February 19, 2025, 7:48 am


শাফিন আহমেদ

Published:
2025-02-09 14:45:47 BdST

প্রকাশ্যে ঘুষ আদায় হয় আড়াইহাজার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে


  • দলিল প্রতি ঘুষ দিতে হয় ০.৫% থেকে ১%।
  • অফিস সহকারীর মাধ্যমে কৌশলে টাকা নেন সাব রেজিস্ট্রার।
  • সামান্য ত্রুটি হলেও দিতে হয় ঘুষ।

নারায়ণগঞ্জের সাতটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর, রূপগঞ্জ,  পূর্ব রূপগঞ্জ, ফতুল্লা, বন্দর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। জমির দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, উমেদার ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে। ঘুষ আদায়ের কৌশল হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের রুটিনমাফিক কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন দিয়েও করানো হচ্ছে। এই সুযোগে নকলনবিশ, উমেদার ও বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছে। নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী সাব রেজিস্ট্রাররা তাদের নিজেদের কাজ নকলনবিশ, উমেদার ও পিওনদের দিয়ে করাচ্ছেন। দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিস্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না অনেকেই। অনুসন্ধানে ও সরেজমিন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪-এর অধ্যায়-২৬-এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কাঙ্ক্ষিত নয়, এই কাজটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হতে হবে।

আড়াইহাজার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে ব্যাপক জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে বিভিন্ন কৌশলে অফিস খরচের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অফিস সহকারী, উমেদার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। আর এসব কিছুই অবগত সাব-রেজিস্ট্রার। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি, নির্ধারিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, টাকার বিনিময়ে মূল দলিলের নকল কপিতে ভূয়া গ্রহীতার নাম লিখে নকল সরবরাহ করা, মূল দলিলে গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অপকর্মের মহোৎসব চলছে আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। দুর্নীতির মহোৎসবের লীলাখেলায় সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন ২০১৭ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে গত ০৮/০১/২০১৭ইং তারিখে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। খুলনা/গোয়ালন্দঘাট, রাজবাড়ী/ ঢাকা দক্ষিণ, সিলেট/ দক্ষিণ সুরমায় কর্মস্থলের সুযোগ হলে পরবর্তীতে বদলী আদেশে আড়াইহাজারে ০৪-০৭-২০২৪ ইং যোগদান করেই নানা অপকর্ম করে দুহাতে কামিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ। আড়াইহাজারে যোগদান করেই সাব-রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন শুরু করেন নানা ফন্দি ফিকিরের দুর্নীতি। দলিল মূল্যের ১% থেকে ০.৫% অগ্রিম গ্রহণ ব্যতিত দলিল করেন না তিনি। সেরেস্তা ফি’র নামেও আদায় করেন দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা। হেবার ঘোষনা দলিলে প্রতি শতাংশে ৩শ টাকা, বিনিময় দলিলে প্রতি শতাংশে ৫শ টাকা, হাইভেল্যুর নামে আদায় করেন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন অফিসে কাজ শেষে উমেদার হাফিজ এ সাব-রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেনের সব ঘুষ-দুর্নীতির টাকা আদায় করে থাকেন। শুধু তাই নয়, উমেদার কর্তৃক সেবাগ্রাহককে রেজিস্ট্রিবাবদ বাধ্যতামূলক  অতিরিক্ত ০.৫% অফিস খরচের কথপোকথন ও একাধিক চাঞ্চল্যকর ভিডিও তথ্য প্রমান অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও অনিয়ম-দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিণত হওয়া আড়াইহাজার রেজিস্ট্রি অফিসে পতিত সরকারের সিন্ডিকেট, দালালদের রোষানলে ও বিকল্প কৌশলে প্রতিটি রেজিস্ট্রি থেকে অফিস খরচের নামে মৌজা রাউন্ড ফিগারের উপর ভিত্তি করে ০.৫% থেকে ১% অতিরিক্ত খরচ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে, অবৈধ লেনদেনগুলো হয়ে থাকে নিয়োগবহির্ভূত উমেদারদের মাধ্যমে। এছাড়া দাতাগ্রহিতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য বেশি হলেও তা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের সহায়তায় কম দেখানো হয়। যে কারণে প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন নবনির্বাচিত যুগ্ম সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, এসব ভুয়া ও বানোয়াট।

দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক টিমের তদন্তে উঠে আসা এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন সভাপতি এবং সদ্য চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার সদ্য সাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান বলেন,  আপনারা যা পাবেন তা লিখে দেন। কোন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

ধারাবাহিক প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে। ইতোমধ্যে দ্য ফিন্যান্স টুডের হাতে আড়াইহাজার সহ জেলার সকল অফিসের সচিত্র ধারন করা হয়েছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.