May 5, 2024, 2:58 am


বিশেষ প্রতিবেদক:

Published:
2024-04-25 16:23:34 BdST

“পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর”দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় ভয়াবহ সংকট


দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে মা ও শিশুর চিকিৎসা, জন্ম নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ও নিরাপদ গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা ও সন্তান প্রসবের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশে নয় বর্হিবিশ্বে ও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে ৫ দশকে এ প্রতিষ্ঠানের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকায় রেখে আসছে। দেশব্যাপী প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ সেবা প্রদান করলেও এখন পর্যন্ত রয়েছে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঘাটতি। এ ঘাটতি মোকাবেলায় সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে মুখোশধারী একটি সিন্ডিকেট (কর্মকর্তা -কর্মচারী ও পেশীশক্তি) সরকারের একটি সফল উদ্যোগ পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কলঙ্কিত করেছে।এ নিয়ে গণমাধ্যমে ও সোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হলে মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত সুদক্ষ সচিব এর তড়িৎ পদক্ষেপ অসাধু চক্রের এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এর ফলে একদিকে প্রকৃত মেধাবী চাকুরী প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে অপরদিকে মাঠ পর্যায়ের অসাধু পন্থায় চাকরী প্রত্যাশীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পদক্ষেপে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী সিন্ডিকেট ভেঁঙে দেওয়া হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে চরম বদলী আতঙ্ক বিরাজ করেছে।

“সর্ব অঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিব কোথা” এ প্রবাদের মত অধিদপ্তরের ভেতরে এখনো রয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যদের গোপন প্রভাব। অধিদপ্তরের ৫ দশকের সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর উপকরন , মুখে খাওয়ার বড়ি,কনডম, ইনজেকশন ও কিটের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে সারা দেশে জনবল সংকট অপরদিকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটিতে ১১ হাজার ও অধিক পদ শুন্য রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ইনজেকশন ও চলমান পদ্ধতির মুখে খাওয়ার বড়ি, কনডম ও কিটের সংকটে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে। যার ফলে দেশে এই বৈশ্বিক চরম অর্থনীতির সংকটের সাথে নতুন করে অধিক জনসংখ্যার সংকট তৈরি হওয়ার আশংকা রয়েছে ।

বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাহারা দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবার পরিকল্পনার অধীনে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর উপকরন সুবিধা গ্রহণ করে এসেছে তাহারা কোন ভাবেই দোকান/ফার্মেসী থেকে বড়ি,কনডম কিংবা ইজেকশন ক্রয় করবে না। বিশেষ করে গ্রামঞ্চলের মহিলা তো দূরের কথা পুরুষ সদস্যরাও ফার্মেসি থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপকরণ কিনতে অভ্যস্ত নয় বা কিনবে না। এমন ও অঞ্চল রয়েছে তাহাদের হাতের নাগালে ফার্মেসি নেই। পরিবার পরিকল্পনার জন্মনিয়ন্ত্রণ শৃংখল ভেঙ্গে পড়বে। দেখা দিবে চরম সংকট । বেড়ে যাবে জন্মহার । এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপর বর্তায়। অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের শৃংখল পদ্ধতি থেকে বের হয় যাবে এ জনগোষ্ঠী। চলমান এই সংকট ১ দিনে হয়নি। অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অধিদপ্তরে কর্মরত এবং সবচেয়ে বেশী সময় ধরে মহাপরিচালকের চেয়ারে অশীন সংকট এর দায়-দায়িত্ব তার উপরে বর্তায়। এর সাথে যুক্ত আছে লজিষ্টিক শাখার ক্ষমতাধর একজন কর্মকর্তা। যিনি কোন নিয়ম শৃঙ্খলা কে তোয়াক্কা করতে চান না। মহাপরিচালক ও দীর্ঘদিন লজিষ্টিক শাখার কর্মরত এই কর্মকর্তার প্রভাবেই আজকের এ সংকটের মূল উদ্ভব বলে দাবী করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। নাম প্রকাশে (একাধিক) জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল আমাদের আজকের সফলতা। এক বা একাধিক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব দায় কেন পুরো জাতির ঘাড়ে চেপে বসবে। একজন সিনিয়র কর্মকর্তা অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের ফল এবং পুরো জাতির ঘাড়ে। দুর্নীতি ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন হিউম্যানিষ্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ড: সেলিম রেজা দ্য ফিন্যান্স টুডেকে বলেন বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রন ও মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অধিদপ্তর অকল্পনীয় অবদান রেখে আসছে। অধিদপ্তরের চলমান যে সংকট গণমাধ্যমে এসেছে তা দেখে আমরা শংকিত। এর সাথে জড়িত যত ক্ষমতাধর ব্যক্তি থাকুক না কেন তাকে সরিয়ে দিয়ে তদন্ত পূবর্ক দোষীদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

মা, শিশু হাসপাতাল ও সেবা কেন্দ্রে জরুরী ঔষধ ও জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রী প্রাপ্তি নিশ্চিত করা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অগ্রাধিকার কাজ। বিগত ৪ বছরে এই অধিদপ্তরে কমোডিটি সিকিউরিটির বিষয়ে ধস নামার কারণ এখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ফোরকাস্টিং করা হয়না। অনুসন্ধানে জানা যায় ৪/৫ বছর আগে বিদেশী সংস্থার সহায়তায় কেনাকাটার প্রয়োজনীয়তা নিরুপন করে এবং মজুদের সবোর্চ্চ ও সর্বনিম্ন নীতিমালা অনুসরন করে, গুদামের ধারণক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হতো। কিন্তু বিগত ৪ বছর এই ধরনের কোন কার্যক্রম না থাকার কারনে মাঠ পর্যায়ে ঔষধ ও জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রীর এই সংকট তৈরী হয়েছে।প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মকর্তা পদায়ন ব্যতিত এই সংকট নিরসন সম্ভব নয় মর্মে বিশেষজ্ঞগন মনে করেন।

এমনকি ডেস্ক পর্যায়ের কোন কর্মকর্তার গুডস, ওয়ার্কস ও সার্ভিস বিষয়ে বিশেষায়িত কোন প্রশিক্ষন নাই দেশেকিংবা বিদেশে।প্রতিবছরই সর্বনিম্ন রেসপন্সিভ দরদাতা সিলেকশনে ত্রুটির কারনে ক্রয় কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয় ও হোপকে রিভিউ প্যানেলে হাজিরা দিতে হয়। এবছর ৪৫ মিলিয়ন খাবাড় বড়ি ক্রয়ে সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। লজিস্টিক ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান গতবছর ফিল্ডে ট্যাবের চরম সংকট ছিল। তখন সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়ার প্রস্তাব করে ক্রয়প্রস্তাব প্রেরণ করা হলেও মহাপরিচালক তা নাকচ করে দেন।এতে মাঠে রিপোর্টিং একদম বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে পুরাতন নিয়মে খাতায় এতে মাঠে রিপোর্টিং একদম বন্ধ হয়ে গেছে।যেখানে পুরাতন নিয়মে খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করা হতো তারাই কিছু প্রতিবেদন জমা দেয়। তাই সেবা ও মালামালের কোন তথ্যই পূর্নাঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে না। জনবলের তীব্র সংকটের কারণে জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রীর ব্যবহার উল্লেযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে বিগত ৪ বছরে, মাঠ পর্যায়ে কোন মনিটরিং ছিলোনা।ডিজির জন্য এক দিনে ৪/৫ প্রোগ্রাম রাখা হতো মনিটরিং এর জন্য যার কোনটিই তিনি যথেস্ট সময় দিতে পারতেন না। গত চার বছরে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনা সেবা দানের সফলতা না থাকায় ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা যাচ্ছেনা কারণ এক মাঠকর্মী তার ক্যাপাসিটির তিনগুন ক্লায়েন্টকে সামলাতে হয়। অন্যদিকে কোন ধরনের আউটসোর্সিং করতেও সক্ষম হয়নি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এই অধিদপ্তরে। বিগত বছরে মাত্র ভাগ এডিপি অর্জন হয়েছে। অধিদপ্তরের পারফরমেন্স খারাপ হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের পারফরমেন্স খারাপ হয়েছে। একজন দক্ষ অভিভাবকের অভাবে কর্মকর্তারা হতাশায় দিন যাপন করছেন।

