September 17, 2024, 12:49 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-09-05 11:26:50 BdST

পুনর্বহাল হতে পারেন ক্ষতিগ্রস্ত শহীদুল ইসলামডেল্টা লাইফের সিইও পদে নিয়োগ বিতর্কের অবসান


অবশেষে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান হলো।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ২৫৫তম পর্ষদ সভায় মুখ্য নির্বাহী পদে মো: শহীদুল ইসলামকে নিয়োগের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। ২০২৩ সালের ২রা এপ্রিল প্রয়োজনীয় নথিসহ নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠান ডেল্টা লাইফের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার।

সেসময় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের বৈধতা না থাকার কথা বলে মো. শহিদুল ইসলামকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন দেয়নি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি এই নিয়োগ বাতিল নিয়ে করা রিট পিটিশন মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে মাননীয় বিচারক, হাইকোর্ট ডিভিশন তৎকালীন সিইও পদে সুপারিশকৃত মো. শহিদুল ইসলামের নিয়োগ বহালের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আইডিআরএ'র তৎকালীন পরিচালক মোহা. আব্দুল মজিদ শিক্ষাগত যোগ্যতার  সনদপত্রে ঠিকানা সংক্রান্ত জটিলতাকে কেন্দ্র করে এই নিয়োগ বহালের বিরুদ্ধে নিজের ও আইডিআরএ'র মতামত জানিয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠান।

উক্ত চিঠিতে প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের জমা দেওয়া ব্যাচেলর অব আর্টস ও মাস্টার্স অব আর্টসের সনদপত্র দুটি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যু করা হয়নি মর্মে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দুটি সনদপত্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন আব্দুল মজিদ।

দারুল ইহসান ট্রাস্টের প্যাডে সনদ দুটির বিষয়ে প্রেরিত প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর উল্লেখিত প্রোগ্রামের সনদপত্র দুটি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ি নং-২১, রোড-৯/এ, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা-১২০৯ থেকে ইস্যু করা হয়নি।’

উল্লেখ্য যে, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরির লক্ষ্যেই শহিদুল ইসলাম দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির মিরপুর-১০ এ অবস্থিত ক্যাম্পাস থেকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

সনদ দুটির তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে তিনি সিজিপিএ ৩.৫১ নিয়ে স্নাতক ও ২০১১ সালে সিজিপিএ ৩.৫৪ নিয়ে স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

সনদ সংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে থাকা ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের অনুরোধে 'দি ফিন্যান্স টুডে'র একটি চৌকস টীম গভীর অনুসন্ধান শুরু করে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থান সংকুলান না হওয়ায় মিরপুর-১০ এ আরেকটি ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে পরিচালিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে হঠাৎ করে ছন্দপতন হয়। ২০১৬ সালে আদালতের নির্দেশনার আলোকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

গোয়েন্দা তথ্যের আলোকে জানা যায়, সনদ বাণিজ্য সহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালে আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।

বন্ধ থাকা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্রে উল্লিখিত ঠিকানা ছিল বাড়ি নং-২১ (নতুন), রোড নং- ৯/এ, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা- ১২০৯। এই ঠিকানার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কমিশন অনুমোদিত আর কোনো বৈধ ক্যাম্পাস নেই বলে উল্লেখ করা হয় উক্ত অনুমতিপত্রে।

এদিকে, বন্ধ করার পরও এক বা একাধিক চক্র দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একাধিক স্থানে ক্যাম্পাস ও অফিস খুলে সনদ বাণিজ্যসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসময় সঠিক তথ্য না জানায় অনেক শিক্ষার্থী প্রতারিত হয়। 

বিষয়টি নজরে এলে দারুল ইহসানের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য কার্যালয় বন্ধসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দারুল ইহসানের নানা অনিয়ম তদন্ত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিশন সনদ বাতিলের সুপারিশ করেছিল।

উল্লেখিত ঘটনা পরিক্রমাগুলো যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যাচ্ছে, আলোচিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালে। বন্ধের সময় জারিকৃত সাময়িক অনুমতিপত্রে একমাত্র বৈধ কার্যালয় হিসেবে ধানমন্ডির ক্যাম্পাস উল্লেখ করা হয়।

উক্ত অনুমতিপত্রে ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরুর কয়েক বছর পরই প্রতিষ্ঠিত মিরপুর-১০ এর ক্যাম্পাসকে সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে মিরপুর-১০ এর এই কার্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাসে পরিনত হয়।অথচ এই শাখা প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটিকে সেসময় বৈধ ক্যাম্পাস বলে প্রচার করেছিল। 

উল্লেখ্য যে, মিরপুর-১০ এর ক্যাম্পাস থেকেই ২০১০ সালে স্নাতক ও ২০১১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মো: শহীদুল ইসলাম। আর এই ক্যাম্পাস অবৈধ ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালে।

এ থেকে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সনদ বানিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারনেই অপরিসীম ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন মো. শহিদুল ইসলাম সহ অনেক শিক্ষার্থী।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা সত্বেও এটিকে কাজে লাগিয়েই আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ কোন এক হীন উদ্দেশ্যে বা ইচ্ছাকৃতভাবে শহীদুল ইসলামকে ডেল্টা লাইফের সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন দেয়নি।

হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের মাননীয় বিচারক রিট পিটিশনের শুনানিতে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক পর্যবেক্ষণ ও উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ আমলে নিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত শহীদুল ইসলামের পক্ষে রায় প্রদান করেন।

এই বিষয়ে শহীদুল ইসলাম 'দি ফিন্যান্স টুডে'কে বলেন, "সিইও হিসেবে নিয়োগ পেতে আমারল -৪ কল শর্ত, পেশাগত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও ঈর্ষান্বিত ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগপত্র অনুমোদন না দিয়ে সুদীর্ঘ প্রায় দেড় বৎসর জীবন বীমা শিল্পসহ সামাজিক ও পারিবারিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করাসহ আর্থিকভাবে আমার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এতে করে আমি, আমার পরিবার ও ইংরেজি মাধ্যমে "এ" লেবেল ও "ও" লেবেল পড়ুয়া দুই ছেলে সন্তান নিয়ে নিদারুণ অর্থকষ্ট সহ ভীষণ অনিশ্চিতভাবে দিনযাপন করে আসছি!"

"এমতাবস্থায়, আমি ডেল্টা লাইফের সম্মানিত পরিচালনা পর্ষদ, BIA, BIF, IDRA ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি, সৎ ও আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে ডেল্টা লাইফের সিইও হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গত মার্চ"২৩ এ ইস্যুকৃত অফার লেটার এর তারিখ বা সিইও হিসেবে চুক্তি সম্পাদনের তারিখ ২ এপ্রিল "২৩ থেকে কার্যকর করে অতিদ্রুত আমাকে ডেল্টা লাইফ এর সিইও হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করছি।"

১৯৯১ সালে বীমা পেশায় ক্যারিয়ার শুরু করা শহিদুল ইসলাম সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২২ সালের মে পর্যন্ত বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৯ সালের মে থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগে ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। 

জীবন বীমা শিল্পের প্রথম বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইফ দিয়ে পথচলা শুরু শহিদুল ইসলামের। কোন একসময়ের চৌকস মাঠকর্মী শহিদুল ইসলাম প্রায় সাত বছরের অধিক সময় ধরে বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানি’র সিইও হিসেবে সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে জীবন বীমা শিল্পের উন্নয়নে নিবেদিত হয়ে লক্ষ লক্ষ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেয়ায় সম্মানিত হয়েছেন।

পাশাপাশি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে জীবন বীমার আওতায় এনে হাজার হাজার অসহায় পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রশংশিত হয়েছেন।

তার সাথে সরাসরি বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানিতে সম্পৃক্ত হওয়া এমন প্রায় হাফ ডজনের অধিক সফল উন্নয়ন কর্মকর্তা বর্তমান সময়ে বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানি’র সিইও হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

চার্টার্ড লাইফে সিইও হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে ঐতিহাসিক বাস্তবতা সৃষ্টি করেন শুধু এফএ, ইউএম ও বিএম মাত্র ৩ টি টিয়ারে কোম্পানি পরিচালনায় ব্যাপক সাড়া ফেলেন জীবন বীমা অঙ্গনে। বেস্ট লাইফ এর সিইও হিসেবে যোগদান করেই আরো ভিন্ন ধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এফএ থেকে সকল পদে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য আইডিআরএ’র নির্দেশ অনুযায়ী সর্বাধিক আয়ের সুযোগ, কোম্পানি প্রদত্ত মাসিক-ত্রৈমাসিক ভাতা ও অনলাইনভিত্তিক সকল গ্রাহক-কর্মীসেবা চালু করেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা