September 20, 2024, 10:22 am


সামিউর রহমান

Published:
2024-05-18 00:34:02 BdST

ন্যায়বিচার পেলো টেকনো ড্রাগস; প্রমানিত হলো সাবেক পরিচালক জাকিয়া আখতারের অনিয়ম ও দুর্নীতিপরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওরাল পিল ক্রয়ের দরপত্র বাতিল অবৈধ: বিপিপিএ


অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৩য় প্রজম্মের মুখে খাওয়ার ওরাল পিল ক্রয়ের সর্বনিম্ন দরদাতা টেকনো ড্রাগসের টেন্ডার আদেশ বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরন ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালক জাকিয়া আখতারের জারি করা নির্দেশনাকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি।

বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির চেয়ারপার্সন রঞ্জিত কুমার চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের রিভিউ প্যানেল উভয় পক্ষের শুনানি পর্যবেক্ষণ শেষে সর্বনিম্ন দরদাতা টেকনো ড্রাগসের পক্ষে রায় দেন। 

প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন, মো: হাবিব উল্লাহ দেওয়ান এবং মো: সাদিক গোলাম সারওয়ার।

রায়ে বলা হয়েছে যে, দরপত্রের সকল শর্ত মেনে টেকনো ড্রাগস দরপথে অংশগ্রহণ করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ প্রদান না করে দরপত্র বাতিল করার মাধ্যমে টেকনো ড্রাগসকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আর এই রায়ের মাধ্যমে দেশের বহু আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশকারী নিউজ পোর্টাল 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'তে ওরাল পিল ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা ও গুরুত্ব প্রমানিত হয়েছে।

উল্লেখ্য যে দরপত্রে অংশগ্রহনের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের ২১/২/০২৪ ইং তারিখে দরপত্র আহবান করা হয়।

উক্ত দরপত্রে (IFT Ref.No-59.11.0000.302.07.40.2023-03 dated.02.01.2024 প্যাকেজ নংFSD/|GD-04 এ টেকনো ড্রাগস লিমিটেড লট ১,২ এবং ৩ এ অংশগ্রহণ করে এবং সর্বনিম্ন রেসপন্সিভ দরদাতা হিসেবে গণ্য হয়।

অধিদপ্তরের ১৩/৩/২০২৪ ইং তারিখে মেমো নং- ৫৯.১১.০০০০.৩০২.০৭.৪০.২০২৩-১৩১১ প্রজ্ঞাপনে উক্ত দরপত্র বাতিল করা হয়।

উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে অদ্য ৩১/৩/২০২৪ ইং টেকনো ড্রাগস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজালাল উদ্দিন আহমেদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েকে বিবাদী করে মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট পিটিশন দায়ের করেন।

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি মোঃ খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে এম জাহিদ সরোয়ার (১) সচিব, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (২) মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর,(৩) পরিচালক, (উপকরণ ও সরবরাহ) উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিট (৪) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) কে রুলনিশি জারী করেন।

আদেশে হাইকোর্ট কেন সর্বনিম্ন রেসপন্সিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন।

উক্ত রুলনিশি জারি হওয়ার পর বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির রঞ্জিত কুমার চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের রিভিউ প্যানেল উভয় পক্ষের শুনানি পর্যবেক্ষণ শেষে সর্বনিম্ন দরদাতা টেকনো ড্রাগসের পক্ষে রায় দেন। 

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিগত ৮-১০ বছরের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের তথ্য থেকে জানা যায় রেনেটা লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, নুভিস্তা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বেশিরভাগ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ করে আসছে।

উল্লেখ্য যে, কোন প্রকার দ্বিধা বা সংকোচন নয় প্রকাশ্যে পছন্দের ঠিকাদার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মুখে খাওয়ার বড়ি কেনাকাটার টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ার কারনে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন বহুল সমালোচিত দরপত্র উন্মুক্ত কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) জাকিয়া আক্তার।উক্ত তৎকালীন পরিচালক জাকিয়া আথতার বর্তমানে একই ইউনিটের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন । উল্লেখ্য যে উক্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুরে-ফিরে লজিষ্টিক ইউনিটের গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। লজিষ্টিক ইউনিটের প্রধান কাজ হল অধিদপ্তরের কেনা-কাটা করা। টেন্ডার, কেনা-কাটাকে ঘিরে একটি নিদিষ্ট টেন্ডার সিন্ডিকেট বলয় রয়েছে। উক্ত সিন্ডিকেটের কারনেই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরন ঘাটতির যে সংকট চলছে তার মূল কারন। এ সিন্ডিকেট বলয় ভাঁঙতে না পরলে অধিদপ্তরের সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) বর্তমানে উপ-পরিচালক জাকিয়া আখতারের আপন ভাই নুভিস্তা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। নুভিস্তা ফার্মা লিমিটেড কখনো রেনেটা লিমিটেড, কখনো টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, কখনো পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর সাথে যৌথভাবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। এবার তারা রেনেটা লিমিটেড এর সাথে যৌথভাবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে।

রেনেটা লিমিটেড অধিক মূল্য প্রস্তাব করে দরপত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বিধায় এই ক্রয়ের সকল দরপত্র বাতিলে পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) ভূমিকা রেখেছেন মর্মে অনেকেই আশংকা করছেন।

পিপিআর, ২০০৮ অনুযায়ী ক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কোন দরদাতার সাথে কোনরুপ সম্পর্ক থাকার সুযোগ নেই।

উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে কিভাবে এই ধরনের একজন কর্মকর্তা ক্রয়ের মত সংবেদনশীল পদে চাকুরী করছেন তা খতিয়ে দেখার দাবী করেছেন খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

এদিকে, চাহিদা অনুযায়ী উপকরণ না থাকায় পরিবার পরিকল্পনার সরকারি সেবা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সারা দেশে কনডম, মুখে খাওয়া বড়ি ও কিটের মারাত্মক সংকট চলছে। এই সুযোগে বাজারে বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে নিম্নবিত্ত দম্পতিদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, কেনাকাটায় স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং পরিকল্পনার অভাবে এই ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটতি এতই বেশি যে, গত ১৫ বছরে অধিদপ্তর এমন সংকটে পড়েনি। এর প্রভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী দম্পতির মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এই উপকরণের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে। এতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

জাকিয়া আক্তারের দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কাওরান বাজারে লাগানো ব্যানার-পোস্টারও এই  প্রতিবেদকের চোখে পড়েছে।

ইতিপূর্বে এই ইউনিটেই কর্মরত থাকাকালীন এই কর্মকর্তা ট্যাব ক্রয়সহ বিভিন্ন ক্রয়ের অনিয়মের সাথে জড়িয়েছেন। এ সংক্রান্ত তদন্তের পর তাকে এই ইউনিট থেকে অডিট ইউনিটে বদলী করা হয়। এই কর্মকর্তা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিটে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত যেতে হয়েছে।

দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঘিরে একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট কিছু দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে শত শত কোটি টাকার কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

চলতি মেয়াদে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সমস্ত সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজদের হটিয়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনবেন এটাই জাতির প্রত্যাশা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা