July 5, 2024, 10:46 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-07-03 10:59:59 BdST

৬ মাসে মুনাফা ছাড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকাঅর্ধবার্ষিকীতে ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ড রূপালী ব্যাংকের


চলতি বছরের অর্ধবার্ষিকীতে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক পিএলসি পরিচালন মুনাফা গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ড করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে ব্যাংকটি।

ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসের হিসাব সমাপনীতে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকারও বেশি। গত বছর একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩২০ কোটি টাকা ২০২২ সালে যা ছিল মাত্র ৬৮ কোটি টাকা।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি এবং ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটি প্রথমবারের মত অবলোপিত ঋণ হিসাব থেকে আদায় করেছে ৪৫ কোটি টাকা ।

ব্যাংকিং খাতে যখন আমানতের সংকট চলছে তখন কিভাবে এত আমানত বাড়ল তা নিয়েই চলছে অন্যান্য ব্যাংকে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সবার মুখেই শোনা যাচ্ছে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ভূয়সী প্রশংসা।

২০২২ সালের ২৮ আগস্ট রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। 

দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তিনি প্রযুক্তি নির্ভর সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধিসহ ব্যাংকের সার্বিক ব্যবসা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে খেলাপী ঋণ হ্রাস, ঋণ ও আমানত বৃদ্ধি, আমানত-ঋণ অনুপাত বৃদ্ধি, লোকসানি শাখা কমিয়ে আনা, বিভিন্ন নতুন ঋণ ও আমানত স্কিম চালু, ব্যাংকের সার্বিক সূচকগুলোর মান উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। এছাড়া গ্রাহকের দোরগোড়ায় ব্যাংকিংসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর সেবা চালু ও পরিধি বৃদ্ধি করেছেন। 

মূলত সুদ ও ট্রেজারি থেকে আয় এবং খেলাপী ও অবলোপিত ঋণের আদায় বাড়ায় ব্যাংকটি অর্ধবার্ষিকীতে এই মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সিএমএসএমই ঋণ বৃদ্ধি, রপ্তানি বাণিজ্যে জোর দেয়া, রেমিটেন্স আহরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করায় ব্যাংকের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকটি অর্থ আদায়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা মনে করছেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে এই সাফল্য এসেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি সরকারি ব্যাংক তাই এর প্রতি গ্রাহকদের যে আস্থা তা সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থারই প্রতিফলন। এই বিপুল পরিমাণ আমানত সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাংকটি সব আর্থিক সূচকে ভালো করবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।  

পূজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোও দ্রুত তালিকাভুক্ত করা উচিত। এতে করে তারাও জবাবদিহিতার আওতায় আসবে এবং রূপালী ব্যাংকের মতো ভালো করার তাগিদ অনুভব করবে। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটি ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। ২০২২ সালে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস)  যেখানে ছিল ৬৮ পয়সা সেখানে ২০২৩ সালে তা ১ টাকা ৩৫ পয়সায় উন্নীত হয়। 

সে হিসেবে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালেও ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সূচকে লক্ষণীয় অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকার তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্যদে অভিজ্ঞ সদস্য মনোনয়ন এবং দক্ষ এমডি নিয়োগ করলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংকের ন্যায় সামনে এগিয়ে যাবে।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ১৯৯০ সালে অফিসার হিসেবে রূপালী ব্যাংকে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে যোগদানের আগে তিনি রূপালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় ক্রেডিট কমিটির প্রধান, আন্তর্জাতিক বিভাগ, প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এর আগে তিনি একই ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে বিভাগীয় কার্যালয় ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে অত্যন্ত সুনাম ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার তার বর্ণাঢ্য ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে সফলতার সাথে শাখা প্রধান ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ, অল্টারনেট ব্যাংকিং বিভাগসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তার হাত ধরেই রূপালী ব্যাংক সর্বপ্রথম ম্যানুয়াল ব্যাংকিং থেকে আধুনিক কম্পিউটারাইজড ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে।

ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তিনি সৃজনশীল কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.কম (ব্যবস্থাপনা) এবং পরবর্তীতে এমবিএ (ফিন্যান্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।

বরেণ্য এই ব্যাংকার ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের উপর দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স, সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন এবং সুদীর্ঘ ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।

খ্যাতিমান এই ব্যাংকার নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা