সামিউর রহমান লিপু
Published:2025-05-30 21:26:43 BdST
পর্যটন বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াথাইল্যান্ড চালু করতে যাচ্ছে “ছয় দেশ, এক গন্তব্য” ক্যাম্পেইন
থাইল্যান্ড “ছয় দেশ, এক গন্তব্য” নামে একটি নতুন পর্যটন ক্যাম্পেইন চালু করতে যাচ্ছে, যার লক্ষ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশকে একত্রিত করে পর্যটকদের জন্য সহজ ও উপভোগ্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তৈরি করা।
থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে এতে যুক্ত হয়েছে, যদিও ষষ্ঠ দেশের নাম এখনো প্রকাশ হয়নি। ধারনা করা হচ্ছে, লাওস অথবা মিয়ানমারের মধ্যে যে কোন একটি দেশ থাইল্যান্ডের এই উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে।
এই ক্যাম্পেইনের আওতায় একজন পর্যটক যদি নির্ধারিত দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া ভ্রমণ করতে চান, তাহলে তাকে পৃথকভাবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। এর পরিবর্তে যে কোন একটি দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
একইসাথে ভিসা জোনের আওতাধীন এক দেশ থেকে অন্য কোনও দেশ পরিদর্শন করার পরে পুনরায় ঐ দেশে ফিরে আসার জন্য পুনঃপ্রবেশের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
থাই সরকার এখনও তাদের নেওয়া এই পরিকল্পনায় আঞ্চলিক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেনি তাই সুনির্দিষ্ট তথ্যসমূহের বিষয়ে এখনই নিশ্চিত হয়নি। দর্শনার্থীরা কীভাবে এই ভিসার জন্য আবেদন করবেন, এটি কতদিনের জন্য বৈধ হবে, এর খরচ কত হবে, এই ভিসার একাধিক সংস্করণ থাকবে কিনা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এখনও স্পষ্ট নয়।
থাইল্যান্ডের এই নতুন আঞ্চলিক ভিসা ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হল পর্যটনকে উৎসাহিত করা। অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যের জন্য পর্যটন ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণের ফলে আরও বেশি পর্যটক আকৃষ্ট হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
যদি পর্যটকরা একাধিক সরকার এবং দূতাবাসের মাধ্যমে একাধিক ভিসার জন্য আবেদন না করেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ ঘুরে দেখতে পারেন, তাহলে তাদের গন্তব্য হিসেবে এই অঞ্চলটিকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
এই ভিসা চালু হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দর্শনার্থীদের আগমনের হার বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের পর্যটন অর্থনীতি উপকৃত হবে এবং অঞ্চলটির উপর আরও বেশি আলোকপাত করবে।
সামগ্রিকভাবে, সময়ের সাথে সাথে আশা করা হচ্ছে যে এই উদ্যোগটি সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে। এই আঞ্চলিক ভিসা প্রোগ্রাম থাইল্যান্ড এবং তার প্রতিবেশীদের মধ্যে উন্নত পরিবহন সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে।
এই প্রকল্পে যেসব সুবিধা থাকবে
এই উদ্যোগের আওতায় পর্যটকেরা ইচ্ছা করলে খুব সহজে নির্দিষ্ট দেশগুলোর একটি থেকে অন্যটিতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আর থাকবে অনেক আকর্ষণীয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ।
জাহাজ ভ্রমণ
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পেনাং, থাইল্যান্ডের ফুকেট এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি—সবকিছু একসঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি বিলাসবহুল জাহাজ ভ্রমণে।
ঐতিহ্য ভ্রমণ
বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি; যেমন পেরানাকান সংস্কৃতি, বৌদ্ধ স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক শহরগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ।
খাদ্য ভ্রমণ
এক দেশ থেকে আরেক দেশে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবার উপভোগের সুযোগ।
নিজে গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ
পর্যটকেরা চাইলে নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন নির্দিষ্ট দেশগুলো।
ঋতুভিত্তিক উৎসব
উৎসবের সময় বিশেষ ভ্রমণ আয়োজন থাকবে, যাতে দেশগুলোর বিশেষ সংস্কৃতি ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যায়।
ভিসা হবে আরও সহজ
এই প্রকল্পের আওতায় এক ধরনের যৌথ ভিসা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে দেশগুলোর। যেন একবার ভিসা নিলে সব অংশগ্রহণকারী দেশে ভ্রমণ করা যায়। এটি হবে ইউরোপের শেনজেন ভিসার মতো। এছাড়া ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টে থাকবে দ্রুত প্রবেশের বিশেষ লেন, যা ভ্রমণ আরও আরামদায়ক করবে।
বিশেষ প্যাকেজ ও সুযোগ
এই প্রকল্পে থাকবে বিশেষ হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্যাকেজ, যেখানে বিশ্বসেরা মানের খাবার ও নামী হোটেলে থাকার সুযোগ থাকবে। পর্যটকেরা একসঙ্গে এসব সুবিধা একটি প্যাকেজেই নিতে পারবেন।
কবে থেকে শুরু
এই ক্যাম্পেইন চলতি বছরের শেষ দিকে চালু হবে। যেসব দেশ প্রস্তুত থাকবে, তারা আগে এই পরিকল্পনায় যুক্ত হবে। পুরো পরিকল্পনার তদারকি ও বাস্তবায়নের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
থাইল্যান্ডের এই ‘ছয় দেশ, এক গন্তব্য’ উদ্যোগটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, বরং অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতি বিনিময় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করবে। এই ক্যাম্পেইন সফল হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘুরে বেড়ানো হবে আরও সহজ, সুন্দর এবং স্মরণীয়।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.