শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-12-06 22:02:03 BdST
ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার সাধনের সংবাদ সম্মেলনআশুলিয়ায় গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা দখল নিয়ে অপহরণের নাটক
সাভারের আশুলিয়ায় ঝুটের মালামাল না পেয়ে একটি তৈরি পোশাক কারখানার জেনারেল ম্যানেজারকে গাড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বকুল ভুইয়া, তার ছেলে রনি ও সুজন সহ কয়েকজন ঝুট ব্যবসায়ী ঐ পোশাক কারখানার জিএমকে উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এই ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর জানা গেছে। এই বিষয়ে আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অপহরণের শিকার দাবি করা জিএম সাধন। আর পুলিশ বলছে ঘটনাটি সন্দেহজনক। তবে এই ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাকুক, তাকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ ঝুট ব্যবসা নিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটতে পারে।
এদিকে এই ঘটনায় কারখানার কর্মকর্তা ও তার পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। অপহরণের কাহিনী ফাঁস হওয়ায় জড়িতদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ও ভয়ভীতি কাজ করছে।
গত ৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকালে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিং করেন ভুক্তভোগী দাবিদার সাধন কুমার দে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়ার জামগড়ার দিয়াখালি এলাকায় অবস্থিত দি রোজ ফ্যাক্টরির সামনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই এলাকার রোজ ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার সাধন কুমার দে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অফিস থেকে প্রাইভেটকারে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কারখানার সামনে ৬/৭ জন যুবক তার গতিরোধ করে গাড়ি থেকে ম্যানেজারকে নামিয়ে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। এসময় পূরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সাধনকে সন্ত্রাসীরা ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
সাধনের বক্তব্য অনুযায়ী, তাকে সন্ত্রাসীরা গাড়ির ভেতর আটকে রেখে বিভিন্নভাবে মারধর ও হুমকি-ধমকি দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা গাড়িটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে সাধনকে কারখানার সামনে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সাধনকে জোরপূর্বক ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি ডকুমেন্টসে সাক্ষর করে নেয় বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় বকুল ভুইয়া, তার ছেলে রনি ও সুজন সহ কয়েকজন ঝুট ব্যবসায়ী সাধনের কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে চুক্তিনামায় সই করিয়ে নিয়েছে বলে মালিক পক্ষের দাবি। অভিযুক্ত রনি আশুলিয়ায় সন্ত্রাসী নামে পরিচিত বলে এলাকাবাসী জানায়। রনির বাবা বকুল ভুইয়া নিজেই ছেলেকে দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ঝুট ব্যবসা পরিচালনা করছে।
পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। জিডি ও সাধনের মৌখিক বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চলছে। সাধনের লিখিত অভিযোগটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।এই ঘটনার সাথে ঝুট ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট জড়িত। সাধনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া বকুল ভুইয়া ও রনিকে এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুজনও পলাতক রয়েছে।
ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কর্মকর্তা সাধন কুমার দে বলেন, ওই ব্যক্তিদের ঝুট ব্যবসার সুযোগ না দেওয়ায় যুবকরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি এখন জীবনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের ঝুট ব্যবসা ডিটের মাধ্যমে স্থানীয় রনিকে দেওয়া হলে আরেক পক্ষ ঝুট নিতে বাঁধা দেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কোন পক্ষকেই ঝুট না দিয়ে নিজেরাই ঝুট বিক্রি করে। এই বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের সাথেই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় কারখানা কর্তৃপক্ষের। ঝুট ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় সাবেক একজন চেয়ারম্যানের সাথে রনির দ্বন্দ্ব আছে। তাকেও রনি বাহিনী মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। বকুল ভুইয়া দেখতে পরহেজগার হলেও আদতে সন্ত্রাসী বাহিনীর মূল শেল্টারদাতা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক কর্তৃপক্ষ জানান, ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আমাদের পোশাক কারখানার ব্যবসায় বারোটা বেজে যাচ্ছে। শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা প্রকৃত দোষী ব্যক্তির শান্তি দাবি করছি।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
