বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-05-04 11:36:39 BdST
নেপথ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর মোরশেদ আলমশরীয়াহর আড়ালে ন্যাশনাল লাইফের শতকোটি টাকা লুট
গ্রাহকের আমানতের টাকা ইচ্ছেমতো হরিলুট করেন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। আওয়ামী টিকিটে এমপি হয়ে পেয়ে যান হরিলুটের ব্ল্যাঙ্ক চেক। দেড় দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাৎ করেন নানা ছুতোয়। অনেকগুলো ছুতোর একটি হচ্ছে বিনিয়োগের নামে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়।
রাজধানীর বাইরে নিজ এলাকা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, সিলেট, যশোরে কেনেন বহু সম্পত্তি। ২ হাজার টাকা বর্গফুট মূল্যের অফিস স্পেস কেনেন প্রায় ১২ হাজার টাকায়। এভাবে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের নামে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকা। আর এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা। তাদের এই আত্মসাতে যাতে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেই পথ নিরঙ্কুশ করতে প্রতিবাদী পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডারদের রাখা হয় বোর্ডের বাইরে। তবে সম্পদ ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের অকাট্য প্রমাণ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত নথির পাতায় পাতায়।
এনএলআইসিকে দীর্ঘদিন করায়ত্তে রাখা মোরশেদ আলম চক্রের বহুমুখী অর্থ লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসে প্রতিবেদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে।
এতে দেখা যায়, গ্রাহকের অর্থ (পাবলিক মানি) আত্মসাতের বৃহৎ খাত ছিলো সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়। কোনো ধরনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এই চক্র প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কিনেছে জমি, বাড়ি ও ফ্লোর। কখনো কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করেছেন পানির দরে। কখনো কোম্পানির নামে সম্পত্তি কিনেছে অগ্নি-মূল্যে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে মোরশেদ আলমের অন্তত: ২১টি সম্পত্তি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র মতে, এনএলআইসি ২০২১ সালে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার মোট সম্পদ রয়েছে-মর্মে দাবি করে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত দেখায় ৪৮৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ ৩২ দশমিক ৫ কোটি টাকা। অন্যান্য প্রকারের সম্পদে বিনিয়োগ ১২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ দেখায় ১৪শ’ ৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
কথিত এসব ‘বিনিয়োগ’র নামে কীভাবে লুটপাট করা হয়েছে তার কিছু নমুনা দেয়া প্রকাশ করা হলো-
পান্থপথে অবস্থিত ন্যাশনাল লাইফের মালিকানাধীন রাজধানীর ৪৪/২/এ, পশ্চিম পান্থপথ, উত্তর ধানমন্ডিতে অবস্থিত সাড়ে ২৮.৪৩৫ কাঠার বিশাল প্লট মোরশেদ গং বিক্রি করেন পানির দামে। ‘এ.বি. গ্রুপ’ মালিকানাধীন ‘এম.এ.এইচ. স্পিনিং মিলস লি:-এর কাছে সম্পত্তিটি বিক্রি করা হয়। সম্পত্তিটির মূল্য আড়াই থেকে ৩ শ’ কোটি টাকা। কিন্তু পাতানো টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পত্তিটি ‘বিক্রি’ দেখানো হয় মাত্র ৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কাগজপত্রে দেখানো এই ‘মূল্য’ জায়েজীকরণে সহযোগিতা করে ‘পপুলার রিয়েল সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার্স’ নামক মোরশেদের অনুগত সার্ভে প্রতিষ্ঠান। কাগজপত্রে এক মূল্য দেখালেও বাকি টাকা মোরশেদ আলম চক্র হাতিয়ে নেন আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংসে। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি ন্যাশনাল লাইফের নামে সম্পত্তিটি কিনে (দলিল নং-১৯৯) মোরশেদ আলম চক্র। এনএলআইসি’র তৎকালীন জামাল মোহাম্মদ আবু নাসের (বর্তমানে মৃত) মোরশেদ আলমকে এখান থেকে অর্থ লোপাটের তরিকা শিখিয়ে দেন।
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল পদে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, রাজধানীর পান্থপথের এই সম্পত্তি ক্রয় এবং বিক্রয়ের উভয়ক্ষেত্রে মোরশেদ আলম চক্র রেকর্ডপত্রের বাইরে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত: ১শ’ ২০ কোটি টাকা।
জেলা-ঢাকা, থানা- তেজগাঁও হালে কলাবাগান। মৌজা-রাজাবাজার। জেএল নম্বর-সিএস-২৬২,এস.এ.-২৬২, আর-এস-৩,মহানগর জরিপ-৩, খতিয়ান নং-সিএস-৪, এস.এস-১৯৬ ও ১৯৭,আর.এস. ২০২ ও ২২৫, নামজারি-১৫৯১,মহানগর জরিপ-৫০৪,দাগ নং-সি.এস.-১৫৮,এস.এ-২৯৮/৩০২,২৯৮/৩০৩,আর.এস.-১২০৭, ১২০৪,১২০৯ ও নামজারি-৩৫৪৬ দামে শূন্য দশমিক ৪৭ একর বা ৪৭ শতাংশ।
কোম্পানি সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াহাব মিঞা স্বাক্ষরিত নথি অনুযায়ী, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ৫৪, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত এন.এল.আই. টাওয়ার-১। ২১ কাঠা জমির ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এটি এনএলআইসি’র প্রধান কার্যালয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর এই প্লটটি কেনেন ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৭ টাকায়। ২০১৯ সালে এটির ‘বাজার মূল্য’ দেখানো হয় ৩শ’ ৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০০১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বরিশালে কেনা হয় ১০ শতক জমি। এটি কেনা হয় ২০ লাখ ১৭ হাজার ৯৯৬ টাকায়। ২০১৯ সালে ‘বাজার মূল্য’ দেখানো হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ জমির ওপর কোনো স্থাপনা রয়েছে কিনা নথিতে উল্লেখ নেই। এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মোরশেদ আলম চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
একই বছর ১৭অক্টোবর এবং ২০০২ সালের ২০ নভেম্বর খুলনায় কেনা হয় ১২ দশমিক ৬ শতকের প্লট। এটিতে রয়েছে ১০ তলা ভবন (এনএলআই টাওয়ার-৩) ভবন। এই সম্পত্তির ক্রয় মূল্য দেখানো হয় ১৭ কোটি ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৮ টাকা। ১৯১৯ সালে এই সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয় মাত্র ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এই ভবনটি এনএলআইসি’র খুলনা এরিয়া অফিস অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কেনা হয় অন্তত: ১০টি সম্পত্তি। এর মধ্যে কুমিল্লার চান্দিনায় ১১.৫০ শতক, রাজশাহীতে ১২.৭৬ শতক, চাঁদপুর হাজীগঞ্জে ২২ শতক, লাকসাম ৮.৫০ শতক,বগুড়ায় ২২ শতক, কুমিল্লা সদরে ২১.৫০ শতক, ফেনীতে ১৪ শতক, ময়মনসিংহে ৬.১০ শতক, রংপুর ১৬.৫০ শতক,ঢাকার পান্থপথে ৪৭ শতক। এর মধ্যে ফেনীতে ১৪ শতক জমির ওপর ১০ তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। ‘এন.এল.আই. টাওয়ার-২’ ভবন নামে পরিচিত এ ভবনে ফেনী এরিয়া অফিস অবস্থিত। ২০০৪ সালের ৯ আগস্ট ১৫ কোটি ৮২ লাখ, ৮২ হাজার টাকায় কেনা হয় এই সম্পত্তি। ২০১৯ সালে এটির ‘বাজার মূল্য’ দেখানো হয় মাত্র ১৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
সিলেটের জিন্দাবাজারে অবস্থিত ‘গ্যালারিয়া শপিং কমপ্লেক্স’ এর ৫ম তলায় কেনা হয় ৮ হাজার বর্গ ফুটের অফিস স্পেস। ২০১১ সালের ১৫ জুন এই সম্পত্তি কেনা হয় ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। ২০১৯ সালে এটির ‘বাজার মূল্য’ দেখানো হয় মাত্র ৫ কোটি ২০ লাখ। হবিগঞ্জ খাজা গার্ডেন সিটি প্রা: লি:’ ভবনের ৫তলায় কেনায় হয় ৮ হাজার ১শ’ বর্গফুটের অফিস স্পেস। মূল্য পড়ে ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বেশি। ২০১৯ সালে এটির ‘বাজারমূল্য’ ধরা হয় ২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই স্পেসটি ব্যবহৃত হচ্ছে ‘হবিগঞ্জ জোনাল অফিস’ হিসেবে।
লক্ষ্মীপুর, রায়পুর বাজারের ‘গাজী কমপ্লেক্স’ এর ৪র্থ তলায় কেনা হয় ২৪শ’ বর্গফুটের অফিস স্পেস। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই এই ফ্লোর ‘ক্রয়’ দেখানো হয় ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে এটির ‘বাজারমূল্য’ দেখানো হয় মাত্র ৯৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই ফ্লোরটি ন্যাশনাল লাইফের ‘লক্ষ্মীপুর মডেল অফিস’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১২ মে যশোরে কেনা হয় ৭ শতক জমি। মূল্য ধরা হয় ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরে এটির ওপর পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে এটির ‘বাজার দর’ দেখানো হয় ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এটির নাম দেয়া হয়েছে ‘এনএলআই টাওয়ার-৪। যশোর অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই ভবন।
২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সনালের ২৯ সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে গাজীপুর ভীমবাজার এলাকায় কেনা হয় ১৯.৩৩ বিঘা জমি। মূল্য ধরা হয় ২৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৭ হাজার ২০৮ টাকা। কেনার ৬ বছর পর ২০১৯ সালে এটির ‘বাজার মূল্য’ ধরা হয় মাত্র ২৭ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট টাঙ্গাইল বটতলা এলাকায় ‘ লেবু চৌধুরী প্রিমিও প্লাজা’র ৩য় তলা কেনা হয় সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুট অফিস স্পেস। মূল্য দেখানো হয় ১ কোটি ৮৯ লাখ ৯১ হাজার ৮৪৭ টাকা। ২০১৯ সালে ‘বাজার মূল্য’ ধরা হয় ২ কোটি ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এটি ‘টাঙ্গাইল মডেল অফিস’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি নোয়াখালি চৌমুহনীতে অবস্থিত মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন ‘বেঙ্গল কনসেপ্ট অ্যান্ড হোল্ডিংস লি:’ কেনা হয় ৬ হাজার বর্গফুট অফিস স্পেস। মূল্য পরিশোধ করা হয় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে এটির ‘বাজার দর’ ধরা হয় ৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। স্পেসটি ‘নোয়াখালী এরিয়া অফিস’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন ভবনে কেনা স্পেসগুলোতে পরিশোধ করা হয়েছে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্য। ফলে এসবের ‘বর্তমান বাজার দর’ ক্রয় মূল্যের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি। এছাড়া অন্যান্য সম্পত্তিও ওই সময়কার বাজারমূল্যের চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম বেশি দামে কেনা হয়েছে। ফলে কেনার এতো বছর পরও (২০১৯ সালে) ‘বাজার দর’ তুলনামূলকভাবে বাড়েনি বললেই চলে। মূলত: এসব ‘ক্রয়’র আড়ালে মোরশেদচক্র এনএলআইসি থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
অর্থলোপাটে মোরশেদ আলম সিন্ডিকেট কতটা বেপরোয়া তার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে ২০১৯ সালে ন্যাশনাল লাইফের নামে নোয়াখালীর চৌমুহনিতে নিজ মালিকানাধীন ভবনে স্পেস ক্রয়। ‘রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট’র আওতায় এখানে মোরশেদ আলমের নিজ মালিকানাধীন ভবন ‘মোরশেদ আলম কমপ্লেক্স’র (১৫ তলা ভবন) চতুর্থ তলায় (থার্ড ফ্লোর) কেনেন ৪ হাজার ৫শ’ ৩৪ স্কয়ার ফিট অফিস স্পেস। এখানে প্রতি বর্গফুট স্পেসের মূল্য ধরা হয় ১১ হাজার ৮শ’ টাকা। অথচ বিদ্যমান স্থানীয় মূল্যে এই স্পেসের প্রতি বর্গফুট মূল্য বড়জোর ২ হাজার টাকা। মোরশেদ আলম দুই হাজার টাকা বর্গফুটের স্পেস কেনেন ১১ হাজার ৮শ’ টাকা করে। প্রতি বর্গফুটে তিনি ৯ হাজার ৮শ’ টাকাই আত্মসাৎ করেন। গ্রাহকের আমানতের টাকা এভাবেই লুন্ঠন করেন মোরশেদ আলমের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ। আর স্পেসের স্বনির্ধারিত অতিমূল্যকে ‘জায়েজ’ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে বহুল বিতর্কিত ‘অ্যাস্থেটিক অ্যান্ড সাসটেইনিং ডি’ এবং ‘অ্যানকন লিমিটেড’ নামক দুই সার্ভে প্রতিষ্ঠান।
চৌমুহনিতে অবস্থিত ‘মোরশেদ আলম কমপ্লেক্স’র মালিক মোরশেদ আলম। বাহারুল আলমের মালিকানাধীন জমির ওপর ডেভলপার হিসেবে মোরশেদ আলম ওই কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন। বাহারুল আলম সম্পর্কে মোরশেদ আলমের ভাই। ৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৭০ টাকার এই ‘ক্রয়’ দুর্নীতিতে মোরশেদ আলমকে সর্বান্তঃকরণে সহযোগিতা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআর)র তৎকালীন কর্মকর্তারা।
দুর্নীতির ‘শরীয়াহ কাভারেজ’
মোরশেদ আলমচক্র তার অবৈধ কার্যক্রমকে শুধু বৈধতাই দেননি। সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ কার্যক্রমকে ‘পূণ্যের কাজ’ হিসেবে ‘ইসলামিক লেবাস’ দিতে তৈরি করে নিয়েছিলেন একটি ‘শরীয়াহ কাউন্সিল’। প্রতারণামূলক কথিত এই ‘কাউন্সিলেরও হর্তাকর্তা হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান (বর্তমানে ফৌজদারি মামলায় কারাগারে) মোরশেদ আলম নিজেই।
নামকাওয়াস্তে কাউন্সিলের ‘চেয়ারম্যান’ করে রাখা হয় সোবহানবাগ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহ ওয়ালীউল্লাহকে। ‘সদস্য’ রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্ণর ড. মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ কাফিলুদ্দীন সরকার ছালেহী, অধ্যাপক ড. শমশের আলী, মোরশেদ আলম স্বয়ং, মোরশেদ আলমের অনুগত পরিচালক এসএম শামসুল আরেফীন এবং মিসেস ফারজানা রহমান।
অনুগত, স্বজন ও কয়েকজন খয়ের খা দিয়ে পুরো কোম্পানিটিকে কব্জায় রাখেন মোরশেদ আলম। যার মধ্যে টানা ১৩ বছর মোরশেদ আলম একাই ছিলেন ‘চেয়ারম্যান’। ভাইস চেয়ারম্যান করে রাখেন তাসমিয়া আম্বারীনকে। পরিচালক হিসেবে রাখেন যথাক্রমে: ফারজানা রহমান, লতিফা রানা, মো: শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, এয়ারকমোডর (অব.) মো: আবু বকর (এফসিএ), কেআই হোসেন, এস.এম.শামসুল আরেফীন, মোহাম্মদ হারুন পাটোয়ারি, স্বতন্ত্র পরিচালক দাস দেব প্রসাদ ও জাকির আহমেদ খানকে। তাদের নিয়েই মোরশেদ আলম ‘সভা’ দেখাতেন।
কথিত সেই সভায় জায়েজ করে নিতেন নিজের সব দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। যেসব পরিচালক তার কার্যক্রমের সমালোচনা করবেন-মর্মে তার কাছে মনে হতো তাদের নানা ছুতোয় বৈঠকের বাইরে রাখা হতো। এছাড়া ৭-৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকা সত্ত্বেও পরিচালক তাহেরা আক্তারকে বোর্ডেই রাখা হয়নি। এই কারণে তিনি মোরশেদ আলমকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠান। কিন্তু কোম্পানির বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনা করে এই উদ্যোক্তা পরিচালক অদ্যাবধি মামলা করেননি।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.