September 20, 2024, 4:25 am


Siyam Hoque

Published:
2020-03-12 17:44:15 BdST

যে কৃষকেরা সরকারি কাগজে আছেন, বাস্তবে নেই


গ্রামটিতে লুৎফর রহমান, আবদুল কাদের, আবদুল মান্নান, নুরুল হুদা, কাশেম ফকির নামের মানুষগুলোর অস্তিত্ব মেলেনি। এ ধরনের প্রায় ৯০ জনের নাম রয়েছে। গ্রামবাসী বলছেন, এসব নামের মানুষ তাঁদের গ্রামের নেই। ২–৪ জনের নাম মিললেও বাবার নামে মিল নেই।

অথচ অস্তিত্বহীন এই কৃষকেরা এবার সরকারি গুদামে উচ্চমূল্যে ধান বিক্রি করেছেন। তাঁদের নামে জাতীয় পরিচয়পত্র, কৃষক কার্ড, এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত খোলা হয়েছে। গুদাম থেকে তাঁদের ধান বিক্রির মূল্য হিসাবে বিলও পরিশোধ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের পার শ্রীরামপুর গ্রামে। এবার পার শ্রীরামপুর গ্রামের ১৩১ জন কৃষকের নামে ধান বিক্রির কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

ধান ক্রয়ের নিয়ম সম্পর্কে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছেন, প্রথমে কৃষকেরা আবেদন করবেন। সেই আবেদনগুলো থেকে লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত কৃষক নির্বাচন করা হবে। এরপর কৃষক স্লিপ নিয়ে গুদামে যাবেন। সেখানে তাঁরা ধানের কোয়ালিটি (গুণাগুণ) দেখাবেন, তারপর ধান দেওয়ার অনুমতি পাবেন। এর অনুমতির আগে তাঁকে কৃষক কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে আসতে হবে। সঙ্গে থাকবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর। এগুলোর পর কৃষক ধান বিক্রি করবেন। 

উপজেলা প্রশাসন লটারির পর যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর করা তালিকা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পার শ্রীরামপুর গ্রাম। এই গ্রামে ১৩১ জনের নাম রয়েছে, যাঁরা ধান বিক্রি করতে পারবেন। তাঁরা লটারিতে বিজয়ী হয়েছেন। ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লটারির মাধ্যমে যে তালিকা করা হয়েছে, সেই তালিকার ১৩১ জনের মধ্যে প্রায় ৯০ জনের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। নামগুলো ধরে ধরে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এ এস নামে তাঁদের গ্রামে কোনো লোক নেই। নান্টুর ছেলে সেকেন্দার আলী, কওছারের ছেলে আবদুল মান্নান, ইছাহক আলীর ছেলে আবদুর রহমান, আবদুল মালেকের ছেলে রবজেল হোসেন, আনছার মণ্ডলের ছেলে আজিবর রহমানসহ অসংখ্য নামের কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, তাঁরা নামগুলো শুনে কিছুটা
আশ্চর্য হচ্ছেন। 

এদিকে কৃষি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই গ্রামে ১২১ জন কৃষকের কৃষক কার্ড রয়েছে, যাঁদের মধ্যে ওই ৯০ জনের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, তালিকা করার সময় দ্রুত সবকিছু করায় যাচাই করা সম্ভব হয়নি। একটি তালিকা তাঁর সামনে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছিল, তিনি স্বাক্ষর করেছেন। তালিকার সঙ্গে কৃষক কার্ডের মিল না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নামের মিল না থাকলে কার্ড নম্বরের মিল কীভাবে থাকবে।

এসব কৃষকের নামে অগ্রণী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখায় অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে। এই অ্যাকাউন্ট করতে প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষক কার্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হয়েছে। তারপর তাঁদের অ্যাকাউন্ট হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস জানান, তাঁরা অ্যাকাউন্ট করার সময় কাগজপত্র নিয়েছেন। কেউ ভুয়া কাগজ দিলেন কি না, সেটা খাতিয়ে দেখছেন।

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, সব মানুষের নাম তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তা ছাড়া অনেকের ডাকনাম রয়েছে। খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ খাদ্যগুদাম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যখন কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন, তখন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। যে কারণে অনেক কিছু দেখা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া যাচাই-বাছাই কমিটির তালিকা ধরে তাঁরা ধান কিনেছেন। এখানে তাঁদের বেশি একটা করার ছিল না।

ইউএনও সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেখানে কথা বললে বিস্তারিত জানা যাবে। আর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, তিনি ভোটার তালিকা যাচাই করে ওই নামগুলো
পাননি। বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে ইউএনওকে জানিয়েছিলেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা