December 8, 2025, 10:35 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-12-08 20:06:51 BdST

বাকীপুর দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ওয়ালিউল্লার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ


নোয়াখালীর বাকীপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার (ভারপ্রাপ্ত সুপার) মো. ওয়ালী উল্লাহ বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও আয়া নিয়োগে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।

বাকীপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. ওয়ালী উল্লাহ ২০২৪ সালের মার্চে সহ-সুপার পদে যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

৫ আগষ্টের পর মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি পদে বেগমগঞ্জের কৃতি সন্তান কর আইনজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক মো: নুর উদ্দিন নুরু এবং পদাধিকারবলে সেক্রেটারি পদে মাদ্রাসার সুপার মো. ওয়ালী উল্লাহ নির্বাচিত হন

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কৌশলে তিনি তার আস্থাভাজন ব্যক্তিদের নিয়ে তৎকালীন টিএনও-কে সভাপতি করে এডহক কমিটি গঠন করেন। প্রতিনিয়ত উপজেলায় গিয়ে টিএনও-এর নামে বিভিন্ন ধরনের ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত করেন। এমনকি মো. ওয়ালী উল্লাহ মাদ্রাসার আয়কৃত টাকা-পয়সা মাদ্রাসার নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা না দিয়ে নামে ও বেনামে খরচ করছেন। এর নেই কোন সঠিক বিল ভাউচার।

মাদ্রাসার সুপার মো. ওয়ালী উল্লাহর বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে বাকীপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মোঃ ইয়াকুব গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর- ১৪৩৮১। যা এখনো চলমান আছে।

আয়া নিয়োগে অনিয়ম

বাকীপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন চলাকালীন সময়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি ও ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. ওয়ালী উল্লাহ সুকৌশলে আয়া নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেন।

মোসাঃ রোকেয়া বেগম নামে একজন নারীকে অষ্টম শ্রেনী পাসের সার্টিফিকেট, মার্কসীট এবং প্রশংসাপত্র জোগাড় করে দিয়ে নামমাত্র ইন্টারভিউ নিয়ে তড়িঘড়ি করে নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন অভিযুক্ত ওয়ালী উল্লাহ।

সূত্র মতে, গত ০৮ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। ঢাকা থেকে ডি-জির প্রতিনিধি ড. ইসমাইল এবং মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলাম পরীক্ষার কাজে উপস্থিত হন। কিন্তু পরীক্ষার শুরুর আগেই স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা মাদ্রাসায় প্রবেশ করে তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে বসেন—যা নিয়োগ-প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।

মাত্র পাঁচজন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন—৩ জন আইএ পাশ, ২ জন অষ্টম শ্রেণী পাশ। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষার আগেই নির্দিষ্ট একজন প্রার্থীকে পাশ করানোর পরিকল্পনা করা হয়।

গত বছর একই মাদ্রাসার আয়া নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রোকেয়া বেগম এবারও অংশ নেন। পূর্ববর্তী পরীক্ষায় তার ফলাফল ছিল শূন্য, এমনকি অষ্টম শ্রেণীর সঠিক কাগজও দেখাতে পারেননি—যার প্রমাণ মাদ্রাসায় সংরক্ষিত আছে। তবুও রাজনৈতিক প্রভাব ও যোগসাজশে তাকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির কয়েকজন নেতা, সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী শহিদুল ইসলাম এবং মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ওয়ালী উল্লাহ টাকার বিনিময়ে এই নিয়োগকে প্রভাবিত করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগকারীরা বলছেন, রোকেয়া বেগম পরীক্ষায় সুবিধা পেলেও খাতায় কিছুই লিখতে পারেননি। অথচ তাকে ১৮ নম্বর দিয়ে মেধাতালিকায় শীর্ষে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে যারা ভালো লিখেছেন—তাদের দেয়া হয়েছে ১৭, ১৬ বা ১৫ নম্বর। অভিযোগকারীরা এটিকে পরিকল্পিত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—অভিযোগ দাখিলের পর বিভিন্ন দপ্তর থেকে নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশ এলেও, ২১ নভেম্বর শুক্রবার গোপন স্থানে ভারপ্রাপ্ত সুপার, কমিটির সভাপতি, বিএসসি শিক্ষকসহ কয়েকজন মিলে রোকেয়া বেগমের নিয়োগপত্রে সই-স্বাক্ষর নেন।

আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল

অভিযোগ রয়েছে, পূর্বে একজন সহকারী শিক্ষকের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন ১৫০০-২০০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও তিনি বর্তমানে ভুয়া রেজ্যুলেশন করে সকল শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি করে ৪০০০-৫০০০ টাকা করেছেন। ফলে মাদ্রাসার বাৎসরিক আয়ের থেকে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে এই সহ-সুপার ক্লাস না নিয়ে প্রতিনিয়ত উপজেলা আসা যাওয়া করেন এবং নামে বেনামে ভুয়া ভাউচার করে প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাত করছেন।

মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি মোঃ নুর উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত সুপারকে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখতে বললে তিনি টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করেন। সভাপতির মেয়াদ প্রায় ৫/৬ মাস আগেই শেষ হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত আয় অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন, সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন এবং বিভিন্ন ধরনের আয়ের উৎসের টাকা নামে বেনামে ভুয়া ভাউচার করে ভারপ্রাপ্ত সুপার আত্মসাত করেন। 

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, তৎকালীন সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহকে কখনও কোন ভাউচার অনুমোদন দেয়নি।

এদিকে, নুর উদ্দিন নুরু সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার ৪ দিন আগে রূপালী ব্যাংক, রাজগঞ্জ-৩০৭৫ শাখা হইতে ১,৪০,০০০/- টাকা উঠিয়ে নিজে আত্মসাত করেন অভিযুক্ত ওয়ালিউল্লাহ।

এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (চট্টগ্রাম) ড. মোঃ ইসমাইল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। আমরা আয়া নিয়োগ বাতিল এবং জরুরী তদন্ত সাপেক্ষে কয়েক দিনের মধ্যেই দুর্নীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে বাকীপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. ওয়ালী উল্লাহর সাথে কথা বলতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.