September 19, 2024, 11:04 pm


সামি

Published:
2020-03-16 20:53:56 BdST

মোদির বানানো সিংহাসনে বসলেন শেখ হাসিনা


যে সার্ককে গত পাঁচ বছর ধরে কার্যত অকার্যকর রেখেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, সেই সার্ককেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন মঞ্চ হিসেবে। সার্কের মাধ্যমেই তিনি আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আবার অধিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন। আর এজন্যেই তিনি উপলক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন করোনাভাইরাস ইস্যুকে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মোদি বিমসটেকের আলোচনা না ডেকে সার্কের সরকারপ্রধানদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেছিলেন। তার আশা ছিল দুটো। প্রথমত; ভারতে যে তার টলটলমান ইমেজ, সেই ইমেজ পুনরুদ্ধার করা। আর দ্বিতীয়ত; অবিসাংবাদিত আঞ্চলিক নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়া।

উল্লেখ্য, এখন সার্ক সম্মেলন হওয়ার কথা পাকিস্তানে। কিন্তু পাঁচ বছর আগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার আগে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে ঐ সম্মেলনে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানও সার্ক সম্মেলনে যেতে অপারগতা জানায়। ফলে সার্ক সম্মেলন আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

পাঁচ বছর ধরে আঞ্চলিক সহযোগিতার এই সংগঠনটি প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে। নরেন্দ্র মোদি সার্কের থেকে বিমসটেককে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বিমসটেককে আঞ্চলিক সহয়তা ক্ষেত্রে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নাগরিকপঞ্জী, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যখন নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী এবং যখন এই অঞ্চলে তার বিরুদ্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাজনীতিকে উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে, তখন তার ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন সার্ককে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আয়োজনে সার্ক নেতাদের এই ভিডিও কনফারেন্সে না বলেনি পাকিস্তান। বরং তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। পাকিস্তানই মোদির কাছ থেকে সিংহাসন কেড়ে নিয়ে সেই সিংহাসনে বসিয়ে দিল শেখ হাসিনাকে।

নরেন্দ্র মোদি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একসাথে সার্ক দেশগুলোকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। মোদি তার বক্তব্যে একটি তহবিল গঠন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেয় আফগানিস্তান।

স্বাভাবিকভাবেই সার্ক অঞ্চলে ভারতের মতো বিত্তশালী দেশ কটা আছে? আর বাংলাদেশের মতো উদার দেশও বা কটা আছে? মজার ব্যাপার হলো যে, সার্কের সরকারপ্রধানদের করোনা নিয়ে কনফারেন্সে সবচেয়ে প্রশংসিত হয় শেখ হাসিনার বক্তব্য।

কার্যত নরেন্দ্র মোদির আয়োজিত এই সম্মেলনে সবটুকু আলো কেড়ে নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তিনি সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া, অভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা এবং এই ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য পারস্পারিক আলাপ-আলোচনার যে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন তা লুফে নেয় পাকিস্তান। পাকিস্তান বাংলাদেশের প্রস্তাবকে সমর্থন করে।

অন্যদিকে সার্কের সরকারপ্রধানরা শেখ হাসিনার অবস্থান, শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গী এবং শেখ হাসিনার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হলেও দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সার্কের নেতারা আজ মিলিত হন। সার্ক নেতাদের এই পারস্পারিক যোগাযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বিশ্বনেতা এবং আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আবির্ভুত হন।

তিনি প্রমাণ করেন যে, দেশের স্বার্থের চেয়ে আঞ্চলিক স্বার্থ বড়। এই অঞ্চল যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, তাহলে শুধু করোনা নয়, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যে সম্ভব, সে ব্যাপারটাই তিনি স্পষ্ট করেন।

দৃশ্যতঃ শেখ হাসিনা সার্ককে কার্যকর এবং অর্থবহ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, যেটি ছিল সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর প্রাণের দাবি। আর রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় তিনি যে এখন বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন, এই সার্ক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তা আবার প্রমাণ করলেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা