বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-06-27 21:00:24 BdST
দেশ ছাড়লেন নিষ্ঠুর ওসি প্রদীপের ভাই সদীপ দাশ
সরকারী ছুটি নিয়ে দেশ ছেড়েছেন পুলিশ পরিদর্শক সদীপ কুমার দাশ। এই সদীপ মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের ভাই।
পুলিশের পোশাকে আওয়ামী লীগ আমলে নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন ওসি প্রদীপ। খুনের মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক ওসি প্রদীপের ভাই সদীপকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা তর্কবিতর্ক চলছিল।
ওসি প্রদীপের অপকর্মের কারণে সদীপকে চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে প্রথমে ফেনী ও পরে লক্ষীপুরে বদলি করা হয় কোন পদায়ন ছাড়া। এরপর সদীপ সবশেষ ফেনী সদরের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
সূত্র বলছে, চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ের সঙ্গে গত ১০ জুন থাইল্যান্ড যান সদীপ। তিনি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়েই থাই এয়ারলাইন্সে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে থাইল্যান্ডে যান। এরপর সাম্প্রদায়িক শঙ্কার কারণে আর দেশে ফিরেননি, গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক সদীপ কুমার দাশ। সূত্র বলছে, ১৭ জুন তিনি সপরিবারে থাইল্যান্ড থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমান।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রায় পুরোটা সময় ঘুরেফিরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেন, দুইভাই প্রদীপ ও সদীপ। পুলিশে প্রচার ছিল, ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশে চাকরি পান এই দুই ভাই।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলন দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন প্রদীপের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন চলাকালে মসজিদের ভেতরে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ রয়েছে প্রদীপের বিরুদ্ধে।
এই কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের কথিত মাদকবিরোধী আভিযানের ‘কিলিং মিশন’ বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফে বদলি করা হয় প্রদীপকে। তবে সদীপ কুমার দাশ তখনো দাপিয়ে বেড়ান চট্টগ্রামে।
কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে এক বছরেরও কম সময়ে মাদক কারবারি ট্যাগ দিয়ে টেকনাফ ও কক্সবাজারের অন্তত দেড়শ জনকে খুন করে প্রদীপ। সবশেষ ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলি করে খুন করা হয় ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে।
মেজর সিনহা খুনের বিচারে সেনাবাহিনী কঠোর থাকায় প্রদীপকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় সরকার। কয়েক মাস পর ওসি প্রদীপের স্ত্রী অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ আমলে মামলার বিচারকাজ ঢিমেতালে চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গতি পায় মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিচারকাজ।
এদিকে প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান সদীপ। চাকরি করলেও মিডিয়ার সামনে খুব একটা আসেননি তিনি। এরই মধ্যে সরকার পতন হলে চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন ফেনীতে। সবশেষ ফেনী সদরের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ জানান, সদীপের দেশ ছেড়ে যাওয়ার কোনো খবর তার জানা নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক সদীপ কুমার দাশ জানান, সরকারী বিধি মেনে ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচারের কারণে, আপাতত দেশে ফেরাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.