March 28, 2024, 11:28 pm


সামি

Published:
2019-12-02 04:01:32 BdST

হরেক রকম পেঁয়াজ; নাম-দাম জানেন?


এফটি বাংলা

পেঁয়াজ নেই, এমন কোন রান্নাঘর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ কোন রান্না শুরু করার আগে, কড়াইতে তেল দেয়ার পরপরই সাধারণত যে উপাদানটি ব্যবহার করা হয় সেটি পেঁয়াজ।

পেঁয়াজ আসলে কোন সবজি নয়। এটি একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি এমন একটি উদ্ভিদ যা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উৎপাদিত হয়। তবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় ভারত এবং চীনে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম জামাল উদ্দিন বলেন, `সেসব দেশগুলোতেই প্রধানত পেঁয়াজ হয় যেখানে বেশি বৃষ্টি হয় না। পাশাপাশি হাল্কা শীত থাকে। সেজন্যই বাংলাদেশে পেঁয়াজ হয় শীতকালে। সেসময় দামও কম থাকে`।

মিশরের পেঁয়াজ


বৈশিষ্ট্যঃ বড় আকারের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে মিশর থেকে। উদ্ভিদবিজ্ঞানি ফজলে কবির বলেন, ‘সাধারণত গাছের গোড়ায় পেঁয়াজ হয়, যা মাটির নিচে থাকে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দুনিয়াজুড়ে এ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে মিশরে ভিন্ন এক ধরনের পেঁয়াজ রয়েছে যা গাছে ধরে! অর্থাৎ এ পেঁয়াজ গাছের গোড়ায় না হয়ে আগায় ধরে।

এ ধরনের পেঁয়াজকে ‘ট্রি অনিয়ন’, ‘ইজিপশিয়ান ট্রি অনিয়ন’, ‘টপ অনিয়ন’, ‘উইন্টার অনিয়ন’ ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম ‘আলিয়ুম প্রলিফারাম’। সাধারণ পেঁয়াজের মতোই গাছ হয় ‘টপ অনিয়ন’ এর। গাছের প্রতিটি পাতার ওপরে ফুল হয় সাধারণ পেঁয়াজের মতো। পরে সেই ফুলটি ধীরে ধীরে পেঁয়াজে পরিণত হয়’।

দেখতে চ্যাপ্টা গোলাকার এই পেঁয়াজের রঙ লাল ও কালচে লাল মতো। পেঁয়াজের খোসা খুবই পুরু। তেলে ছেঁড়ে দিলে বেশ সময় নেয় বাদামি আকার ধারণ করতে। এর স্বাদ, ঝাঁজ কম। যেখানে দুটো দেশি পেঁয়াজ দিলে ঘ্রাণ আসে, সেখানে এই পেঁয়াজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হয়।

দামঃ লাল ও কালচে লাল রঙের এই পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। সেক্ষেত্রে একেকটি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। যা ওজনে প্রায় ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। এ রকম বড় আকারের তিনটে পেঁয়াজের ওজন মিলিয়ে এক কেজি হয়। কখনও আবার দুইটা পেঁয়াজ মিলিয়েই হয় এক কেজি।

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের বিক্রেতা রশিদ মিয়া বলেন, ‘প্রতি বস্তায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের বড় আকারের কিছু পেঁয়াজ থাকে। তবে বেশিরভাগ পেঁয়াজই ২০০ থেকে ২৮০ গ্রাম ওজনের। তাছাড়া মিশরের পেঁয়াজ এখন বেশিরভাগ আড়তেই নাই। আমদানি নাই, তাই পেয়াজও নাই’।

চীনের সাদা ও হলুদ পেঁয়াজ




বৈশিষ্ট্যঃ লাল রং ছাড়াও হলুদ রঙের গোলাকার পেঁয়াজ আসছে চীন থেকে। একেকটি পেঁয়াজের ওজন ১২০ থেকে ৫০০ গ্রাম। দেখতে অনেকটা আপেলের মতো। আপেল আর পেঁয়াজ একসাথে রাখলে অনেকে হয়তো বুঝতেই পারবেনা কোনটা পেঁয়াজ কোনটা আপেল। এ ধরণের পেঁয়াজে ঝাঁজ কম হয়। সালাদ হিসেবেই বেশি ব্যবহার করা হয় এই সাদা পেঁয়াজ।

দামঃ চীনের এই পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা। গ্রাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি আড়তের চীনের একটি সাদা পেঁয়াজ ওজন করলে দেখা যায় ৪৫০ গ্রাম। এ ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ কম।

এই দোকানের স্বত্বাধিকারী রতন মজুমদার বলেন, ‘বড় আকারের পেঁয়াজগুলো চীন থেকে এসেছে। একেকটির ওজন প্রায় আধা কেজির মতো। বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, দুই দিন আগে বড় আকারের ওই পেঁয়াজ একই দোকানে কেজিপ্রতি ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। দুই দিনের ব্যবধানে একলাফেই কেজিতে ৭০ টাকা বেড়েছে। এদিকে আশপাশের অন্য দোকানে ২২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মিয়ানমারের পেঁয়াজ

 

বৈশিষ্ট্য ও দামঃ মিয়ানমারের পেঁয়াজ ছোট আকারের দেখতে। অনেকটা দেশি পাবনার পেঁয়াজের মতো। রঙ গাঢ় লাল। স্বাদও অনেকটা দেশি পেঁয়াজের মতো। পেঁয়াজের খোসা ও মাংসল অংশ পাতলা। এর মধ্যে পানি থাকে বেশি। তাই দ্রুত পচনশীল। মায়ানমার থেকে তাই আনতে আনতে বেশিরভাগ পেঁয়াজ পচে যায়। ১৫ থেকে ১৬ টি পেঁয়াজ এর সমান চীন বা মিশরের একটি পেঁয়াজ। দাম প্রতি কেজি ১৯৫ টাকা।

ভারতীয় পেঁয়াজ


বৈশিষ্ট্যঃ ভারত রপ্তানি বন্ধের আগে মাঝারি আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল আড়তগুলোতে। মাঝারি আকারের এই পেঁয়াজের রঙ্ খানিকটা হালকা বেগুনি ধরণের। দেশি পেঁয়াজের তুলনায় এর ঝাঁজ কম, খোলস ও মাংসল অংশ মোটা। এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই দীর্ঘদিন সংগ্রহ করা যায়।

দামঃ ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ২১০ থেকে ২২০। এখন হাতে গোনা কিছু বাজারে এই ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যায়।

পাকিস্তানি পেঁয়াজ

বৈশিষ্ট্যঃ পাকিস্তানি পেঁয়াজ আকারে মাঝারি। দেখতে হালকা লাল রঙের। দেখতে খানিকটা ভারতীয় পেঁয়াজের মতো হলেও উপরের দিকের বোটাটা (পাতার অংশ) একটু লম্বা করে কাটা। একইসাথে খোসা ও মাংসল অংশ ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় পাতলা। এই পেঁয়াজে কিছুটা ঝাজ রয়েছে।

দামঃ বাজারে এখন পাকিস্তানের মাঝারি আকারের যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর একেকটির ওজন ২০ থেকে ২২ গ্রাম। এ হিসাবে পাকিস্তানের ১০ থেকে ১৬টি পেঁয়াজের সমান ওজন চীন বা মিসরের একটি পেঁয়াজের। পাকিস্তানের পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

তাছাড়া কয়েকটিন আগে আসা পাকিস্তানের পেঁয়াজের পাইকারি মূল্যে কেজি প্রতি ছিল ১৭০ টাকা। খুচরা ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা।

দেশি পেঁয়াজ


বৈশিষ্ট্য ও দামঃ দেশি পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে তিন ধরণের পেঁয়াজ। পাবনা, ফরিদপুর আর মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ। ফরিদপুরের পেঁয়াজ একদম গোলাকার; দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা, পাবনার পেঁয়াজ চ্যাপ্টা গোল মতো; দাম প্রতি কেজি ২২০ টাকা, মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ হালকা চ্যাপ্টা কিন্তু অতি লাল রঙ; দাম প্রতি কেজি ২১০ টাকা। দেশি পেয়াজে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। ঝাজ বেশি থাকে। পেঁয়াজের খোসা ও মাংসল অংশ পাতলা।

সস, গ্রেভি, ঘন ঝোল করতে এ পেঁয়াজের ব্যবহার বেশি। পেঁয়াজ রান্নায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি কাঁচা খাওয়া যায়। গন্ধের কারণে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোতে লাল পেঁয়াজের কদর বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে লাল পেঁয়াজ বেশি ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যবাহী সব রান্নায় এর ব্যবহার দেখা যায়। 

পুষ্টিবিদ চৌধুরী তাসনিম বলেন, পেঁয়াজ আসলে মশলা জাতীয় খাবার। এর মূল উপাদান পানি, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার। তবে পেঁয়াজে পানির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি-প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও পুষ্টিগুণ বলতে গেলে, ভিটামিন সি, বি এবং পটাসিয়াম থাকে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের পেয়াজে এ উপাদানগুলো পুরোপুরি থাকে।

দেশে এই মশলা জাতীয় খাবারটি জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার একটি অন্যতম কারণ, উৎপাদন কম হওয়া। এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর আবুল হাসনাত বলেন, দেশি পেঁয়াজ উৎপাদন কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, কৃষকরা ভালো বীজ পাচ্ছেনা। যার কারণে পেঁয়াজের কোয়ালিটি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া ভৌগোলিক পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে শীত থাকে এবং কম বৃষ্টি হয়, সে পরিবেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হয়। দেশে দিনদিন শীতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তাই দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন আরও কমবে বলে আমি মনে করি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা