বিশেষ প্রতিবেদক:
Published:2024-04-02 17:53:05 BdST
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরএকই চেয়ারে ৩২ বছর ক্ষমতার উৎস কোথায়?-পর্ব-২
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরী প্রদান ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি বিধিমালা বা নিজস্ব প্রবিধানমালা মেনে চাকুরী করতে হয়। মূলত সরকারি চাকুরীর শংঙ্খলা বিধিমালায় ১টি বিষয় অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হল সততা ও নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের জমাট বাধা অনিয়ম ও দুর্নীতি পুরো অধিদপ্তর কে কলুষিত করে ফেলেছে। বর্তমান দায়িত্বে প্রাপ্ত মন্ত্রী ও বিশেষ করে সচিব আজিজুর রহমানের ব্যক্তিগত দুর্নীতি বিরোধী ভূমিকার কারনে অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি ও কর্মকান্ডে মন্ত্রনালয়ের বিশেষ করে সরকারের স্বাস্থ্য খাতে কর্মসূচিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এ অধিদপ্তর এর প্রধান সমস্যা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট। দ্য ফিন্যান্স টুডে নিয়মিত ধারাবাহিক ভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, টেন্ডার বাণিজ্য, কর্মচারীদের নিয়োগ বদলী,পদোন্নতি নিয়ে তথ্য বহুল সংবাদ প্রকাশে সে দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। সারা দেশ থেকে ব্যাপক তথ্য প্রমাণ আসার ফলে আমাদের প্রকাশিত সংবাদ বস্তনিষ্ঠাতার শীর্ষে অবস্থান করছে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনে একই চেয়ারে ২৫-৩২ বছরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আমলনামা প্রকাশে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের টনক নড়ে। অধিদপ্তর দীর্ঘদিন একই চেয়ারে চাকুরীতে থাকা কর্মচারী সিন্ডিকেটও কর্মকর্তাদের বদলী করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। “সর্ব অঙ্গেঁ ব্যথা -ঔষধ দিব কোথা” সেই প্রবাদের মত এমন কোন শাখা নাই যেখানে দুর্নীতি অনিয়ম,অবৈধ সম্পদ ও পেশী শক্তি নেই। দীর্ঘদিন জমে থাকা ধুলাবালি ও যেমন এক সময়ে পাথর হয়ে যায়। ঠিক তেমনি একই বিভাগে ২৫-৩২ বছর চাকুরী করলে তা ও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়।উক্ত স্থান গুলো এক সময় দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়। অদৃশ্য হাতের ইশারায় অনেক সময় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও বৃদ্ধাঙ্গুঁলি দেখায় কেউ কেউ তেমননি দু’একটি দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে উঠেছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা ইউনিট। এই ইউনিট অধিদপ্তরের সমস্ত কাজকর্ম, কেনাকাটা, অর্থ সংক্রান্ত বিষয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৈনন্দিন যাবতীয় বিষয় নিরীক্ষা করে থাকে। কিন্তু যাদের দ্বারা নিরীক্ষা কার্যক্রম করা হয় তাদের সততা ও যোগ্যতা নিয়ে যখন প্রশ্ন জাগে তাহলে “সর্ষের মধ্যে ভূত তাড়াবে কে”?
অতি সম্প্রতি অধিদপ্তর বেশ নিরীক্ষা শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলীর আদেশ প্রদান করে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। সারাদেশ নিরীক্ষা/অডিট করতে যাওয়া মানে প্রতিটিট্রিপে ২/৩ লাখ টাকার অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করা। এরকম অসংখ্য তথ্য প্রমাণ দ্যা ফিন্যান্স টুডে হাতে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও এদের ব্যক্তিগত অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তালিকা ও এসেছে। নামে- বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এর প্রধান কারন ২৫-৩২ বছর পর্যন্ত একই চেয়ারে কর্মরত থাকা।
অতি সম্প্রতি নিরীক্ষা ইউনিটের পরিচালক মার্জিয়া হক বদলী কৃত কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে আবার নতুন করে কর্ম বন্টন করে দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় বইছে কারন যে সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলীর আদেশ হয়েছে তাদের ছাড় পত্র না দিয়ে কিভাবে নতুন করে কর্ম বন্টন করা হয়।
এছাড়াও নিরীক্ষা ইউনিটের অত্যন্ত ক্ষমতাধর কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বদলীর আদেশে তার ফাইলে উঠার কথা থাকলে প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা তার অত্যন্ত শুভাকাংখী কর্মকর্তা উক্ত ফাইল আটকে দেয়।যার ফলে তার বদলীর প্রক্রিয়া ধামাচাপা পড়ে যায়।
১৯৮৯ সালে চাকুরীতে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক কর্মচারী মোতাহের হোসেন বর্তমানে সহকারী হিসাব নিরীক্ষা কর্মকর্তা। চাকুরী জীবনে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে নিজে যদিও সরকারী কোয়ার্টারে বসবাস করেন কিন্তুএলিফ্যান্ট রোডে বিলাসবহুল ফ্লাটের মালিক। যা ভাড়া দিয়ে রেখেছে। এছাড়াও কোটি কোটি টাকার মালিক। ছেলেকে বেসরকারী মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করাচ্ছেন। এমএলএমএস দের অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ৩৩ বছর যাবৎ অধিদপ্তরে।
নিরীক্ষা ইউনিটের এ কে এম সাইয়েদুল আবরার পদবী হিসাবরক্ষক । ৩২ বছর যাবৎ কর্মরত। বরাদ্দ, কেনাকাটা সাথে সংযুক্ত। মিরপুরে রয়েছে আলিশান ফ্লাট ও কুমিল্লার জগন্নাথ দীঘি, চৌদ্দগ্রামে অঢেল সম্পদ।
আবুল কালাম আজাদ। হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা। কামারখন্দ সিরাজগঞ্জে অঢেল সম্পদ। উত্তরার উত্তরখানে ৫ কাঠা ও দক্ষিণ খানে ৪ কাঠা এবং কবি জসীম উদ্দীন রোডে ৫ কাটার প্লট রয়েছে ।
মিরপুর আগারগাঁও এ আলিশান ফ্লাট। এই সেই আবুল কালাম আজাদ যার রুমে নরসিংদীর ডা: মনোয়ার হোসেন আত্মহত্যা করেন। রহস্রাবৃত্ত এ হত্যার আজও বিচার হয়নি। এমন কি বহাল তবিয়তে রয়েছে আবুল কালাম আজাদ। ৩২ বছর যাবৎ একই অধিদপ্তরে ।সর্বশেষ পরিচালক মার্জিয়া হকের শেষ অফিশিয়াল আদেশে ও তাকে ঢাকা বিভাগে ও অধিপ্তরের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
সিসিএসডিপির মো: জামান। ষাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর। ২৫ বছর বাজেট বরাদ্দ শাখার দায়িত্বে। মিরপুর-২ এ বিশাল ১৫০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাট রয়েছে। অধিধপ্তরের চাকুরী ৩২ বছর।
প্রশাসন ইউনিটের পেনশন শাখার মো: হেলাল উদ্দিন, উচ্চমান সহকারী ক্যাশিয়ার থেকে পদোন্নতি পেয়ে উচ্চমান সহকারী। ২০ জনের অধিক নিকট আত্নীয় পরিবার সদস্য ও অনেককে টাকার বিনিময়ে চাকুরী দিয়েছে। ছোট ভাই দুলাল কে রাজশাহী থেকে বদলী করিয়ে সদ্য প্রশাসন ইউনিটের উচ্চমান সহকারী হিসেবে এনেছেন। দুলালের স্ত্রী পরিদর্শিকা, কুমারখালী ,কুষ্টিয়া। এফ ডব্লিউপিতে কর্মরত। তার স্ত্রীর ভাই সোহরাওয়ার্দী খুলনাতে উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত। দুর্নীতির মাস্টার মাইন্ড।হেলাল উদ্দিন বহাল তবিয়তে আছেন প্রশাসন ইউনিটে পেনশন শাখায়। পেনশন বুঝে নিতে হলে তার আশীর্বাদ প্রয়োজন হয়।
এমসিএইচ ইউনিটের এমএলএমএস অখিল। চাটুকারিতায় সিদ্ধহস্ত। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ফুট ফরমায়েস খেটে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে অধিদপ্তরে চাকরি বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
দুর্নীতি স্বজন প্রীতি ও সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী এদের ভেদ করা অত্যন্ত কঠিন । তারপরেও মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকলে অধিদপ্তর সহ সারা দেশে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.