September 20, 2024, 4:22 am


সামি

Published:
2020-03-12 03:02:30 BdST

গতিহারা বে-টার্মিনাল প্রকল্প


এফটি বাংলা 

চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা প্রজেক্ট বে-টার্মিনাল নির্মাণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রকল্প গ্রহণের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও অনেকটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ এই প্রকল্প। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

প্রকল্প উদ্বোধনের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কবে থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে বে-টার্মিনাল নিয়ে নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা) করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রকল্প ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। 

চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে প্রকল্পটি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। যদি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে এতদিনে দৃশ্যমান হতো বে-টার্মিনাল।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জার্মান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কে এস কনসালটেন্টস লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে।

সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে করা ওই সমীক্ষার প্রতিবেদনে প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পিপিপি ভিত্তিতে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। 

২০১৫ সালে হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এর করা স্ট্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৬ সালে ২.৪ মিলিয়ন টিউস (এক টিউস=২০ ফুট সাইজের কন্টেইনার), ২০২০ সালে ২.৭ মিলিয়ন টিউস, ২০২৫ সালে ৪.৪ মিলিয়ন টিউস এবং ২০৩০ সালে ৫.১ মিলিয়ন টিউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করার কথা। 

মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২.৭ মিলিয়ন টিউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করার কথা থাকলেও ২০১৯ সালেই চট্টগ্রাম বন্দর তিন মিলিয়নেরও বেশি টিউস কন্টেইনার হ্যান্ডেল করে। যাতে সক্ষমতার চেয়েও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডেল করতে হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে।

হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এর মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে সক্ষমতার তুলনায় কন্টেইনারের চাপ বেশি থাকায় বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাণিজ্যের খরচ বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য ২০১৪ সালে সরকার বে-টার্মিনাল প্রকল্প হাতে নেয়।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা হালিশহর এলাকার সাগর উপকূলে নির্মিত হবে বে-টার্মিনাল। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০ কোটি ডলার প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অপারেশনাল এরিয়ার প্রায় ছয় গুন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাঁচ হাজার কন্টেইনার বহন ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে না। 

৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা আরও এক হাজার ৬০০ একরসহ দুই হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পটিকে সমাধান ভেবে শুরুতে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা বে-টার্মিনাল নির্মাণে টাইম লাইন চাই। বছরের পর বছর ধরে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। টাইম লাইন না দিলে আমরা কোনোভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছি না। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, একবার সাড়ে ছয় কোটি টাকা দিয়ে বে-টার্মিনালের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। আবার ২০ কোটি টাকা খরচ করে কিসের ফিজিবিলিটি স্টাডি?

তিনি বলেন, ''বে-টার্মিনাল প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগকারী অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি ও নয়ছয় করার নীলনকশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতাঘনিষ্ট লুটেরা ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী প্রবেশ করে জাতীয় সম্পদ লুটপাটের অশুভ সূচনা করবে।''  

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ফোকাল পার্সন চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম জানান, ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে বে-টার্মিনাল ডিটেইল ফিজিবিলিটি স্টাডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে শুরু হয়ে ২০২১ সালের মার্চে শেষ হবে সম্ভাব্যতা যাচাই।

সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২১টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্য থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হবে। এরপর শুরু হবে ফিজিবিলিটি স্টাডি। পূর্বের ফিজিবিলিটি স্টাডি অনুযায়ী বে-টার্মিনাল প্রকল্পের বাস্তবায়নে যে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিলো সেটি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বে-টার্মিনাল নির্মাণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনাপত্তিপত্র নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। প্রায় ১৬ মাস পরে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর অনাপত্তিপত্র হস্তান্তর করে সিডিএ। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েও শুরু হয় জটিলতা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পরিবেশ অধিদপ্তর অনাপত্তি দেওয়ার পর বেসরকারি জমি অধিগ্রহণ নিয়ে পুনরায় বিপত্তি বাধে। এতে কেটে যায় আরও দুই বছর। যদিও ভূমি নিয়ে জটিলতা এখন আর নেই।

বন্দর সূত্র জানায়, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ৬৮ একর জায়গায় বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কন্টেইনার ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেন্ট প্রপোজল) অনুমোদন না দেওয়ায় এই প্রকল্পের কাজ ও শুরু করা যাচ্ছে না।  

বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম বলেন, কন্টেইনার ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গত বছরের ৩০ মে নৌ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই ডিপিপি'র অনুমোদন পাওয়া যাবে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পে নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রক্রিয়া চলছে। বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলেও বে-টার্মিনাল প্রকল্পে কোনো অনিশ্চয়তা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা