June 19, 2025, 4:53 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-06-19 01:15:57 BdST

মিডিয়ার বাজার কেন মন্দা!


টেলিভিশন-পত্রিকার বাজার কেন মন্দা। এর মূল কারণ গুলোর সংজ্ঞা অনেক। বাজারে এখন প্রায় ৪০টি বেসরকারি টেলিভিশন এবং তিন শতাধিক পত্রিকা রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকা বা টেলিভিশন ছাড়া অধিকাংশই দর্শক বা পাঠক এর কাছে সমাদৃত বা নন্দিত নয়।

টেলিভিশন বা পত্রিকার গুনগত মান হারানোর অনেক গুলো কারণ রয়েছে। টেলিভিশন দর্শকদের অধিকাংশেরই বিদেশি চ্যানেলের দিকে বেশি আগ্রহ। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা দেশীয় চ্যানেল মোটেই দেখেন না। বলা যেতে পারে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়া গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বা সমান তালে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা এখনো হয়নি দেশীয় চ্যানেল গুলোর। এর অন্যতম কারণ আমরা যারা টেলিভিশন বা পত্রিকায় কাজ করি, আমাদের মেধা এবং যোগ্যতা যাই থাকুক এর চেয়ে বেশি যথাযথ পরিকল্পনার অভাব ও নানা অস্থিরতা কাজ করে। এছাড়াও যারা নীতি নির্ধারনী বা পলিসি মেকার তারাই বা কতটা দায়িত্ববান, পেশাদার ও স্বাধীন। তাদের মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সময়োপযোগী বিদ্যা জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং নিরপেক্ষতাও থাকতে হবে সমানে সমান। কিন্তু দেখা গেছে নীতি নির্ধারনী বা পলিসি মেকারদের কারনে অনেক সময় টেলিভিশন বা পত্রিকা আলোর মুখ দেখছে না। আবার যাও হচ্ছে তাতে ইনভেস্টমেন্ট যারা করছেন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না বা আয়োজকরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন সময় অনেক ইনভেস্টর মিডিয়া থেকে হাত গুটিয়ে চলে গেছেন।

আরেকটি বিষয় হলো, সংবাদপত্রে আমরা যারা কাজ করি, আমাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য আর্থিক সক্ষমতা পর্যাপ্ত পরিমাণে যা দরকার তাও নেই। পরিবেশ পরিস্থিতিও অনেক সময় অনুকূলে থাকেনা। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে যারা খবর সংগ্রহ করেন এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যারা কাজ করেন তাদের উদ্দেশ্যে মালিকপক্ষ সহ দায়িত্বশীলরা একেবারেই নীরব এবং উদাসীন থাকেন। ধন্যবাদ বলতে মিডিয়ায় তেমন কিছু নেই। চুন থেকে পান খসলেই চাকরি হারানো থেকে শুরু করে সব বিপদ সামলাতে হয়।

টেলিভিশন বা পত্রিকার একমাত্র আয়ের পথ বিজ্ঞাপন। তবে কোনো না কোনভাবে লাভবান অধিকাংশ টেলিভিশন বা পত্রিকার মালিকরা। তাদের কাছে একেকটি পত্রিকা বা টেলিভিশন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাতিয়ার স্বরূপ। পত্রিকার চেয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে খুব তাড়াতাড়িই লাভ জনক অবস্থায় যাওয়া সম্ভব হয়। যদিও দুটো মিডিয়াই বিজ্ঞাপন নির্ভর। কিন্তু পত্রিকার চেয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন পাওয়াটা একটু সহজ। যে কারণেই অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো লাভজনক অবস্থায় আছে।

আবার কিছু মালিক আছেন তারা নিজেরাই নানাভাবে চাঁদাবাজিও করাচ্ছেন। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোও সামলানোর জন্য যা যা দরকার তাও করছেন। আসলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দর্শকপ্রিয় ও নন্দিত হতে হলে নিউজের পরিমান, কোয়ালিটি এবং মান সম্মত প্রোগ্রাম অতি জরুরি। কিন্তু কতোটুকুই বা এসব টেলিভিশন চ্যানেল দর্শকদের দিতে সক্ষম হচ্ছে! কেন দর্শকরা দেশীয় টেলিভিশন না দেখে বিদেশি চ্যানেলের দিকে আকৃষ্ট!

বলতে গেলে এর সাথে সংশ্লিষ্টরা আগুনে বেগুনে জ্বলে উঠবেন। আসলে কি আমাদের কর্ম পরিকল্পনা এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখি, নাকি তালগাছটাই শুধু আমার আমার বলে চিৎকার করি।

এখন আসি পত্রিকার বিজ্ঞাপন ও সার্কুলার যেখানে বাড়ার কথা সেখানে কমছে কেন? প্রথমত একটি পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপন এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাজারে প্রথম গ্রেডের পত্রিকা থেকে শুরু করে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলোর মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। দেখা গেছে কেউ দশ কপি বের করেই সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে মোটা রেট এর বিজ্ঞাপন ভাগিয়ে নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে লিডিং বা মধ্যম গ্রেডের পত্রিকাগুলো বিজ্ঞাপন পেতেও কর্তা ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হতে হয়। আবার কিছুটা হলেও হার অনুপাতে বিজ্ঞাপন কম পাচ্ছে। হ্যাঁ প্রথম গ্রেডের পত্রিকাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে কিছুটা পুষিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু মধ্যম গ্রেডের পত্রিকাগুলো বিজ্ঞাপন নিয়ে রশি টানা টানি করেও তেমন সুফল পাচ্ছে না। আরো অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। সে সব না হয় নাই বললাম।

টেলিভিশন বা পত্রিকাগুলো বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর উপর অনেকটা নির্ভরশীল। দেখা গেছে সেখানেও দিতে হয় বড় কমিশন। আর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝামেলা এড়াতে বিজ্ঞাপনী এজেন্সিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু সবখানেই ম্যানেজের একটা ব্যাপার থেকেই যায়। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকেও কমিশন দিয়ে বিজ্ঞাপন ভাগিয়ে নিতে হয়।

আরেকটি বড় বিষয় হলো, পত্রিকার চেয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো খুব অনায়াসেই বিজ্ঞাপন ভাগিয়ে নিচ্ছে। খতিয়ে দেখা গেছে, পত্রিকাগুলো পাঠকের হাতে যাবার আগেই টেলিভিশন এর পর্দায় দর্শকরা বড় ঘটনা বা নিউজ অথবা প্রোগ্রাম দেখতে বেশি অভ্যস্ত। এজন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পত্রিকার চেয়ে টেলিভিশন গুলোতে অতি তাড়াতাড়ি বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী। তারা টেলিভিশন এর বোম দেখলেই চমকে উঠেন। আর দুর্বলতা থাকলে তো কোনো কথাই নেই। আবার অনেক পাঠক এখন অনলাইন নির্ভর। বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোথাও এত টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল ও প্রিন্টিং মিডিয়া নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মিডিয়া চালানোর মত সামর্থ্য ছাড়া ব্যক্তিকেও টেলিভিশন বা পত্রিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মিডিয়ার বাজার ক্রমেই মন্দা হচ্ছে। তাই সামনে মিডিয়ার আরো খারাপ অবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

একটি টেলিভিশন বা পত্রিকা কেন পাঠক বা দর্শক হারাচ্ছে তার সামান্য বিষয় তুলে ধরি। প্রথমতঃ মিডিয়া গুলো নিরপেক্ষ হতে হবে। খবরগুলোও সঠিকভাবে উঠে আসতে হবে। যা আসে তাতে পাঠক বা দর্শক এর মনের খোরাক মিটে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জানতে হবে আজ কোন নিউজটি লিড হবে।

একটি টেলিভিশন বা পত্রিকা পাঠক ও দর্শক সমাদৃত এবং জনপ্রিয় করতে অনেক কিছুই প্রয়োজন রয়েছে। প্রথমেই ভালো একজন দক্ষ চৌকস সম্পাদক প্রয়োজন। মোট কথা টীমলিডার ভালো হলে ঐ পত্রিকা খুব সহসাই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত হয়ে ওঠে। সকাল হলেই পাঠক ভিড় জমায় হকারের দোকানে। টেলিভিশন এর ব্যাপারেও একজন দক্ষ পেশাদার হেড অব নিউজ ম্যান প্রয়োজন। তা হলেই গড়ে উঠে একটি পরিপূর্ণ ও পরিপোক্ত সম্ভাবনাময় টেলিভিশন চ্যানেল।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.