November 29, 2025, 3:05 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-11-29 01:17:48 BdST

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন টাঙ্গাইল-৪ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়নে আশাবাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিম


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা বিভাগের অধীনস্থ টাঙ্গাইল জেলার অন্যতম একটি আসন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মো.আব্দুল হালিম মিয়া।

তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে বৃহত্তর স্বার্থে জোট শরিকদের সাথে বিএনপির আসন সমঝোতার কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১দফা নির্বাচনী অঙ্গীকার সম্বলিত লিফলেট বিতরণের অংশ হিসেবে তিনি কালিহাতী উপজেলার পারখী ইউনিয়নের ভিয়াইল বাজারে আয়োজিত পথসভায় বক্তব্যকালে এই দাবি করেন।

পথসভায় ইঞ্জিনিয়ার হালিম মিয়া বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সুখ–দুঃখে পাশে থেকেছি। বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন এখনো ঘোষণা হয়নি, শুধু সম্ভাব্য তালিকা প্রকাশ হয়েছে। দলীয়ভাবে এখনও নির্বাচনী জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়নি। কালিহাতীতে বিএনপির ভোটের বাস্তব অবস্থা ও মাঠে আন্দোলন-সংগ্রামের ভিত্তিতেই এই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাথে যারা আঁতাত করেছে কিংবা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি তাদের বিষয়ে বিচার-বিবেচনা করেই মনোনয়ন দেওয়া উচিৎ।

ইঞ্জিনিয়ার হালিম বলেন, গত ১৭ বছর ধরে কালিহাতী ও ঢাকায় বিএনপির সকল আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। রাজপথে আন্দোলনের সময় মারধরের শিকার হয়েছি। তাই চূড়ান্ত মনোনয়ন বিষয়ে আমি ন্যায্য হকদার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আকুল আবেদন কালিহাতীতে যাচাই-বাছাই করে আমি যোগ্য হলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।

এসময় পথসভায় উপস্থিত ছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম মিয়ার কনিষ্ঠ কন্যা সোনিয়া হালিম, পারখী ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মিন্টু, পারখী ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান হোসেন আলী, সাবেক ইউপি সদস্য মুক্তার আলী, বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদল নেতা সাব্বিরসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীগণ।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন। এই আসনে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম মিয়া ছাড়াও বিএনপির ঢাকা বিভাগীর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু সহ বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মতিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লুৎফর রহমান মতিন বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর সাথে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি সেসময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দিতেন। এই বিষয়ে দলীয় বিভিন্ন ফোরামে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়ে একরকম স্বেচ্ছায় বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় নেন মতিন।

এখানেই শেষ নয়, ২৪'র গন অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মতিন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিএনপিতে পুনর্বাসনে পুর্নাঙ্গ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৩রা নভেম্বরে বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরপরই আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সাথে মতিনের একটি একত্রিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই কালিহাতির প্রতিটি অলিগলিতে জোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করতে পারেন।

এদিকে, অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটুর বিরুদ্ধে ৫ আগষ্টের পর টাঙ্গাইলে বিএনপির জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটিতে তৃণমূলের প্রকৃত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের পছন্দমত লোকদের কাছে দলীয় পদ বিক্রি এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিএনপিতে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।এমনকি, জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে গঠিত সেসব কমিটিতে পতিত আওয়ামী ঘরানার অনেকেই স্থান পায়।

এর ফলে, কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সকল শীর্ষ নেতারা টিটুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করছেন। এই অবস্থায় কার্যত একা হয়ে পড়েছেন বেনজির আহমেদ টিটু। তবুও তিনিই এই আসনে চুড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।

এছাড়া কালিহাতীর সকল বালু মহাল টিটুর সমর্থকদের দখলে চলে যায় বলে অভিযোগ উঠে। সম্প্রতি এলেঙ্গা পৌরসভা এলাকায় মতিন গ্রুপ এবং টিটু গ্রুপের মধ্যে এনিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

পাশাপাশি বেনজিরের সমর্থকেরা এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে বিএনপির হাইকমান্ড টিটুর উপর নাখোশ হন। এসব কারনেই তিনি দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মনে করছেন অনেকে।

উল্লেখিত নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপির তৃনমূল নেতাকর্মীদের এখন একটাই দাবি আর তা হচ্ছে - অবিলম্বে লুৎফর রহমান মতিনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ইঞ্জিনিয়ার হালিমকে টাঙ্গাইল-৪ আসনে চুড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হোক।

কালিহাতী উপজেলার সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধাগন এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের মতে, ইঞ্জিনিয়ার হালিম একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই আসনে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মতো একজন হেভিওয়েট রাজনীতিবিদের সাথে ভোটযুদ্ধে জিততে যোগ্য প্রার্থী ব্যতীত অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি এই আসনটি হারাবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতিন নির্বাচন প্রচারণা চালাচ্ছে। এতে বিএনপির বড় ধরনের ক্ষতিসাধন হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.