October 16, 2025, 10:27 pm


শাফিন আহমেদ

Published:
2025-10-14 15:02:00 BdST

মিস্টার ৫% ওসমান গনির 'বিআরএসএ কমিটিকে নিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য'শত কোটি টাকার অঢেল সম্পদ, নিবন্ধন পরিবারে দলিলবাণিজ্যের প্রথম সারিতে


নিবন্ধন পরিবারে দলিলবাণিজ্যে শীর্ষে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী ওসমান গনি মন্ডল, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিলো ৫ বছর। বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন ২০২৫-২৬ কমিটির সহ-সভাপতি। কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারীয়া গ্রাম থেকে বেড়ে ওঠা, পিতার নাম: মৃত আলহাজ্ব ভোমর আলি মন্ডল। ওসমান গনির বড় ভাই আব্দুল কাদের মন্ডল বেসামরিক গেজেটকৃত- ৩৯৩১/ লাল মুক্তিবার্তা- ৩১৬০৪০৭১৬, আরেকভাই জালাল উদ্দিন মন্ডল ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়। অর্থাৎ একই পরিবারে দুইটি সত্যের মাঝে একটি মিথ্যের বসবাস। ওসমান গনি বলছেন, 'মুজিবনগর বিষয়ে আদালত সদুত্তর দিবে'।

 

মুজিবনগর সরকারের ১৯০ জন কর্মচারী জাল নথিপত্র উপস্থাপনসহ হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে এবং মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আবেদন করে, ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এই আবেদনগুলি দায়ের করা হয়। ঘুষের বিনিময়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে সংগৃহীত জাল নথি জমা দিয়ে তারা হাইকোর্টের রায় তাদের পক্ষে যোগদান করতে সক্ষম হয়। আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত সংস্থাটি প্রকাশ করে, ১৯০ জনের মধ্যে ১৩৮ জনের বয়স ১৯৭১ সালে দুই থেকে ১২ বছরের মধ্যে ছিল। ১৯০ জনের সবাই দাবি করেছেন যে তারা তাদের বাড়ি ছেড়েছেন, যুদ্ধের সময় সীমান্ত অতিক্রম করেছেন এবং মুজিবনগর সরকারের জন্য 'তথ্যপ্রদর্শক' এবং 'রাজনৈতিক প্রেরণাদাতা' হিসেবে কাজ করেছেন। সরকার ২০০৯ সালে ১৯০ জন তথাকথিত মুজিবনগর সরকারি কর্মচারীকে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর বেশ কয়েকজন সাব-রেজিস্ট্রার হাইকোর্টে যান এবং তদন্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পান। তবে সরকার হাইকোর্ট আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে একটি আবেদন দায়ের করে। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। তদন্ত পুনরায় শুরু হয়, এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৮৯ জন সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে, পুনরায় তদন্ত পরিচালনা এবং জালিয়াতির জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাব-রেজিস্ট্রাররা দাবি করেন মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তাদের নিয়োগ এবং মুক্তির চিঠিগুলি ঢেউতোলা লোহার তৈরি বাক্সে, আলমারিতে রাখা হয়েছিল। সার্টিফিকেটগুলোতে দাবি করা হয়েছে, তারা ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে ব্যাপক আধিপত্য, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন বাগিয়ে নেন। সূত্রে জানা যায়, গত ০৩-০২-২০২৫ তারিখে মোঃ নুর ইসলাম, মহা-পরিদর্শক নিবন্ধন অধিদপ্তর কর্তৃক স্বাক্ষরিত যার স্মারক নং ১০.০০.০০০০.১৩০.১৯.০০১.২১-২৭ স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে গাজীপুরের শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রার ওসমান গণি মন্ডলকে পাবনা সদর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে বদলী আদেশ হয়। পরবর্তীতে ১৭ দিনের ব্যবধানে স্ত্রীর অসুস্থতা জনিত ১৭ টি প্রেসক্রিপশন অধিদপ্তরে সাবমিট করে গত ১৯-০২-২০২৫ তারিখ মহা-পরিদর্শক নিবন্ধন অধিদপ্তর মোঃ নূর ইসলাম এর স্বাক্ষরিত স্মারক নং- ১০.০০.০০০০.১৩০.১৯.০০১.২১-৪৬ স্মারক মূলে পাবনায় বদলীকৃত সাব-রেজিষ্ট্রার ওসমান গণি মন্ডলকে কাপাসিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিস গাজীপুর বদলী করা হয়। গোপনসূত্রে জানা যায়, ব্যক্তিগত কারনে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে বদলী আদেশটি বাতিল করে গাজীপুর কাপাসিয়ায় সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে বদলী হয়েছেন। সম্প্রতি টঙ্গী রেজিস্ট্রি অফিসে সপ্তাহে ৩ দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে ওসমান গনি মন্ডল।

অভিযোগ রয়েছে, শত কোটি টাকার অঢেল সম্পদ, গাজীপুর শ্রীপুরে স্ত্রীর নামে জমি, সাব রেজিস্ট্রার ওসমান গনির অসদাচরণ, বাংলাদেশ রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশনকে অবমাননা করে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কটুক্তি কথা, 'নির্ধারিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, মূল দলিলে গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অপকর্মের মহোৎসবের কায়েম রাজত্ব করেছে। ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতারা বলছেন, 'নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ হয় না এই অফিসে। জমির দলিল আটকে রেখে চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, অফিস সহকারী, নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য - তিনি বলেন, সেবাগ্রহীতাদের সাথে অসদাচরণসহ, বর্তমান 'বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন' কে নিয়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা প্রতিবেদক'কে বলেন। 'বর্তমান কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় গুলশানের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সকলেই বদলি বাণিজ্য করে বেড়ায়, এই পকেট কমিটিতে ওসমান গনি মন্ডল'কে সাথে না রাখলে এই কমিটি হতো না'। এছাড়াও ২০২২ সালে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে অনেক অনিয়ম দুর্নীতিতে জর্জরিত ছিলো একপর্যায়ে পাবনা বদলি করা হয়।

ওসমান গনি মন্ডলের বিপুল সম্পদের তালিকা-

১. উত্তরা, ঠিকানা: সেক্টর-১২, রোড-১৬, বাসা-২৬, ফ্ল্যাট: ২টি।

২. গাজীপুর শ্রীপুরে নিজ স্ত্রীর নামে কিনে রেখেছেন জমি/প্লট।

৩. ক্যান্টনমেন্ট (মৌজা: বাইলজুরি), ফ্ল্যাট: ২টি।

৪. নিজ গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নিজ গ্রামে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার অভ্যন্তরে আধুনিক সাজসজ্জা ও দামি আসবাবপত্রে সজ্জিত।

৫. ভুরুঙ্গামারি, মৌজা: মইদাম – জমি (৮৭৭ শতক)

‎এ সকল অনিয়ম প্রসঙ্গে সাব রেজিস্ট্রার ওসমান গনি মন্ডলকে একাধিকার মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.