May 7, 2024, 6:11 am


ঐতিহ্যের ঢাকা ডেস্ক:

Published:
2024-03-31 13:23:08 BdST

ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুরান ঢাকার


বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত থাকলেও এখন স্থানান্তর করা হয়েছে। তৎকালীন সময়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম, ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরান ঢাকায় ছিল। আর সদরঘাট ছিল এর প্রধান কেন্দ্র। এখানে নদীপথে লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা চলাচল করে। ফলে খুব সহজে মানুষ পুরান ঢাকা থেকে দক্ষিণ অঞ্চলের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট এবং চাঁদপুরে যাতায়াত করতো। এ দেশের জনসংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর গ্রামে মানুষের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। কাজের সন্ধানে তারা গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় আসছে। এতে অপর্যাপ্ত জায়গায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা বাস করছে। রাস্তাঘাটে তীব্র ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কিন্তু নদীপথে এমন ট্রাফিক জ্যামের মুখোমুখি হতে হয় না। বাংলাদেশের প্রথম ফুট ওভার ব্রিজ বাংলা বাজার মোড়ে অবস্থিত। এটি ব্রিটিশ সময়ে তৈরি করা হয়েছিল।
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে বুড়িগঙ্গা নদী। এই নদী এখন মরা নদী। এর পানি খুবই কালো। এতে কোনো মাছ নেই। কিন্তু বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় খুব এগিয়ে আছে। আর শ্যামবাজার ও ফরাশগঞ্জ এর মধ্যে অন্যতম। এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। শ্যামবাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে সবজি, মসলা, তরকারি, ফল ইত্যাদি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব কিছু বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে শ্যামবাজারে আসে। নদীর উত্তর তীরে গড়ে ওঠা ফরাসি বণিকদের স্মৃতিবিজড়িত এলাকাটির নাম ফরাশগঞ্জ। ১৭৫০ সালের দিকে ফরাসিরা বাংলায় আসে। তারা এসে ফরাসগঞ্জ ভ্রমণ করে এবং তাদের খুব পছন্দ হয় ব্যবসা করার জন্য। তৎকালীন সময়ে ব্যবসায়ীরা বণিক নামে পরিচিত ছিল ছিল। ফরাসি বণিকরা প্রতিষ্ঠিত করে সেখানে একটি ছোট্ট ‘গঞ্জ’। যেহেতু তাদের জাতীয়তা ছিল ফরাসি। ফলে সেই গঞ্জটি, ফরাশগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। এখানেই তারা বাণিজ্যিক কুঠিও স্থাপন করে। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ফরাসিরা তাদের কুঠি, ব্যবসা বেঁচে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। ফরাসিরা চলে গেলেও ফরাশগঞ্জ টিকে গেছে কালের ক্রমে। তখন পুরান ঢাকার স্থানীয় মানুষেরা এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করা শুরু করে। ফলে অনেক সবজি, পান সুপারি, মসলা, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুনের আড়ৎ গড়ে তোলে।
পুরান ঢাকার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় বাহন হলো রিকশা। এই প্রাচীন শহরটির যাতায়াতের পথগুলো অত্যন্ত সরু হওয়াতে রিকশা এখানকার প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পণ্য পরিবহনের জন্য মানুষ টানা চাকা গাড়ীও রয়েছে প্রচুর। এতে ভারী মালামাল এখন পর্যন্ত বহন করে। তবে পুরান ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ি অধিক জনপ্রিয়। এটি স্থানীয় মানুষের কাছে টমটম নামে পরিচিত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই ঘোড়ার গাড়ি। অনেক মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার জন্য পুরান ঢাকায় আসে। প্রাচীন কালে যখন যন্ত্রচালিত বাহন ছিল না, তখন মানুষ পশুচালিত গাড়িতে করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতো। শুধু তাই নয়, জমিদার ও নবাবের বাহন ছিল এটি। কিন্তু এটি বর্তমানে শুধু পুরান ঢাকাতে পাওয়া যায়। প্রাচীন রাজধানী শহর পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যায়। কিন্তু ভাড়া একটু বেশি লাগে। জনপ্রতি ৩০ টাকা করে ভাড়া লাগে। এতে প্রায় ১০-১২ জন যাত্রী বসতে পারে। আর এই গাড়িতে চড়ার আনন্দ আলাদা। যেখানে মানুষ বাস, রিকশা, সিএনজি তে করে যাতায়াত করছে, আর ঘোড়ার গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। এতে চড়ে আশেপাশের সব দেখা যায়। উন্মুক্ত গাড়িতে বসে খোলা আকাশের নিচে টগবগিয়ে এগিয়ে যায়। তবে রূপকথার গল্পেও অনেক শুনলেও বাস্তবে দেখা যাবে পুরান ঢাকায়। যেমন পঙ্ক্ষিরাজ ঘোড়া, রাজপুত্রের টগবগিয়ে চলা ঘোড়া। এছাড়া যান্ত্রিক বাহনগুলোর মধ্যে বাস, টেম্পো, সি.এন.জি. চালিত অটোরিকশা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পুরান ঢাকার অধিকাংশ স্থানীয় অধিবাসী আদি ঢাকাইয়া।

সম্পাদনায়: সালাহউদ্দিন মিঠু
তথ্য সহযোগিতায়:- ওল্ড ঢাকা জার্নালিস্টস ফোরাম

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা