May 20, 2024, 2:31 am


বিশেষ প্রতিবেদন:

Published:
2024-05-08 11:56:51 BdST

ফেঁসে যেতে পারেন সওজ এর দুর্নীতির রাঘব বোয়ালেরা


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দুর্নীতির মামলায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠানকে ঢাকা মহানগরের জ্যৈষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন অতি সম্প্রতি জেল হাজতে প্রেরন করেছে। এই ঘটনা পর সর্বপ্রথম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশব্যাপী সমস্ত কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়াল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীই দুর্নীতির সাথে কম-বেশী জড়িত। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে দুর্নীতি পরায়ন প্রকৌশলী ও কর্মচারীদের দুর্নীতির চিত্র প্রতিবেদনে উঠে আসছে। কিন্তু অদৃশ্য হাতের ইশারায় এদের দুর্নীতির বিচার হয় না বললেই চলে। এমনকি প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও হয় মন্থর গতিতে। যার ফলে সওজ এর অফিস গুলো এককটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে।যেখানেই উন্নয়ন কর্মকান্ড সংগঠিত হয় সেখানেই দুর্নীতির সুযোগ থাকে। এর লাগাম টেনে ধরাই সুশাসনের প্রাথমিক ধাপ।

সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়েরের পর তার সাথে সংযুক্ত একাধিক সিন্ডিকেটের সদস্য ও অনুগত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার উপর গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। অচিরেই এদের ব্যাপারে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে “দ্য ফিন্যান্স টুডে” অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও প্রকাশিত হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটাই পরিচয় এরা দুর্নীতিবাজ। এ ব্যাপারে সরকার প্রধান অনড়।

“দ্য ফিন্যান্স টুডে” দীর্ঘদিন যাবৎ সওজ এর উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি এ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশের ধারাবাহিকতায় দুর্নীতির মামলায় জেল হাজতে প্রেরনকারী সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য তার কর্মকালীন সময়ে তার দপ্তরে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি ফিন্যান্স টুডে প্রতিনিধিকে দেশের সবচেয়ে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে রয়েছে তার সখ্যতা এই কথা বলে নিজেকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও দুর্নীতির চিত্র সঠিক সময় গণমাধ্যমে উঠে আসে। “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে” দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যেই হোক না কেন তার প্রকৃত চিত্র বের হয় আসবেই।

ইতোপূর্বে “দ্য ফিন্যান্স টুডে” একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাবেক একাধিক প্রকৌশলী দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের জালে আটকে আছে। খুব শীঘ্রই এদের ব্যাপারে ও দুদকের চূড়ান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেয়া হবে।

আমাদের অনুসন্ধানের সাবেক ও বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত অসংখ্য প্রভাবশালী প্রকৌশলীদের আমলনামা উঠে এসেছে। এরা এতটাই অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে যে গণমাধ্যমকে আন্ডার ওয়ার্ন্ডের সন্ত্রাসী বাহিনী, প্রভাবশালী ঠিকাদার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্বে গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের দ্বারা শায়েস্তা করতে চায়। এরা বলে বেড়ায় অমুক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার বন্ধ,ু আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখী। কিন্তু দুর্নীতিবাজ ঐ কর্মকর্তারা জানে না যে দেশের প্রধানমন্ত্রী “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স” নীতিতে অবস্থান নিয়েছে এবং গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে কণ্ঠরোধ করা যায় না।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী নিজেকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে মনে করে। অথচ তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর একাধিক বিতর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এমনকি তার আশেপাশে দুর্নীতির বরপুত্ররা অবস্থান নিয়েছে। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে তার কর্মকাণ্ড ও বিতর্কিত হবে।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরে একাধিক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রয়েছে যাদের রয়েছে সম্পদের পাহাড়। ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানদের নামে এরা শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এ সমস্ত কর্মকর্তাদের নিজেদের নামে উল্লেখযোগ্য কোন সম্পদ নাই কিন্তু ভাইদের নামে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা। আমাদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে ভাইদের উপযুক্ত যোগ্যতা না থাকলেও তাহারা ব্যবসায়িক ভাবে আইকন। ঠিকাদারী ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের এরা অংশীদার। অথচ পৌত্রিক সূত্রে এদের তেমন কিছুই ছিলো না। জনমনে একটাই প্রশ্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কি এদের সম্পদের উৎসের ব্যাপারে নিশ্চুপ? না প্রকৌশলীদের কথাই সত্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের বন্ধু-বান্ধব তাদের কিছুই হবে না।

অর্ধডজন বর্তমানে কর্মরত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীদের আলাদা আলাদা ভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তালিকা ও আমলনামা দ্য ফিন্যান্স টুডে ও গোয়েন্দা ডায়রি পত্রিকার হাতে এসেছে। এছাড়াও ডজন খানেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের উপর অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে যে পুরো অধিদপ্তরকেই এরা গিলে খেতে চায়। প্রত্যেকের নামে ও বেনামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। ঢাকা শহরের আভিজাত এলাকায় এদের ফ্ল্যাট, বাড়ি ও দামী গাড়ী রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বিঘায়-বিঘায় সম্পদ ও কয়েকটি করে প্লটের সন্ধান উঠে এসেছে।

সবচেয়ে বেশী দুর্নীতির কারিগর হলো কিছু কিছু নির্বাহী প্রকৌশলীগন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদের দপ্তর গুলোই দুর্নীতির সুতিকাগার। সিন্ডিকেটের ঠিকাদারদের সাথে মিলেই নির্বাহী প্রকৌশলীগন মূলত: দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরী করে। নিদিষ্ট কমিশন ছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীরা কাজে হাত দেয় না। এ জাতীয় ভাগ বাটোয়ারার অসংখ্য তথ্য প্রমান আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগের দুর্নীতির চিত্র আলাদা আলাদা। সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কোটি কোটি টাকার প্রকল্প থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রকল্প গ্রহনের সময় নির্দিষ্ট হারে কমিশন আদায়, প্রকৃত কাজ সম্পাদন না হওয়ার পূর্বেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করে সেখান থেকে কমিশন আদায়, প্রকৃত সম্পাদিত কাজ অপেক্ষা অতিরিক্ত কার্য সম্পাদন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করে টাকা আদায়, ঠিকাদারদের বিল থেকে মূল্য সংযোজন কর কম কর্তন ,ঠিকাদারগন নিম্নমানের পন্য নির্মান সামগ্রী ব্যবহারে দেখেও না দেখার ভান করে। অতিরিক্ত সুবিধা আদায় ছাড়াও নানা ভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত।

মেকানিক্যাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীগণ ভূয়া টেন্ডার বা (ঘুপচি টেন্ডার) করে পণ্য না কিনে ঠিকাদারদের সাথে সখ্যতা করে টেন্ডারের টাকা আত্মসাৎ। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয় কালে যন্ত্রপাতি উপকরণ সংগ্রহ না করেই উক্ত পন্যের অর্থ ভাগাভাগি। পুরানো যন্ত্রপাতি নাম মাত্র মূল্যে অকশনের মাধ্যমে বিক্রয়, প্রকৃত ওজনের চেয়ে অর্ধেক ওজন দেখিয়ে উচ্চ মূল্যের পুরনো যন্ত্রপাতি ও মালামাল নাম মাত্র মুল্যে বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ। ফেরী সার্কেল ফেরী মেরামত ও যন্ত্রপাতি মেইনটেন্যান্স এ পুকুর চুরি। মেকানিক্যাল শাখায় কেনাকাটা ও সেবায় বলা চলে অর্ধেক-ই আত্নসাৎ হয়ে থাকে।গাড়ি মেরামত একই পার্টস বারবার ব্যবহার। অথচ প্রতিবারই উচ্চ মূেল্য যন্ত্রপাতি ও পার্টস ক্রয় দেখানো হয়। এরকম অসংখ্য তথ্য প্রমান দ্য ফিন্যান্স টুডে হাতে সংরক্ষিত আছে। ইতোপূর্বে ফিন্যান্স টুডে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিভাগীয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে তার বাস্তব প্রমান ও মিলেছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে দুর্নীতি ও অনিয়মের আরেকটি ধাপ হল নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলী। লাভজনক পদ ও বিভাগে বদলীর জন্য মোটা অংকের লেনদেন হয়। আবার কখনো কখনো শীর্ষ কর্মকর্তারা লাভজনক ও ভালো ভালো প্রকল্পে পদায়নের জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে থাকে। এমনি একটি পদায়ন হয়েছে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর। আড়াই কোটি টাকার রফাদফার মাধ্যমে উচ্চমাত্রার তদবিরে ঢাকার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়নের পর উত্তর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তার তদবির কারক সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে ডিগবাজি খেয়েছে। তদবির কারকেরা এ ব্যাপারে টাকা বিনিয়োগও করেছে। আড়াই কোটি টাকার রফাদফা করতে গিয়ে একাধিক অডিও, রেকর্ড ও ভয়েস মেইল “দ্য ফিন্যান্স টুডে’’ হাতে এসেছে। এমনকি প্রকৌশলীর হোয়াসঅ্যাপ নম্বর থেকে পাঠানো স্ক্রীনশর্ট ও সংরক্ষিত আছে। আড়াই কোটি টাকা দিয়ে কেন তিনি উচ্চ মাত্রার তদবিরে পোস্টিং নিলেন।এখান থেকেই “ফিন্যান্স টুডের” অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অবাক করার মত ঘটনা ও দুর্নীতির চিত্র।

অধিদপ্তরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের রয়েছে আলাদা একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সদস্যরাই মূলত: মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অনিময় ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়াও নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ডিপ্লোমা সিন্ডিকেট ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এ জাতীয় একটি পদোন্নতির একটা ঘটনার ফলে অধিদপ্তর জুড়ে ব্যাপক আন্দোলোন ও ইতিমধ্যে হয়েছে ডিপ্লোমা ধারীদের।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা