নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক
Published:2025-01-09 14:26:40 BdST
আপনার সন্তানকে সংগঠন করতে শেখান
আপনার সন্তান কে সংগঠন করতে শেখান। নরম আর তুলতুলে সন্তানকে আত্নকেন্দ্রিক করে আঁচলে বেধে রাখবেন না। ধনী কিংবা সোসাইটির অজুহাতে তাকে বিকৃত মানসিকতায় ঠেলে দিবেন না।প্রথম নয় প্রয়োজনী হওয়ার শিক্ষা দিন। সামাজিক সংগঠণ করার উৎসাহ দিন।
সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনার সন্তান মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা পাবে। সামাজিক সংগঠনগুলোতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক গুণাবলী তৈরী হয়। নিজের মধ্যে নেতৃত্ব-গুণ তৈরী হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ে।
একজন সামাজিক সংগঠনের কর্মী গান আবৃত্তি কিছু যদি নাও জানে তবুও তিনি একজন সংগঠন না করা মানুষের চেয়ে আলাদা। সামাজিক সংগঠন সবার মতকে শ্রদ্ধা করা, সদস্য হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করা, নিজেকে বিকশিত করা, একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হওয়া সহনশীল হওয়া, ইত্যাদি শেখায়।
একজন মানুষের দক্ষতা, সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা তৈরি, দেশের ও জাতির সামনে নিজেকে তুলে ধরার আত্মবিশ্বাস ও স্মার্টনেসসহ নানাবিধ গুণ বৃদ্ধি করে সামাজিক সংগঠন। এটি তার পরবর্তী পেশাগত জীবনেও অনেক কাজে আসবে।
আত্মবিশ্বাস হল একটি হাইপোথিসিস বা ভবিষ্যদ্বাণী যা সঠিক একটি পথ বেছে নেওয়া কর্ম পদ্ধতি সর্বোত্তম বা সবচেয়ে কার্যকরী এমন একটি অবস্থান।
পরিবার ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তাদের একেবারে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য একটি শিশুর মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার উপযোগী করার পরিবেশ প্রয়োজন। দেখা যায়, যারা সাংগঠনিকভাবে বড় হয়নি তারা অনেক ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ করে ফেলে। সমস্যা সমাধানে যেখানে নেতৃত্ব প্রয়োজন পড়ে সেখানে দেখা যায় যে তারা ব্যর্থ হয়।
পরিবার থেকে যে শিক্ষাটা জরুরি তা হলো, শিশুর চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে একটা সীমারেখা তৈরি করতে হবে। পিতা মাতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে একটি শিশুকে আসলে কতটুকু দেবেন। তার যতটুকু প্রয়োজন, যেটুকু না হলে তার দৈনন্দিন কাজ চলবে না বা তার শিক্ষা কার্ক্রম ব্যাহত হবে কিংবা তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সমস্যা তৈরি হবে বা পুষ্টির অভাব হবে; এ ধরনের কোনো কিছুতে আমি অভাবে রাখতে বলছি না। আমি বলছি যে, তার বিলাসিতার লাগাম টানার কথা।
ধরুন ক্লাস সিক্সের শিশুকে যদি আইফোন কিনে দেন, তাহলে সে যখন ক্লাস ইলেভেনে যাবে তখন তাকে কি দেবেন? তখন কিন্তু সে আরও উচ্চতর সুবিধা না-পাওয়ায় হতাশ হবে। সাধারণত দেখা যায়, ঢাকা শহরে যারা আছে তাদের সফলতার হার কম। তার চেয়ে মফস্বলের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে। কারণ তারা তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে না। এবং তারা অনেক কিছু কাছ থেকে দেখে গা-সওয়া হয়ে যায়। আর মফস্বলের একটা ছেলে এখনও একটি হেলিকপ্টার দেখলে অনেক উল্লসিত হয়। ফলে তার নতুন নতুন সৃষ্টি ও বিস্ময় দেখার আগ্রহ থাকে। আগ্রহ থেকেই তারা প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নেয় এবং জয়ী হয়।
ভালো করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সরকারি-বেসরকারি চাকরির ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে মফস্বল পর্যায়ের মানুষ পৌঁছে যান। সুতরাং আপনার আমার শিশুদের মধ্যে তার অবস্থান অনুযায়ী অবাক হওয়ার উপকরণ অবশিষ্ট রাখতে হবে।
সহমর্মী হওয়ার অনুপ্রেরণা না পাওয়া শিশুরাই একদিন কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। যা প্রমাণ করে আমরা তাদের সঠিক পরিবেশ দিতে পারছি না। জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিশু-কিশোর সংগঠন থাকলে সমাজের এমন চিত্র তৈরি হতো না।
সহনশীল, সহমর্মী, সকল কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে একটি শিশুকে বড় করতে হলে প্রয়োজন শিশু সংগঠন। যেন তারা সেখানে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সকল ধরনের চর্চা করতে পারে। তবেই দেশ পাবে সংগঠিত সুনাগরিক।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.