April 29, 2024, 10:08 pm


মুহাম্মদ মামুন শেখ

Published:
2023-05-04 03:49:19 BdST

সব সূচক ও পরিসংখ্যান মতে আগামীতেও শেখ হাসিনার সরকার


মহান মে দিবসের সকালটা বেশ তুমুল আলোড়নে শুরু হলো। আমাদের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো' নেতৃত্ব প্রয়োজন।

তার বলাটা ডিপ্লোমেটিক হলেও বস্তুত শেখ হাসিনার মত নেতৃত্ব শুধু শেখ হাসিনাই দিতে পারেন তাও কিন্তু তাঁদের নখদর্পনে।

তুমুল আলোড়নের কারণ অবশ্য আপা তৈরি করে দিয়েছেন। অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক। প্রায় একযুগ আগে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল তবে তা বেশিদিন নেতিবাচক থাকেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দায়িত্ব নিয়ে এখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এতটা ইতিবাচক করেছেন যে সেই পদ্মা সেতুর ছবি এখন থেকে বিশ্বব্যাংক ভবনে থাকবে।

পশ্চিমা মোড়লদের ইগোতে যদি একটু দেশি ঘি ঢালা যায় তবে মন্দ কী। বিশ্ব ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠান যখন নিজের স্বতন্ত্রতা হারিয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করে তখন তা একটা জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব ফেলে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে সেই প্রভাব বলয় একমাত্র শেখ হাসিনাই ভাঙ্গতে পেরেছেন। ১লা মে'র সকালের তুমুল আলোড়ন আসলে সব পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিটি নিয়ে। একটা ছবি কত কথা বলে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে সো কলড তৃতীয় বিশ্বের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার।

শেখ হাসিনা-ম্যাজিকেই গত এক যুগে বদলে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, নারীর ক্ষমতায়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্ব নেতৃত্বকে চমকে দিয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যখনই আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছে, তখনই বাংলাদেশের অগ্রগতির গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আর দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিগত ১৪ বছরের ধারাবাহিক নেতৃত্বের কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ এখন ৪২তম রপ্তানিকারক ও ৩০তম আমদানিকারক দেশ। অগ্রসরমাণ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, ওপরে আছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে এসে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছিলেন, ‘শুধু বলার জন্য নয়, দারিদ্র্য বিমোচনে সত্যিই আজ বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তান থেকে দ্বিগুণ এবং অতিসম্প্রতি ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। ভারত থেকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২৮০ ডলার বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশের একজন নাগরিক ভারতের একজন নাগরিক থেকে ২৩ হাজার ৭৫৩ টাকা বেশি আয় করেন। অথচ ২০০৭ সালেও ভারতের মাথাপিছু আয় ছিল বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের দ্বিগুণ।

সূচক ও পরিসংখ্যানের যে দৃশ্যমান তত্ত্ব তা দেখে গেয়ে উঠতে ইচ্ছা করে চোখ ধাঁধানোর এই খেলা শুধু ভঙ্গী। পৃথিবী সাম্য ও ঐক্যের একটা সমান্তরাল জায়গায় পৌঁছাবে এমন বিবেচনায় থেকেই আন্তর্জাতিক সূচক ও পরিসংখানের কথা আসে।

সূচক নিয়ে পড়তে পড়তে অনেকবার মনে হয়েছে, সূচক বা পরিসংখ্যান কাগজের জিনিস আসুন মানুষের সাথে কথা বলি; জীবন মান ও উন্নয়ন স্বচক্ষে দেখি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধার চোখে দেখি। দূর থেকেই তিনি আমার অর্থনীতির শিক্ষক। এক নিবন্ধে বিশ্বমন্দার মধ্যে তিনি বলেছিলেন, 'আমাদের সার্বিক খাদ্য উৎপাদন, আমাদের যে খাদ্য পরিস্থিতি, আমাদের যে নীতি সমর্থন, আমাদের কৃষিতে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে ও আগামীতে যে আরও বিনিয়োগ হবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খাদ্যসংকট নিয়ে দুর্ভাবনা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এ কথা ঠিক, সবাই ২০২৩ সালকে মন্দার বছর বলছেন। আর সেই সময় খাদ্য পরিস্থিতি খারাপ হবে বলছেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।'

২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ তিনটি শর্তই পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য বেশ কিছু খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে পোশাক খাতের বিশ্বব্যাপী বাজার সৃষ্টি করা, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ ও ওষুধের উপাদান, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল ও যানবাহন তৈরি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি ও কৃষিপণ্য আধুনিকীকরণসহ ৩২ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার।

‘ইকোনমিস্ট’-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

চাপ ছিল করোনা ও আবার নিয়মিত জীবনে ফেরার। করোনা নিয়ন্ত্রণ তথা কিছুটা মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছে এমন শীর্ষ ২০ দেশের তালিকা সম্বলিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ। মরণব্যাধি করোনা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জন্য সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে আর্থ-সামাজিক উন্নতিসহ বসবাস উপযোগী নিরাপদ শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

শুধু করোনা নয় কিন্তু, সাথে আর্থ সামাজিক ভারস্যম ঠিক রেখে এবার নাকের ডগা থেকে দুর্ভিক্ষের আভাস থেকেই মুক্তির কথাও লেখা আছে ব্লুমবার্গ রিপোর্টে।

বিখ্যাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’ ১১টি উদীয়মান দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ‘প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম ও ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হবে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল’-২০২১ রিপোর্ট অনুসারে ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান হবে ২৫তম।

আমার তো মাঝে মাঝেই মনে হয় এসব রিপোর্ট পড়েই বিরোধীদলীয় নেত্রী অসুস্থ হয়ে পরেন।

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন(এইচএসবিসি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে৷ এর পরের পাঁচ বছর ২০২৩ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ হারে৷ আগামী এক যুগ বাংলাদেশে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে৷ আর বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বের সব দেশের প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হবে৷

শেখ হাসিনার মতো সৎ-সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আজ বিশ্বের বুকে রোল মডেল হতে পেরেছে বাংলাদেশ। দক্ষতা, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল শেখ হাসিনাই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from Spot Light