December 2, 2025, 12:32 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-12-02 09:57:38 BdST

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কোটি মানুষের দোয়াসারাদেশ কাদঁছে খালেদা জিয়ার মায়ায়


বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বস্তরের মানুষের দোয়া পেয়েছেন খালেদা জিয়া

শাহীন আবদুল বারীঃ

বাংলাদেশের ইতিহাসে জীবিত অবস্থায় কোটি মানুষের দোয়া পেয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ভবিষ্যতে এমন সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক ব্যক্তি জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম মিলবে। বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে সুস্থতা দান করবেন বলে সর্বস্তরের মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস।

রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা শহর, উপজেলা, থানা ও গ্রাম-গঞ্জের মসজিদ-মাদ্রাসা এবং দলীয় ব্যানারে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরাও দোয়া চেয়ে পোস্ট করছেন। মনে হচ্ছে যেন, বাংলাদেশের হৃদয় আজ ধুকধুক করছে তাঁর সঙ্গে। মায়ের শ্বাস যেন সন্তানের বুকের ভেতর এসে থেমে আছে।

বেগম খালেদা জিয়া এমন একটি নাম, যিনি "মা" উপাধি পেয়েছেন। তিনি কাঁধে মাথা রেখে কান্না করা এক মায়ের নাম। যিনি নিজের সন্তান হারিয়েছেন, স্বামী হারিয়েছেন, সুখ হারিয়েছেন কিন্তু হারাননি মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা। খালেদা জিয়ার ডাকে আন্দোলন হয়েছে কিন্তু তাঁর কণ্ঠে কখনো ঘৃণা শোনা যায়নি। খালেদা জিয়ার জীবন ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে কিন্তু তাঁর আচরণে কখনো কঠোরতা দেখা যায়নি। তাকে যতই আঘাত করা হয়েছে, তিনি ততই নরম হয়েছেন। যেন আল্লাহ তাঁর বুকের ভেতর অতিরিক্ত দয়া ঢেলে দিয়েছেন।

আজ রাজনীতির হিসাব ভুলে গেছে মানুষ, মায়ের কষ্টই বড় মনে হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের কাছে। মায়ের চোখে-চোখ রাখলেই বোঝা যায় তিনি কতটা যন্ত্রণায় আছেন, কতটা নিঃশব্দে সহ্য করছেন সব।

তিনি সেই নারী, যিনি একটিবারও বলেননি “আমি ক্লান্ত।” যিনি কঠিন জেলখানার রাতেও মানুষের সুখ কামনা করেছেন। যিনি নিজের অসুস্থ শরীর নিয়ে সন্তানের মতো পুরো জাতিকে আগলে রেখেছেন। তাঁর জীবন মানে ত্যাগ, তাঁর দিনগুলো মানে সংগ্রাম। দেশমাতার প্রতিটা নিশ্বাসেই জেগে আছে দেশের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা। জীবনের পর জীবন গিয়েছে কিন্তু তিনি মাথা নত করেননি অপশক্তির সামনে। বরং মানুষের প্রতি তাঁর মাতৃত্বকে আরো গভীর করেছেন বারবার। যেখানে তিনি আহত হয়েছেন, সেখানেও দিয়েছেন দোয়া।

যেখানে তিনি বন্দী হয়েছেন, সেখানেও করেছেন ক্ষমা।যেখানে তিনি অপমানিত হয়েছেন, সেখানেও দিয়েছেন দেশের জন্য হৃদয়ের হাসি। আজ তাঁর হাতের শিরা ফুঁড়ে স্যালাইন যাচ্ছে, কিন্তু দেশের মানুষের হৃদয় ফুঁড়ে ব্যথা বের হচ্ছে। হাসপাতালের সাদা দেয়ালগুলোও যেন তাঁর প্রতি ভালোবাসায় কেঁদে উঠছে।

বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে আজ একই দোয়া, “হে আল্লাহ, এই মাকে আমাদের থেকে কেড়ে নিবেন না। এই দেশের কান্নার উৎস, এই দেশের শক্তির প্রতীককে আবার আগের মতো হাসিমুখে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন।”

যে মানুষ সারাজীবন অন্যের জন্য কেঁদেছেন, আজ তাঁকে নিয়ে পুরো জাতি কাঁদছে। এত ভালোবাসা, এত দয়া, এত নিঃস্বার্থ ত্যাগ, এমন মানুষ ইতিহাসে একবারই আসে। তিনি আকাশের তারা নন, তিনি বাংলাদেশের বুকের সবচেয়ে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা। তিনি নিঃশব্দে আমাদের জন্য জ্বলছেন, আর আমরা চোখ ভিজিয়ে তাঁর আলো আঁকড়ে ধরে আছি।

খালেদা জিয়ার জীবন, একটি মহাকাব্যিক ত্যাগের গল্প। একটি অশ্রু-ভেজা ইতিহাস। একটি মাতৃত্বের দোয়া, যা পুরো জাতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। হে আল্লাহ, এই জাতির মমতার প্রতীককে আবার সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা, সবচেয়ে সংকটময়, সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে দোয়া-ভেজা সময়। বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে বেগম খালেদা জিয়া এক পরম ব্যক্তি।

বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন, যত্ন করতেন। বাংলাদেশের খুব কম রাজনীতিবিদদেরই এই ভালোবাসা ও যত্নশীলতাটুকুও নেই। বেগম খালেদা জিয়াকে পতিত সরকার আমলে যখন বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে রাখা হয়ে ছিলো, তখন উনি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলেন, আমরা চাইলে কঠিন কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে নামিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু এতে দেশের অনেক মানুষ মারা যাবে। আমাদের মানুষের প্রতি মায়া আছে। তাই আমরা এই জালিম সরকারের বিচার মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে নীরবে সহ্য করবো। এমন নেতার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়ে সেদিন হাসিনা সরকারের সব নির্যাতন-নিপীড়ন ও জুলুম মাথা পেতে নিয়েছিলো। বিনিময়ে মহান আল্লাহ'র সঠিক বিচারে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। আর পুরস্কার হিসেবে আল্লাহপাক বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছেন। তাঁর অসুস্থতায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হচ্ছে। এটাই বেগম খালেদা জিয়ার বিনয়ী আচরণ ও ধৈর্যের উত্তম প্রতিদান দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।

বাংলাদেশের মানুষ জানতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ফেয়ার ট্রায়াল হচ্ছেনা। আপামর জনসাধারণ বুঝতে পেরেছিল শেখ হাসিনা তাকে জেলে পাঠাবেই। হয়তো মেরেও ফেলা হবে। তারপরও লন্ডন থেকে উমরাহ করতে গিয়ে মক্কা-মদিনা থেকে দেশে ফিরে আসলেন। হাসিনার বিচারিক আদালতে আনফেয়ার ট্রায়াল ফেস করে জেলে গেলেন। নিশ্চিত মৃত্যুকে বেছে নিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য খাবারের সাথে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। জেলের ভেতর খালেদা জিয়ার শরীরে শ্লো পয়োজনিং করে লিভার এবং কিডনি ড্যামেজ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার একজন ডাক্তারের বক্তব্য শুনে রীতিমতো গাঁ শিউরে ওঠেছে। খালেদা জিয়ার হাতের আঙুলের অবস্থা দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুটো হাতই ফুলে পানি জমে গেছে। শরীরের ষাট ভাগ লিভার ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। সাধারণত যারা লিভারের সমস্যায় ভোগেন, তাদের এই সমস্যাটা হয়। আল্লাহ ওনাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলবেন এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুতি।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের কিংবদন্তী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। মহান আল্লাহ সহায় হউন।

যিনি হারাতে হারাতে নিজের সন্তান, বাড়ি সবই হারিয়েছেন, জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। তবু হার মানেননি জুলুমকারীদের কাছে। অথচ আজ অসুস্থতার কাছে হার মানতে যাচ্ছেন। হে আরশের মালিক, তোমার বান্দিকে সুন্দর একটা দিন না দেখা পর্যন্ত নেক হায়াত দান করো। তুমিই পারো বেগম খালেদা জিয়াকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করে বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুঁটাতে।

নিউইয়র্ক রাজ্যের মত একটি ভূখণ্ডে ১৮ কোটি মানুষের বাস। সম্পদের অপ্রতুলতাও তীব্র। এরকম একটি সমস্যাসংকুল দেশের দুইবার হাল ধরেছিলেন ম্যাডাম খালেদা জিয়া। তিনি একজন শাসক ছিলেন, ছিলেন রাজনীতিক। ফলে তার সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। ছিলও। তারপরও মানুষ কেন তাকে এতো ভালোবাসে ?

এর বড় কারণ তার নিখাদ দেশপ্রেম ও অত্যুজ্জ্বল সততা। ১০ বছর দেশ চালালেও দুর্নীতি কখনো তাকে স্পর্শ করেনি। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তিনি কোনো চুক্তি করেননি। আঞ্চলিক শক্তি ভারতের রক্তচক্ষুকে তিনি পরোয়া করেননি।

হাসিনার মত তিনি কাউকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে মায়াকান্না করেননি। তিনি কখনো দাবি করেননি তিনি দেশকে স্বর্গ বানিয়ে ফেলেছেন। তার শাসনে মানুষকে গুলি করে পাখির মত মারা হয়নি। নিজের ক্ষমতা চলে যাবে জানা সত্ত্বেও তিনি রক্তের উপর মসনদ টিকিয়ে রাখতে মোটেই আগ্রহ দেখাননি।

দেশের মানুষ দেখেছে, ক্যান্টনমেন্টে জীবন কাটানো একজন নারীর হৃদয়জুড়ে বাংলাদেশ ও আর তার জনগণ। তিনি বলেছেন, দেশের বাইরে তার কোনো ঠিকানা নেই। সেটা মানুষ প্রমাণ পেয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। এই কারণেই খালেদা জিয়া বাংলাদেশের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষের নয়নমনি, অতি আপনজন।

ম্যাডাম, আমরা আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। শ্রদ্ধা করি। আপনি আমাদের মাতৃতুল্য। এই জমিন আপনাকে শ্রদ্ধায় রাখবে বহু যুগ। মহান আল্লাহর অপার রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চলমান। এই অবস্থায় সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ১০ মিনিটে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদারকি করতে হাসপাতালে পৌঁছেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

নিরাপত্তাব্যবস্থার অংশ হিসেবে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খানিকটা উন্নতি এসেছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল, চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে।

একইসঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় ‘কায়মানো বাক্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করতে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

এভারকেয়ার হাসপাতালে শত শত নেতাকর্মী নির্ঘুম রাত যাপন করছেন। সবাই অধীর আগ্রহে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক খবরের অপেক্ষায়। এই বুঝি ডাক্তার খবর দিবেন বেগম খালেদা জিয়া চোখ মেলে নেতাকর্মীদের খুঁজছেন। তবে মহান আল্লাহর রহমতে তিনি ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।

এছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে চীনের পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় পৌঁছেছেন। পরে আজ বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান তারা। গণমাধ্যমকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন।

এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসার ব্যাপারে কোনো বাধা থাকলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে এবং তার নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.