December 9, 2025, 5:03 pm


মো. ইকবাল উদ্দিন

Published:
2025-12-09 15:19:58 BdST

আঞ্চলিক মানবিক অংশীদারিত্ব সপ্তাহ-২০২৫ এ আন্তর্জাতিক সেমিনাররোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক সমাধানের জোরালো আহবান


প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ব্যাংকক, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
রিজিওনাল হিউম্যানিটারিয়ান পার্টনারশিপ উইক (RHPW) ২০২৫-এ আন্তর্জাতিক সেমিনার
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক সমাধানের জোরালো আহবান

ব্যাংকক, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫:

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ ও মানবিক সহায়তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মিয়ানমারে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা, অধিকার ও মানবিক সহায়তা আরও জোরদার করতে হবে।

তারা জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থা, আন্তর্জাতিক এনজিও, বিভিন্ন দেশ ও মানবিক সহায়তাকারীদের প্রতি কার্যকরি রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিতের জন্য জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানান। বিশেষ করে নাগরিকত্ব পুনর্বহালের উদ্যোগ ও প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করা, পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য উচ্চশিক্ষা, আয়ের সুযোগ তৈরি, ট্রাভেল পাস, ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ এবং ক্যাম্পে প্রিফ্যাব্রিকেটেড শেল্টার (পূর্বে প্রস্তুতকৃত অংশ দ্বারা শেল্টার নির্মাণ করা) নির্মাণের মতো সুবিধা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

আজ ব্যাংককে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক মানবিক অংশীদারিত্ব সপ্তাহ-২০২৫ এর আন্তর্জাতিক সেমিনারের আলোচনায় এই আহবান উঠে আসে।

কোস্ট ফাউন্ডেশন ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে। সার্বিক সমন্বয়ে এডিআরআরএন, সিডব্লিউএসএ, ইকভা এবং ইউএন ওচা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

এই সেমিনারটি “রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং নাগরিকত্ব অধিকার সহজতর করা” শীর্ষক হাইব্রিড ফরম্যাটে আয়োজন করা হয় এবং এতে এশিয়া প্যাসিফিকসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক প্রতিনিধি যুক্ত হন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন এর যুগ্ম পরিচালক মো. ইকবাল উদ্দিন।

ক্তাদের মধ্যে ছিলেন আল্টসিয়ান-বার্মা'র ডেবি স্টোথার্ড, এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্ক এর হাফসার তামিজুদ্দিন, কক্সবাজার এনজিও প্ল্যাটফর্মের মার্কো মিলজেভিক ও আমির হোসেন, স্থিতিস্থাপক শরণার্থী জোট-এর খায়ের উল্লাহ, এডিআরআরএন–এর তাকাশি কোমিনো, টিয়ারফান্ড এশিয়ার সঞ্জীব ভাঞ্জা, আগ্রযাত্রা বাংলাদেশের হেলাল উদ্দিন এবং কানাডার রোহিঙ্গা মাইয়াফুইনর সহযোগী নেটওয়ার্ক-এর ইয়াসমিন উল্লাহ।

মূল বক্তব্যে মো. ইকবাল উদ্দিন বলেন যে, ১৯৮২ সালে মিয়ানমার বেআইনিভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে এবং এ নাগরিকত্ব অবিলম্বে পুনর্বহাল করা জরুরি।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা পুরোপুরি রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয় এবং এর জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সব পক্ষের একটি সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মুল চাহিদা পূরণ ও তাদের মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানো এখন জরুরি। অন্য বক্তারাও মিয়ানমার জান্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও পূর্ণ নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে জরুরি রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

ডেবি স্টোথার্ড বলেন, রোহিঙ্গাদের মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে হলে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মূল কারণগুলোকে সমাধানের আওতায় আনতে হবে এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়াই এর প্রথম শর্ত।

হাফসার তামিজুদ্দিন বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় ফের তুলে এনেছে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক বর্ণনা তৈরি করা হচ্ছে যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। তিনি রোহিঙ্গাদের শিক্ষার সুযোগ ও মৌলিক সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

মার্কো মিলজেভিক বলেন, এনজিও প্ল্যাটফর্ম নিরলসভাবে রোহিঙ্গাদের অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে; রোহিঙ্গা সংকট এখন বৈশ্বিক ইস্যু, তাই এর সমাধানে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি জরুরি।

খায়ের উল্লাহ রোহিঙ্গাদের জন্য ট্রাভেল পাস ও অবাধ চলাচলের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ইয়াসমিন উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গারা ব্যর্থ হলে আমাদের বৈশ্বিক মানবিক উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। তিনি সমালোচনার সুরে বলেন, মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়ার পরিবর্তে বাণিজ্যই বাড়ছে।

তাকাশি কোমিনো বলেন, বিভিন্ন দেশ নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও প্রত্যাবাসন প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে, যা গভীরভাবে লজ্জাজনক।

সঞ্জীব ভাঞ্জা বলেন, রোহিঙ্গা অধিকার ও প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রচারণা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং ইস্যুটিকে সক্রিয় রাখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বৈশ্বিক সমস্যা এবং এর সমাধানে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও যৌথ দায়বদ্ধতা অপরিহার্য।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.