April 27, 2024, 12:45 pm


আতিক হাসান শুভ

Published:
2024-03-21 11:56:24 BdST

কেজিতে বেড়েছে ১৫০০ টাকাঈদের আগেই মসলার বাজারে আগুন


নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার বহু আগেই দখল করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের তৎপরতা তুঙ্গে। বাদ যায়নি মসলার বাজারও। এবার রোজার আগে থেকেই সব ধরনের মসলার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছিল পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারিতে হাতে গোনা দু-একটির দাম কমলেও বাকি সব মসলার দাম বেড়েছে।

দারুচিনি, গোল মরিচ, সাদা মরিচ, লবঙ্গ থেকে শুরু করে সব ধরনের মসলার দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এলাচের দাম।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা চালাকি করে রোজার অনেক আগেই মসলার দাম বাড়িয়েছে, যেন কোনও ক্রেতা বলতে না পারে ঈদের আগে দাম বাড়ানো হয়েছে।

আবার কেউ কেউ বলছেন, মূল্য তালিকা থেকেও অনেক বেশি দামে মসলা বিক্রি করা হচ্ছে। মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের কোনও মিল নেই। অমিল থাকার বিষয়ে নানা অজুহাত দেয় বিক্রেতারা।

বুধবার (২০ মার্চ) পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার, চকবাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে মসলার দরদাম দেখা হয়। গত বছর যে এলাচ কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, সেই এলাচ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়ে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকায়।

কিশমিশের কেজি বেড়েছে কমপক্ষে এক থেকে দেড়শ’ টাকা। ৪০০ টাকার কিশমিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। দুই মাস আগেও লবঙ্গ ছিল ১ হাজার ৪৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে।

এছাড়া কালো গোল মরিচ ৮২০ টাকা, সাদা মরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা, আলুবোখারা ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এগুলোর দাম ৫০-১২০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল।

কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে কাঠবাদাম ১ হাজার ৫০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ১৮০ টাকা এবং পেস্তাবাদাম ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর থেকেও বেশি দামে মসলা বিক্রি হচ্ছে কিছু কিছু দোকানে।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স সাথী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘দুই-আড়াই মাস আগে যে এলাচ ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি ছিল, সেটা এখন ২ হাজার ৬০০ টাকা। ১ হাজার ৪০০ টাকা যে এলাচ ছিল, তার কেজি এখন ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আবার একটা এলাচের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৪ হাজার টাকা হয়েছে। মানে দুই মাসের ব্যবধানে এক-দেড় হাজার টাকা দাম বেড়েছে। কালো মরিচ, কাঠবাদাম, সাদা মরিচ এগুলো কেজিপ্রতি এক দেড়শ’ টাকা বেড়েছে। পেস্তাবাদামে বেড়েছে ৬০ টাকা। একদিনে দুইশ’ টাকার বেশি বেড়েছে কাজুবাদামের দাম। শুধু মসলার মধ্যে জিরাসহ দুই-একটার দাম কমেছে। ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকার জিরা এখন ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলার খুচরা বিক্রেতা মো. ওয়াসিম বলেন, ‘মসলা খুচরা পর্যায়ে ১০, ২০ বা ৫০ টাকার বিক্রি হয়। আবার কেউ ১০০ গ্রাম বা সর্বোচ্চ আড়াইশ’ গ্রাম নেয়। আমরা সেই হিসাবে পাঁচ থেকে ১০ টাকা লাভ করি। গতবার আমরা যে দামে মসলা কিনেছি এবার তার থেকে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজিপ্রতি বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পাইকারি দামের ওপর আমাদের বেচাকেনা। পাইকারিতে কম দামে পেলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারবো। এমন কোনও মসলা নাই, যার দাম বাড়েনি। তবে এখন পর্যন্ত জিরার দাম কম আছে।’

পুরান ঢাকার চকবাজারে খুচরা দোকানে মসলা কিনতে আসা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি পাইকারি পর্যায়ে কয়েক ধরনের মসলার দাম কমেছে, কিন্তু খুচরায় তা কমার নাম নেই। খুচরা দোকানিদের মুখে সবসময় শুনি দাম বাড়তি।’

খুচরা পর্যায়ে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটা সেলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এই ক্রেতা বলেন, ‘খুচরা বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভালোভাবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করবে, সাধারণ মানুষকে ঠকাবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সাধারণ জনগণ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। তারা যেভাবে পারছে আমাদের থেকে দাম নিচ্ছে। একেক দোকানে মসলার একেক দাম। দোকানিরা ইন্ডিয়ান বা চায়নার পণ্য বলে দাম বেশি রাখছে। দাম যাই হোক, সব দোকানে এক দাম হওয়া উচিত। ঈদকে কেন্দ্র করে যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উচিত অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, জরিমানা করা।’

মূল্য তালিকা দেখাতে অনাগ্রহী বিক্রেতারা

মৌলভীবাজারের অনেক দোকানে নেই মূল্য তালিকা। আবার অনেক দোকানি মূল্য তালিকা দেখাতে অনাগ্রহী। কেন তালিকা টানানো হয়নি জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের আজমীর ট্রেডার্সের বিক্রেতা বলেন, ‘দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করে। এতক্ষণ দোকানের সামনে তালিকা ছিল। এখন বন্ধ করে ফেলবো বলে ভেতরে নিয়ে রেখেছি। কাল আবার নতুন মূল্য সংযোজন করে তালিকা দোকানের সামনে রাখবো।’

এমন অসংখ্য বাহানা দিয়েছেন বিক্রেতারা। মৌলভীবাজারের ১০ নম্বর আলী হোসেন খান রোডের তাকওয়া এন্টারপ্রাইজ, আলী আজগর হোসেন খান রোডের মেসার্স নরসিংদী স্টোর, আজমীর ট্রেডার্স, রোহান এন্টারপ্রাইজ ও জোব্বার স্টোরে ছিল না মূল্য তালিকা। মেসার্স নরসিংদী স্টোরের বিক্রেতা ওহাব নাঈম মূল্য তালিকা না থাকার বিষয়ে বলেন, ‘আছে, কিন্তু একটু ব্যস্ত আছি। এ জন্য দেখাতে পারছি না।’

তালিকা দোকানের সামনে উন্মুক্ত রাখার কথা। তাহলে কেন রাখা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, ‘দোকানে আপাতত সবাই ব্যস্ত। কাজ করতে গিয়ে হয়তো দোকানের কর্মচারীরা অন্য জায়গায় রেখেছে।’

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দামে মসলা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

জয়নাল নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এখানকার বেশিরভাগ দোকানেই মূল্য তালিকা নেই। আর থাকলেও সেটা ক্রেতারা দেখেন না। ম্যাজিস্ট্রেট এলে কোনও রকম তাড়াহুড়ো করে একপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে আমার দোকানের জন্য পাইকারি দরে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জয়ত্রী কিনতে এসেছি। এই দোকানে মূল্য তালিকা দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখায়নি। পরে পণ্য কেনা শেষে খেয়াল করলাম, আমার কাছ থেকে প্রতি কেজি জয়ত্রীতে একশ’ টাকা বেশি রেখেছে। এলাচের তালিকার দাম থেকেও একশত টাকা বেশি নিয়েছে।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা