October 20, 2025, 9:17 pm


নেহাল আহমেদ

Published:
2025-10-20 18:38:40 BdST

অশ্বিনী কুমার ব্রত ও “ব্রতের ভাত”


বাংলাদেশ এমন এক জায়গা, যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক রীতি ও মানবিকতা একসাথে মিশে এক অনন্য সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। সেই সংস্কৃতির অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো “অশ্বিনী কুমার ব্রত”, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চট্টগ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নারীদের জীবনের এক অংশ হয়ে আছে।

ব্রতের উৎপত্তি ও তাৎপর্য

অশ্বিনী কুমারদ্বয় হিন্দু পুরাণে দেব চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তাঁরা রোগব্যাধি নাশ ও দীর্ঘায়ুর আশীর্বাদ দেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

অশ্বিনী কুমার’ বা ‘অশ্বিনী দেবতা’ হলেন দেবযমজ চিকিৎসক, সূর্যদেবের সন্তান। তারা ঋগ্বেদের সময় থেকেই পূজিত হয়ে আসছেন। তাঁদেরকে বলা হয় দেবতার চিকিৎসক — যারা আহত বা অসুস্থ দেবতাদের আরোগ্য দিতেন। এজন্যই তাঁদের নামে এই ব্রতের উৎপত্তি।

তাই নারীরা এই ব্রত পালন করেন পরিবারের স্বাস্থ্য, স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সন্তানের মঙ্গল কামনায়। এই আচার কেবল পূজা নয়—এ এক আত্মিক সাধনা, যা গৃহস্থ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে এই ব্রত পালনের ঐতিহ্য বহমান। শরৎ বা হেমন্তের কোনো শুভ তিথিতে নারীরা নিরামিষ আহার করে, প্রদীপ জ্বেলে, দেবতার উদ্দেশে প্রার্থনা করেন। তাঁদের ব্রতের উদ্দেশ্য—রোগমুক্ত জীবন ও সংসারের শান্তি।
ব্রতের ভাত” : পবিত্র ভাগাভাগির প্রতীক

এই ব্রতের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হলো “ব্রতের ভাত”। সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি এই ভাত—চাল, ডাল, শাক, আলু ভাজি, নারকেল, কলা, কখনও মিষ্টান্ন বা পিঠা।

ব্রত শেষে এই ভাত দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করা হয়, তারপর প্রসাদ হিসেবে পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী—সবার মাঝে ভাগ করা হয়।

এই “ভাগাভাগি” আসলে এক সামাজিক ও মানবিক শিক্ষা দেয়—খাবার, মঙ্গল, আশীর্বাদ—সবই তখন একসাথে ছড়িয়ে পড়ে সমাজে।

অনেক সময় মুসলমান বা ভিন্ন ধর্মের মানুষও এই প্রসাদ পান—চট্টগ্রাম সেই ঐতিহ্যবাহী সহাবস্থানের নিদর্শন। মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ

এই ব্রতের আবহ আজও জীবন্ত, কখনও খুব নিঃশব্দে, কখনও খুব আন্তরিকভাবে।

একজন গৃহ সহকারী পম্পি দাস, উদাহরণস্বরূপ, নিজের কর্মস্থলে “ব্রতের ভাত” নিয়ে আসে—জেনে যে সেখানে এই ব্রত পালিত হয়নি। সে বিশ্বাস করে, শুভ ব্রতের ভাত ভাগ করলে ঘরে মঙ্গল আসে। এই ছোট কাজের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের সমাজের এক গভীর মূল্যবোধ—ভক্তি, আন্তরিকতা ও মানবিক বন্ধন।

অশ্বিনী কুমার ব্রত কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি এক লোক ঐতিহ্যের প্রতীক, যা সময়ের পরিক্রমায় চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে উজ্জ্বল করেছে। এই ব্রত শেখায়—মঙ্গল একা অর্জিত হয় না, বরং ভাগ করে নিতে হয় সবার সঙ্গে।

“ব্রতের ভাত” তাই কেবল ভাত নয়, বরং একটি ঐতিহ্যের স্বাদ—যেখানে বিশ্বাস ও ভালোবাসা এক হয়ে যায়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.