August 27, 2025, 12:00 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-08-26 13:41:10 BdST

রাজনীতিতে সম্মান সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে


বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী মতকে সম্মান করার সংস্কৃতি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। ২৪ আগস্ট রবিবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তা রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্দশার এক নগ্ন চিত্র। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে ধাক্কা দেওয়া হলো, এরপর শুরু হলো তার বিরুদ্ধে বিষোদগার, এমনকি চরিত্রহননের এক কদর্য প্রচারণাও।

এই বিষয়টি দেশের অঙ্গন পেরিয়ে বিদেশেও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন সহ রাজনৈতিক দলগুলো। কেউই এর দায় এড়াতে পারেননি। এটি সভ্য রাজনীতিবিদের কাজ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকগণ।

রুমিন ফারহানা দীর্ঘদিন ধরে সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়াজ তুলেছেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের পক্ষে। বিএনপির জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন অন্যতম দৃঢ় কণ্ঠস্বর। সংসদে তার বক্তৃতা অনেক সময়ই শাসকদলের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। অথচ রাজনৈতিক ভিন্নমতের জন্য তাকে আক্রমণ করা, এটি কেবল একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়, এটি গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত।

অতীত রেকর্ড অনুযায়ী ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, যদিও পারিবারিকভাবে তাঁর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু নৈতিক দৃঢ়তার জায়গায় তিনি কোনো আপস করেননি।

আবার ভিপি নূরুল হক নূর রাজপথে দাঁড়িয়ে ছাত্র অধিকার ও গণতন্ত্রের দাবিতে বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। কিন্তু তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেননি।

এই ধারাবাহিকতাতেই ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংসদীয় আসন পুননির্ধারন চাইতে গিয়ে তিনি ২৪ আগস্ট আক্রমণের শিকার।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মতের ভিন্নতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিন্নমত দমন করা, নারী রাজনীতিককে প্রকাশ্যে ধাক্কা দেওয়া, এরপর তার বিরুদ্ধে বিষোদগার, এসব ঘটনা কেবল রাজনৈতিক অনাচার নয়, সামাজিক অবক্ষয়েরও বহিঃপ্রকাশ।
আসলে বিরোধী মতকে শত্রু মনে করার প্রবণতা থেকেই এই ধরনের আচরণ জন্ম নিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গণতন্ত্রের ন্যূনতম সৌন্দর্য।

বিশ্লেষকদের মতে, আমরা ভুলে যাই দ্রুত। তাই হয়তো ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের সংসদে সাহসী বক্তব্য, ভিপি নূরের রাজপথের আন্দোলন কিংবা রুমিন ফারহানার সংসদীয় সোচ্চারতা, এসবই আমাদের কাছে ম্লান হয়ে যায়। অথচ এরা প্রত্যেকেই দেখিয়েছেন, রাজনৈতিক চাপ, হামলা কিংবা অপবাদ সত্ত্বেও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো যায়।

২৪ আগস্ট রুমিন ফারহানার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা জাতির ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত। সাহসী কণ্ঠস্বরকে যদি এভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে গণতন্ত্রের জায়গাটা ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাবে।
আন্দালিব রহমান পার্থ, ভিপি নূর কিংবা রুমিন ফারহানাদের মতো মানুষরা রাজনীতিকে আশার আলো দেখান। তাদের অবদান ভুলে গেলে আমরা কেবল ব্যক্তিদের নয়, আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতকেই ভুলে যাবো।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সূত্রের বক্তব্য এবং ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন রুমিন ফারহানাকে আগে বক্তব্য দেবার সুযোগ দেয়। এসময় বলা হয় বাকিদের বক্তব্য পরে শোনা হবে। কিন্ত নাগরিক পার্টির এই নেতা রুমিন ফারহানার আগে বক্তব্য দিতে চান। তিনি তার দলের সহকর্মী এবং পুলিশি বাঁধা অতিক্রম করে রুমিন ফারহানাকে ডায়াস থেকে সরাবার চেষ্টা করেন। এসময় রুমিন ফারহানার অনুসারীরা মারমুখি হয়ে উঠে। রুমিন ফারহানা কল্পনাও করতে পারেনি নাগরিক পার্টির লোকজন এসব করবে। তার ধারণা ছিলো বিএনপির লোকজন এটা করলেও করতে পারে। এই কারণে হয়তো তিনি প্রাথমিক ভাবে বিএনপি'র লোকজনের কথা বলেছেন।

ঘটনার ১০-১১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, রুমিন ফারহানার এপ্রোণ ধরে টান মারার পর উনি ঘুরে তাকান। যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেটা মূলতো এই ঘটনার পরের। এই ঘটনার পর আর শুনানি করার মতো অবস্থা ছিলো না।

বিভিন্ন বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতিতে আরো ধৈর্য্যশীল হওয়া রাজনৈতিক নেতাদের জন্য মংগল। আর নির্বাচন কমিশনে আরেকটু ম্যাচিউরড লোকজন পাঠানো উচিত। অবশ্য আমাদের টার্গেট যদি থাকে নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করে নির্বাচন আটকানো তাহলে ঠিক আছে।

গত ২৪ আগস্ট এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যা দেশে-বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে টক অব দ্যা খবর এ পরিণত হয়। হাটে-বাজারে, চায়ের স্টলে একটাই আলাপ তাহলো বিএনপি বনাম এনসিপির লড়াই। দু'পক্ষই দোষী সাব্যস্ত করে একে আরেককে। কিন্তু সঠিক বিবেচনা করে জাতির কাছে দু'দলই ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করেন। উপরন্তু মিডিয়ায় পালটা হিংসাত্মবোধক বক্তব্য দেন দু'পক্ষই। আসলে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কেউ রাজনীতি করেন না এগুলোই তার ভয়াবহ প্রমাণ। রাজনীতিতে প্রতি টি মিথ্যা সত্যের আঘাতে চুরমার হতে হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.