শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-12-10 19:46:57 BdST
টাঙ্গাইল-৫ আসনেদলের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রচারণায় ফরহাদ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৮টি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ আসন (সদর) সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আসনটি জেলার প্রাণকেন্দ্র। সকাল হলেই কাজের তাগিদে বা নানা প্রয়োজনে বাকি ৭টি আসনের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ টাঙ্গাইল শহরে আসেন।
টাঙ্গাইল-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। টুকু মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের জনসাধারণ। টুকু মনোনয়ন পাওয়ায় খুশি হয়েছে তরুণ প্রজন্মও। অসহায় মানুষগুলো দু'হাত তুলে দোয়া করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায়।
তবে টাঙ্গাইল- ৫ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল মনোনয়ন না পেয়ে নানা অপপ্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি তারেক রহমানের ঘোষিত ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফরহাদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সাথে গোপন বৈঠক, আওয়ামী লীগের পলাতক শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া এবং দলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠেছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল দলীয় মনোনয়ন পেতে সভা-সমাবেশ ও গনসংযোগ করে চলেছেন। এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদল-যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ত্যাগী এবং জেল-জুলুমের শিকার সুলতান সালাউদ্দিন টুকু দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ব্যাপক গনসংযোগের পাশাপাশি বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রমেরামতের ৩১ দফা দিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছে। এই দু'জন ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খন্দকার আহমেদুল হক শাতিলসহ বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে কাজ করেছেন।
এই অবস্থায় গত ৪ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টাঙ্গাইল-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম ঘোষনা করেন। এরপর থেকেই টুকুর পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে ধানের শীষ প্রতীকের জন্য ব্যাপক প্রচারনা ও গনংযোগ চালাচ্ছে। টাঙ্গাইল সদর আসনে টুকুকে জয়ী করতে দিনরাত মানুষের কাছে যাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। উঠোন বৈঠক থেকে শুরু করে সভা সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন টুকু ও তার সমর্থকেরা।
এদিকে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ফরহাদ ইকবাল অনেকটা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সভা-সমাবেশে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে দলের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ফরহাদ ইকবাল দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়। নেতাকর্মীদেরকে বেগম জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিলের কথা বলে মুখে কালো কাপড় দিয়ে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মিছিল করা হয়।
এভাবে ধোঁকা দেয়ার ঘটনায় দলের সাধারন নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সুষ্টি হয়। দোয়া মাহফিল শেষে ফরহাদ ইকবাল মিডিয়ার সামনে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সময়ে এভাবে মনোনয়ন ঘোষনা সঠিক হয়নি। এতে নাকি নেতাকর্মীদের মনে কষ্ট লেগেছে। টুকুর মনোনয়ন বাতিল করে তাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করেন।
এদিকে, টাঙ্গাইলের মানুষ ফরহাদের কটুক্তিকর ভাষার বিচার দাবি করেছে। শুধু তাই নয়, তারা বলেছেন যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সব সময় বলে আসছেন প্রার্থী যাকেই দেয়া হোক; তার জন্য কাজ করতে হবে। যাকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়েছে, তার বিরোধিতা করলে, ধানের শীষের বিরোধিতা করা হবে। কিন্তু তারেক রহমানের এই আদেশ কোনক্রমেই মানতে নারাজ ফরহাদ ইকবাল ও তার সমর্থকেরা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ফরহাদ ইকবাল দলের স্বার্থ ভুলে গিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছে।
সূত্র মতে, গত সাড়ে ১৫ বছর টাঙ্গাইল সদর আসন আওয়ামী লীগের দখলে ছিলো। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে হাত মিলিয়ে ফরহাদ ইকবাল বেশ ভালোই ছিলেন। এর বিনিময়ে বর্তমানে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং তাদের সমর্থনেই ফরহাদ বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী টুকুর বিরোধিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, টুকুর মনোনয়ন ঘোষনার পরের দিনই ফরহাদ ইকবাল সদর আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আহসান হাবিব মাসুদের সাথে গোপন বেঠক করেন। সুত্র জানায়, ওই দিন সকালে শহরের বাগান বাড়ি এলাকায় ফরহাদ ইকবালের বাসার দোতলায় এই বৈঠক অনুষ্টিত হয়। বৈঠকে ফরহাদ ইকবালকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকার জন্য বলা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফরহাদ ইকবাল অবশ্য এই ঘটনাকে অস্বীকার করে একে গুজব বলে দাবি করেছেন অনেকের কাছে।
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) একটি গুরুত্বপুর্ন আসন। এই আসনে সুলতান সালাউদ্দিনের মত একজন হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় একদিকে যেমন সাধারন মানুষ বেজায় খুশি, তেমনি নেতাকর্মীরাও উৎফুল্ল। কারন টাঙ্গাইলের উন্নয়নের জন্য টুকুর কোন বিকল্প নেই। তবে টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত আওয়ামী লীগের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অখুশি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্র এই অংশটি হাসিনার গত সাড়ে ১৫ বছরের শত শত কোটি টাকা কামিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনার পতন হলে চিহ্নিত এসব সন্ত্রাসীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এসব সন্ত্রাসীদের একটাই ভয় আর তা হলো, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এমপি হলে টাঙ্গাইলে তারা আর কোন দিন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পারবে না। এছাড়া চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, কিশোরগ্যাং সহ সকল অপকর্মের বাঁধা হতে পারেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তাছাড়া আসনটিও বিএনপি ফিরে পাবে খুব সহজেই।
একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, এসব কারনে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ওই সন্ত্রাসীদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন ফরহাদ ইকবাল। কারন তাদের জন্য ফরহাদ ইকবাল তুলনামুলক নিরাপদ একজন প্রার্থী। আর সেই কারনে প্রথম থেকেই ফরহাদ ইকবালের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে আওয়ামী লীগের এই পক্ষটি। মোটা অংকের অর্থ দিয়েই তারা সহযোগিতা করছে এমন খবর অনেক আগে থেকেই আলোচিত ছিল। আওয়ামী এই দোসররা এখনও সক্রিয় আছে টাঙ্গাইলে।
এদিকে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মনোনয়ন পাবার পর অপর প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালের সমর্থক বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী টুকুর পক্ষে প্রচারে নেমেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিবে বলে আশা করছে টুকু সমর্থকরা।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
