April 16, 2025, 6:11 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-04-15 21:59:15 BdST

কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দললাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা


রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এরা কেবল আইন-শৃঙ্খলার অবনতিই ঘটাচ্ছে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

কিশোর গ্যাংয়ের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ সমাজের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সমাজে স্থিতিশীলতা ও শান্তি নষ্ট করছে।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, নগরে কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসবের কারণে শুধু আতঙ্ক নয় লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া সরকার ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানেন এদের নেতৃত্বে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। যে কারণে সমাজ থেকে ইচ্ছে করলেও কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সমাজ বিশ্লেষকদের দাবি- ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া হয়ে উঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আরও ভয়ংকর রুপ নিচ্ছে। হঠাৎ করে সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানামুখী অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। তারা অনেক সময় ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করছে।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন থেকেই সতর্ক না হলে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে উঠবে। অনেকেই বলছেন, কিশোর গ্যাং এখন দেশের অপরাধের গলার কাঁটা। এই ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সামাজিকভাবে সতর্ক ও এগিয়ে আসতে হবে। তবে অতীতে বারবার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক বাধা এসেছে। এবারও সেই একই বাধা মোকাবিলা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সাধারণত ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি, মিরপুর, উত্তরা এবং মোহাম্মদপুরের মতো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অপরাধীরা প্রকাশ্যেই সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। একদিকে যেখানে সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে চায়, সেখানে অপরাধীরা দিনের পর দিন তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ক্রমশ বিঘ্নিত হচ্ছে।এছাড়া, মোহাম্মদপুর এলাকায়ও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোররা এখানে চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা এবং সহিংসতা চালাচ্ছে। এটি শুধু এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে না, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ যখন এসব অপরাধের শিকার হয়, তখন তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এবং জনমনে বিভ্রান্তি

কিশোর গ্যাংয়ের এই কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধী কিশোরদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতেও অপরাধীরা নির্দ্বিধায় তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

সচেতন মহুল মনে করেন, মিরপুর, উত্তরা এবং মোহাম্মদপুরের মতো এলাকাগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, মানুষের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আস্থা কমে যায়। এক্ষেত্রে, জনগণ যদি মনে করে যে পুলিশ অপরাধীদের প্রতিরোধে অক্ষম, তখন তারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে পারে। যেমনটি উত্তরা হামলার ঘটনায় দেখা গেছে, এলাকার বাসিন্দারা অপরাধী কিশোরদের ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল। এটি অবশ্যই এক ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ।

কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ

সচেতন মহলের দাবি- ‘কিশোর গ্যাংয়ের এই উত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পারিবারিক অবহেলা অন্যতম একটি বড় কারণ। অনেক কিশোর পরিবারের সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ার ফলে অপরাধী গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, সঠিক বিনোদনমূলক ও সৃজনশীল কার্যক্রমের অভাব কিশোরদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। তৃতীয়ত, সামাজিক অস্থিরতা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। তারা সমাজে ক্ষমতা, অর্থ এবং সম্মান পাওয়ার জন্য ভুল পথ বেছে নিচ্ছে।

তাছাড়া, কিশোরদের মধ্যে অপরাধের প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। অনেক কিশোর এসব মিডিয়ায় অপরাধী গ্যাং সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তাদের অনুসরণ করছে। এই বিষয়গুলো কিশোরদের মনে অপরাধী মনোভাব গড়ে তোলে এবং তারা অপরাধকে একটি স্টাইল বা ‘‘কুল’’ হিসেবে মনে করতে শুরু করে।

কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপ বন্ধ করতে প্রয়োজন একাধিক কার্যকর পদক্ষেপ। প্রথমত, তাদের রাজনৈতিক ফায়দা থেকে দূরে রাখা এবং কিশোরদের জন্য বিকল্প কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। সরকারের উচিত কিশোরদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সৃজনশীল কার্যক্রমের আয়োজন করা, যাতে তারা অপরাধের দিকে না ঝুঁকে।

দ্বিতীয়ত, সামাজিকভাবে সবাইকে সর্তক ও সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো শক্তিশালী এবং কার্যকরী হতে হবে। পুলিশকে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করতে হবে- এবং অপরাধী গ্যাংগুলোর কার্যকলাপের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

তৃতীয়ত, পরিবার এবং সমাজের দায়িত্বও বাড়াতে হবে। তাছাড়া বাবা-মা এবং অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি আরও নজরদারি এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, যাতে তারা অপরাধের পথে না চলে। কিশোরদের সঠিক মানসিক সহায়তা প্রদান এবং কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

কিশোর গ্যাংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সমাজের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি উত্তরা এবং মোহাম্মদপুরের মতো এলাকায় ঘটেছে কিছু উদ্বেগজনক ঘটনা, যা কিশোর গ্যাংয়ের অস্থিতিশীল কার্যকলাপের প্রমাণ।

'এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। কিশোরদের জন্য বিকল্প সুযোগ তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। কেবল তখনই আমরা একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো' বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন  কর্মকর্তা।

সময় বদলালেও বদলায়নি ক্রমে আতঙ্ক হয়ে ওঠা ‘কিশোর গ্যাং, সারাদেশেই তাণ্ডব চালাচ্ছে

কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করা একটি বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য মতে, সময় বদলালেও বদলায়নি ক্রমে আতঙ্ক হয়ে ওঠা ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যরা। ৫ আগস্টের পর কেউ দল বদলেছে, কেউ বদলেছে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। কেউ আবার পুরোনোকে সরিয়ে আবির্ভূত হয়েছে নতুন রূপে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তথ্য বলছে, সম্প্রতি এই গ্যাংয়ের সদস্য আরও বেড়েছে। সারাদেশেই তাণ্ডব চালাচ্ছে তারা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও ঢাকা সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লায় কিশোর গ্যাং এর উৎপাত অনেক গুণ বেড়েছে বলে জানা যায়। এতে এলাকাজুড়ে বেড়েছে দখল, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ও মারামারির মতো জঘন্য ঘটনা। আর এসবের পিছনে রয়েছে কিশোর অপরাধীরা।

সূত্র জানায়, এলাকাভিত্তিক কথিত রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা নিচ্ছে। কথিত নেতাদের শেল্টারে বেপরোয়া এই কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নাজেহাল হচ্ছে এলাকার ব্যবসায়ী সমাজ ও সাধারণ জনগণ।

উত্তরা, মোহাম্মাদপুর, ও মিরপুরে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে কিশোর গ্যাং

উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর ও ওয়ার্ড, পাড়া মহল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় কিশোর গ্যাং এর উৎপাত দ্বিগুন। এলাকাজুড়ে বেড়েছে দখল, চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাই ও মারামারির মতো জঘন্য ঘটনা। দিনে দুপুরে বাসাবাড়িতে চুরি, ছিনতাই ছাড়াও এই চক্রটি প্রায়ই তুরাগ নয়ানগর, দলিপাড়া, বাউনিয়া, কামারপাড়া, দক্ষিণখান, ট্রান্সমিটার, মোল্লাবাড়ী, হলান, আজমপুর, আশকোনা, কাওলা, খিলক্ষেত নিকুঞ্জ, উত্তরখান মাদার বাড়ি, মাজারপাড়া, বড়বাগ, চাঁনপাড়া, তেরমুখ, উত্তরখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাড়া মহল্লার বাসাবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের মূল্যবান বৈদ্যুতিক তার রাতের আধারে কেঁটে নিয়ে যায়।

জানা যায়, কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িত রয়েছে এলাকার বখাটে যুবক, ছিঁচকে চোর, ছিনতাইকারী ও বিপদগামী কিছু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। প্রায় সময়ই নির্মাণাধীন ভবনের মূল্যবান রড, সিমেন্ট চুরির ঘটনায় এলাকাবাসী চোরকে ধরে থানা পুলিশকে জানালেও চোরের বয়স কম হওয়ার কারণে থানা পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানামুখী অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। নিজেদের হিরোইজম জাহির করতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবার এমনকি খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে এসব কিশোর-তরুণ। এতে আতঙ্কিত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা। আওয়ামী লীগের পতন হলেও দল পাল্টে এখনো অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। অতীতের মতো এখনো রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা।

মোহাম্মাদপুর, মিরপুর ও উত্তরার একাধিক পথচারীরা জানান, কিশোর গ্রুপের সদস্যদের জ্বালায় রাতের বেলায় এসব এলাকায় বউ বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে ভয় হয়। তারা এতোটাই ভয়ংকর যে সামান্য বিষয়ে গায়ে পরে মানুষকে রাস্তায় অপমান, নাজেহাল ছাড়াও খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। তবে পুলিশের কাছে শুধু কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের আলাদা কোনো তথ্য নেই। সদস্য বাড়া ও তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বলছে কিশোর গ্যাং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, মিরপুর, মোহাম্মাদপুর ও উত্তরা পশ্চিম থানার আশপাশে কিশোর গ্যাং দেখা গেলেও অদৃশ্য কারণে থানা পুলিশ তাদের আটক করে না। বিভিন্ন সন্ত্রাসী অপরাধ মূলক কাজ কর্মে জড়িত থেকে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও বর্তমানে তারা নতুন রাজনৈতিক দলের সাথে আঁতাত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা জসিমউদ্দিন এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়েছে পথচারী নজরুল। ছিনতাই করতে বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা।

আব্দুল্লাহপুর এলাকায় মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা গার্মেন্টস শ্রমিক কণা নামের এক নারীর কানের দুল ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য 

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। আগের চেয়ে তাদের দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্রও রয়েছে।

জানতে চাইলে দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ তাইফুর রহমান বলেন, এই মাসে আমরা যতজন আসামি গ্রেপ্তার করেছি তার মধ্যে কয়েকজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিল বেশি। এ সকল কিশোররা মূলত ছিনতাই এবং মারামারিতে বেশি জড়িত।

উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোঃ মহিদুল ইসলাম (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেন, আমরা এই পর্যন্ত শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। উত্তরা এলাকায় যেকোনো অপরাধ হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, গ্রেপ্তার করছি। গ্যাং কালচারের তথ্য পেলে আমাদের অভিযান চলমান। পাশাপাশি সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে।

কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে এর আগেও র‌্যাবের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। পটপরিবর্তনের পর থেকে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপ কালচার আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে র‍্যাব কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ জাকিউল করিম।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র মতে, শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের সদস্য আরও বেড়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা গ্রামীণ জনপদেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাদক, বাড়তি টাকার লোভ, আইনকে তোয়াক্কা না করে নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা, বেকারত্ব, অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতাসহ আরও বেশ কয়েকটি কারণে তারা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর বলেছেন, বর্তমানে সামাজিক অপরাধের মূলে রয়েছে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের সদস্যরা। এটি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তৎপর।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সম্প্রতি কিশোর অপরাধের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এসব বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পুলিশ বাহিনীর একার পক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা অনুযায়ী অভিযান চালাতে সারাদেশের পুলিশের সব ইউনিট-প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এই ব্যাপারে কঠিনতম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, জুলাই-আগস্টে সরকারের পতনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তেমন মাঠে না থাকায় এটি কয়েক গুণ বেড়েছে।

কিশোর অপরাধ দমনে তাদের সঠিক পথে ফেরাতে কাজ করতে হবে পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সব জায়গা থেকে। যারা নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের ব্যবহার করে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা এসব কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ করবে, তাদেরও দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। এলাকার রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

সামাজিকভাবে সবাই মিলে একটি গাইডলাইন তৈরি করলে এটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে নতুন সরকারের এই সময়ে কিশোর অপরাধ দমনে রাজনৈতিক কিছু বাধা নতুনরূপে তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.