নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক
Published:2025-04-11 17:33:06 BdST
ধর্ম নয় সমস্যা রাজনৈতিক অদূরদর্শিতায়
তথ্য উপাত্ত থেকে যেটুকু জানা যায় ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল - পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। শুরুর দিকে এই আয়োজনের নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রায় বদলে যায়।
ঐ সময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সে সময় ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির বিনাশ’ শোভাযাত্রার মূলভাব হিসেবে গ্রহণের মধ্যেই, সরকারিভাবে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী পালনের উদ্যোগও নেওয়া হয়।
আনন্দ শোভাযাত্রা বনাম মঙ্গল শোভাযাত্রা
নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা'। সেই নামের প্রয়োজনীয়তা কি এখনো রয়েছে? দেশে কি এখনো স্বৈরশাসক বিদ্যমান? সারা পৃথিবীতে পরিচয় পাওয়া একটি উৎসবের নাম রাতারাতি পাল্টিয়ে নতুন নাম দেয়ার দরকার কতটুকু বা কারা এতে লাভবান হতে পারে? পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি আসতে পারে। ইতিমধ্যে ধর্মীয় ট্যাগ দেয়া শুরু হয়ে গেছে।
যেটা হয়নি সেটা হলো এই বলা যে আমাদের সংস্কৃতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বলয়ে নিজস্ব ভাবধারায় তাদের সেবাদাসে পরিনত হয়েছে। পাকিস্তান সময়ে যেমন রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো তেমনি একটি ফ্যাসিবাদী সরকার দীর্ঘদিন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিকে তার বাবার সম্পত্তি মনে করে ব্যবহার করে আসছিলো।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেউ যদি মনে করে যে অকারনে আনন্দ শোভাযাত্রার নামকরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছিলো সেই সংকট আজো কাটেনি। তাহলে তাদের কাছে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামটাই যথাযথ। আবার কেউ যদি মনে করে পৈত্রিক সম্পক্তির রাহু থেকে দেশ সংকটমুক্ত হয়েছে তা হলে তারা সংস্কৃতির বাংলার ঐতিহ্যকে আবার তার আগের মর্যাদার নিয়ে যেতে পারে। এর মাঝখানে অনেকেই ধর্মীয় ট্যাগ যুক্ত করবে কেউ রাজনীতির ট্যাগ যুক্ত করবে কেউ সংস্কৃতির ট্যাগ যুক্ত করবে। মোদ্দাকথা আমাদের সংস্কৃতিকে যে যার সুবিধামত জায়গায় নিয়ে যাবে। আর আমাদের মতো আমজনতার অবস্থা হবে পাটা আর পুতের মাঝখানের অবস্থা।
যে কৃষক যে শ্রমিক যে ব্যবসায়ী সুবিধাবঞ্চিত তাদের কথা কেউ ভাববে না।
বাঙ্গালী হওয়া এখন খুব সহজ
যে সকল বাঙালি নামধারী ব্যক্তি বাঙালির শাশ্বত সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করে না এবং পালনও করে না; তারাও বাঙালি এখন। বাংলা বলতে পারলে সহজে বাংলাভাষী হওয়া যায়, কিন্তু বাঙালি হওয়া যায়না।
বাঙালি হতে হলে আবহমান সংস্কৃতির প্রতি মমত্ববোধ এবং ঐকান্তিক টান অনুভব করতে হয়। বাংলাদেশকে ভালোবাসতে হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা অথবা আনন্দ শোভাযাত্রা বিষয়টা ধর্মীয় নয়; সমস্যা আমাদের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতায়।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.