নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:2025-11-25 19:31:57 BdST
তদন্ত বা অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত করতে কেউ চাপ দিলে তার নাম প্রকাশ করা হবে: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতিবিরোধী লড়াইকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবিষ্যতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
দুর্নীতির তদন্ত বা অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত করতে কেউ অযাচিত চাপ প্রয়োগ করলে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
দুদকের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব বা চাপ আসে কিনা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে যদি কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুদকের কাজে বাধা সৃষ্টি করেন, তাহলে সেই চাপ প্রয়োগকারীর পরিচয় কমিশন প্রকাশ্যে তুলে ধরবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
দেশের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম, সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ, তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় এই সভায়।
এই মতবিনিময় সভায় দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ এবং দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সাংবাদিকরা দুদকে অযাচিত প্রভাব বা রাজনৈতিক-বাণিজ্যিক চাপ আসে কিনা—এমন এক প্রশ্ন তুললে দুদক চেয়ারম্যান আর কোনো আবরণে না রেখে সরাসরি বলেন, “দুদকের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য অযাচিত চাপ প্রয়োগের ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি। কিন্তু এখন থেকে আমরা আর কাউকে ছাড় দেব না। কেউ যদি দুদকের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তদন্ত ব্যাহত করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা তাদের নাম আগামীতে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেব।”
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই তদন্ত সংস্থা হিসেবে দুদকের কাজকে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন রাখতে হবে। দুদক কোনোভাবেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। এমনকি চাপ প্রয়োগকারীর সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাবশালী হওয়া—এসব কিছুই বিবেচনা করা হবে না বলেও তিনি দৃঢ় ঘোষণা দেন।
দুদক চেয়ারম্যান জানান, দুর্নীতি প্রতিরোধে এখন শুধু তদন্ত ও মামলা করা নয়, বরং প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি, অনুসন্ধান পদ্ধতি আধুনিকীকরণ, ডিজিটাল নজরদারি এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলো নিয়ে বিশেষ তদন্ত সেল গঠন করা—এসব কাজ চলছে। “আমরা চাই, মানুষ যেন দুইভাবে বার্তা পায়—দুদক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর; আবার দুর্নীতির তদন্তে বাধা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর,” বলেন তিনি।
সভায় উপস্থিত কমিশনাররা বলেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রক্রিয়া ক্রমেই উন্নত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প, রাজস্ব খাত, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ও আর্থিক খাত—এসব জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগ আসলে তা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কমিশনাররা আরও জানান, অনুসন্ধানের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার, কর্মকর্তা পর্যায়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, জনগণের কাছে দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগকে আরও দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্য করতে কমিশন প্রতিদিনই নতুনভাবে কাজ করছে। অনুসন্ধানের প্রতিটি ধাপ এখন নথিভুক্ত করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তিনি এটাও জানান, যেকোনো অভিযোগ গ্রহণের পর তা প্রাথমিক যাচাই থেকে শুরু করে মামলা দায়ের পর্যন্ত প্রতিটি স্তর এখন আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সভা শেষে দুদক চেয়ারম্যান পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “কাউকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করছি। তাই কেউ যদি ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে, তারা আগামীতে নিজেদের নামই খবর শিরোনামে দেখতে পাবেন।”
দুদকের এই ঘোষণা দেশের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে নতুন বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে একদিকে দুর্নীতিবাজদের আতঙ্ক বাড়বে, অন্যদিকে তদন্তে প্রভাব খাটানোর প্রবণতা কমে যাবে—এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন উপস্থিত কর্মকর্তারা।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