মহাপরিচালক কোন ঠিকাদারকে সাক্ষাত করেননা তাই সংক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা বলেন এই অফিসে আর মালই সাপ্লাই দিবোনা। দীর্ঘদিন ধরে পাওনা পরিশোধ না করায় অফিসের ক্যান্টিনটি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। হাজারো সমস্যা কিন্তু কোন সমাধান নাই কারণ ডিজি সচিব হিসাবে পদোন্নতি পান নি তাই তার কোন কাজে আগ্রহ নাই।

এ সংকটের নেপথ্য কারন খুঁজতে গিয়ে দেশব্যাপী দ্য ফিন্যান্স টুডের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য আর তাহলো দীর্ঘ দিনের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট অধিদপ্তরের উপকরন সরবরাহের সম্পৃক্ত ঠিকাদারদের সাথে একটি ক্ষমতাধর কর্মকর্তাদের অঘোষিত চুক্তি। প্রতিটি পণ্য সরবরহের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ নিয়ে পণ্য ক্রয় করা করতো। যদি ও কাগজে কলমে তার প্রমাণ নেই। দীর্ঘদিন লজিষ্টিক শাখার সাথে কর্মরত ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সরিয়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় দক্ষ সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড নেপথ্য কুশলীবদের খুঁজে বের করে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী উঠছে।

অধিদপ্তরের সংকটের এ ভয়াবহতা থাকার পরেও অতি সম্প্রতি উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের উপকরন সংগ্রহের টেন্ডার বাতিল সংকটকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ব্যক্তি স্বার্থ এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্মারক নং-৫৯.১১.০০০০.৩০২.০৭.১০৭.২০২৪ (১৪৮১) এ পরিচালক (উপকরন ও সরবরাহ) জাকিয়া আখ্তার স্বাক্ষরিত এক পত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে পিপিআর ২০০৮ ,এর বিধি ৩৩ অনুযায়ী ক্রয় কারী কার্যালয় প্রধান তথা মহাপরিচালক এর অনুমোদন ক্রমে প্যাকেজ অংশগ্রহণকারী সকল দরপত্র বাতিল করা হয়।উক্ত দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রেসপনসিভ প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগস, মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক, পরিচালক ও মহাপরিচালক বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বরাবর আবেদন করে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি শুনানী হয়েছে । পরবর্তীতে রেসপনসিভ প্রতিষ্ঠান মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রীট আবেদন দাখিল করে যার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের বেঞ্চের বিচারপতি মোঃ খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি এ.কে এম জাহিদ সরোয়ার (১) সচিব, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (২) মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (৩) পরিচালক (উপকরন ও সরবরাহ) (৪) মহাপরিচালক বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) যে রুল নিশি জারি করেন এবং সর্বনিম্ন রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কেন ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের জমাট বাধা সিন্ডিকেট এ সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলেছে। কখনো কখনো দেশ ও জাতির প্রয়োজনে দক্ষ অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তিদের জরুরী ভিত্তিতে উপযুক্ত জায়গায় বসিয়ে সংকট মোকাবেলা করা যায়।

অধিদপ্তরের অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটাই অভিমত অযোগ্য ব্যক্তিদের সরিয়ে দ্রুত মন্ত্রণালয় এ সংকট মোকাবেলা করবে এটাই প্রত্যাশা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা