September 19, 2024, 10:09 pm


সামি

Published:
2019-12-30 03:05:27 BdST

রাজনীতিতে ব্যতিক্রমী নাম তাপস


এফটি বাংলা

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে দু’জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা উত্তরে গতবারের বিজয়ী প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বহাল থাকলেও ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থীতায় পরিবর্তন এনেছে আওয়ামী লীগ। চমক হিসেবেই এই পরিবর্তন এসেছে। দক্ষিণে মেয়র হিসেবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি শেখ ফজলে নূর তাপসকে।

রাজনীতিতে শেখ ফজলে নূর তাপসের আগমন, উত্থান একেবারে ‘এলাম-দেখলাম-জয় করলাম’ এর মতো। নানা কারণেই শেখ ফজলে নুর তাপস বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র।

গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার বাইরে আলাদা ব্যক্তিত্ব, স্বাতন্ত্র এবং একটি ক্লিন ইমেজ প্রতিষ্ঠা করে রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। এ কারণেই শেখ হাসিনা হয়তো তাকে মেয়র হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের জন্য বিবেচনা করেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

শেখ ফজলে নূর তাপস কেন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ, এর উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যায় যে, অনেকগুলো কারণেই তিনি রাজনীতিতে ব্যতিক্রম।

প্রথমত; শেখ ফজলে নূর তাপসের রাজনীতিতে উত্থানপর্ব হয়েছিল ওয়ান ইলেভেনের সময়। তিনি শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র কিংবা শেখ হাসিনার আত্মীয়, এই সূত্রে রাজনীতিতে আলোচিত হননি বা পাদপ্রদীপে আসেননি।

ফজলে নূর তাপস পাদপ্রদীপে এসেছেন আওয়ামী লীগের সংকটের সময়। যখন শেখ হাসিনাকে ওয়ান ইলেভেনে সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমেদের সরকার দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে এবং ব্যারিস্টার রোকনুদ্দীন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মতো শেখ হাসিনার ডাকসাইটে ব্যক্তিগত আইনজীবীরা তার মামলা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং প্রায় নবীশ আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপস হাল ধরেন। অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীদের সহায়তা নিয়ে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। সেই সময়ই শেখ ফজলে নূর তাপস আলোচনায় আসেন।

দ্বিতীয়ত; ২০০৮ এর নির্বাচনে ধানমন্ডি আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার পর তাপস ক্ষমতার দাপট, প্রভাব কিংবা শেখ হাসিনার আত্মীয় এসব পরিচয় ব্যবহার না করে খুব নীরবে নিভৃতে প্রায় আলাদাভাবে নিজেকে সংগঠিত করেন এবং এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তৃতীয়ত; তাপস ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকার এমপি নির্বাচিত হলেও কখনও তাকে কোনো এলাকায় প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য কিংবা কোনও স্কুল-কলেজে ভর্তি বানীজ্যের সঙ্গে কোনোরকম সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়নি। সমস্ত দুর্নীতি এবং এমপিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগগুলো উঠতে পারে সেগুলো থেকে তিনি নিজেকে সযত্নে দূরে রেখেছেন।

চতুর্থত; পেশার ক্ষেত্রে তাপস নিজেকে একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করেছেন। শুধুমাত্র পেশাগত ক্ষেত্রে তিনি স্বচ্ছতার পরিচয় দেননি, বরং আয়কর প্রদানের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের হটিয়ে তিনি প্রথম সারির একজন আয়করদাতা আইনজীবী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে একটা নজির স্থাপন করেছেন।

পঞ্চমত; তাপস তিনবারের এমপি, কিন্তু এমপি হিসেবে তার বিরুদ্ধে কখনই কোনোরকম দুর্নীতি, অপকর্ম, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি।

ষষ্ঠত; শেখ ফজলে নূর তাপসকে দেখা গেছে অকপটে সত্য কথা বলতে। বিভিন্ন সংকটে বা বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি অকপটে নিজের কথাটা বলেছেন। সেই কথাগুলো হয়ে উঠেছে সাহসী এবং জনগণের কন্ঠস্বর।

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ যখন শুদ্ধি অভিযান শুরু করে, তখন শেখ ফজলে নূর প্রথম উচ্চারণ করেন যে সম্রাটকে এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ছিলেন। ধারণা করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠস্বর হিসেবেই তাপস এই মন্তব্য করেছিলেন।

এরপর তিনি বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি এবং আব্দুল হাই বাচ্চুকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না সেই প্রশ্নও তোলেন। এটিও সাধারণ মানুষের কাছে সমাদৃত হয়। এরপর তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। এ সমস্ত বক্তব্য আসলে সাধারণ মানুষের মনের কথা। সেই কথাগুলো তাপস উচ্চারণ করেছেন। যে কারণে রাজনীতিতে তিনি একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র।

রাজনীতিবিদ মানেই আমরা বুঝি বিভিন্ন মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করা। কিন্তু তাপসকে এসব থেকে দূরে থাকতে দেখা গেছে। মূলত নিভৃতচারী, খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা এবং যে কথাটি বলেন সে কথাটা বিশ্বাস থেকে বলা- এমন একটি ভাবমূর্তি তিনি জনগনের মনে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

পেশায় একজন আইনজীবী কিন্তু রাজনীতির প্রতি সততা এবং নিষ্ঠা এবং জনগনের জন্য দায়িত্বশীল আচরণের মতো গুণগুলোই তাকে রাজনীতিতে ব্যতিক্রম একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত করেছে।

সাম্প্রতিক সময় রাজনীতি মানেই যখন হচ্ছে এমপি হয়ে নিজেকে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা কিংবা নিজের আখের গোছানো। তখন শেখ ফজলে নূর তাপস একজন সৎ, বিতর্কহীন, নির্ভীক, সাহসী এবং তরুণের কন্ঠস্বর হিসেবে জনগনের সামনে উপস্থাপিত হয়েছেন। আর এজন্যই তিনি একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা