভূয়া ট্রেনিং এর নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা।ভূয়া ট্রেনিং ও ট্রেনিং এ উপস্থিত না থেকে ও টাকা আত্নসাতের তথ্য প্রমান রয়েছে গণমাধ্যমের হাতে।

অধিদপ্তরের পুরো ভবন মেইনটেনেন্স ও পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করে কমন সার্ভিস ইউনিট। এ ইউনিটের বিরুদ্ধে ও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কেনাকাটা,গাড়ী মেরামত,জ্বালানী ক্রয়ে অনিয়মের একাধিক তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে। ড্রাগস এন্ড স্টোরস বিভাগের বিরুদ্ধে অনিয়মের শেষ নেই।যা বিস্তারিত পরবর্তী প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ সহ তুলে ধরা হবে।

সারাদেশে স্যাটেলাইট ক্লিনিক ও ফার্টিলিটি সেন্টারগুলো নিম্ন আয়ের ও গরীর মানুষের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এগুলো থেকে জনগণের সেবা চিহ্নিত গল্পে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্সের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে হবে।বিগত দিনে অত্যান্ত নিম্নমানের সরজ্ঞাম সরবরাহ করা হয়েছে। যা দিয়ে মান সম্মত সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়।

পুরো স্বাস্থ্য খাতের স্বাস্থ্য সেবা,স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার বিভাগের কল্যান বিভাগসহ নাসিংসহ খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রণালয়ে উদ্যোগ তখনই পুরোপুরি সফলভাবে যখন সর্বপ্রথম প্রতিবন্ধকতা ও অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা