বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2021-11-12 02:09:20 BdST
দাম বাড়িয়েও প্রতিবেশীদের তুলনায় ‘সস্তা’ বাংলাদেশের ডিজেল!
সাম্প্রতিক সময়ে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম দামেই জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে বাংলাদেশ।
বুধবার (১০ নভেম্বর) পর্যন্ত শুধুমাত্র পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়ে কম দামে ডিজেল বিক্রি করেছে। অন্যদিকে, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপালে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি মূল্যে ডিজেল বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে।
নতুন মূল্য অনুসারে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৮০ টাকা করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৬৫ টাকা।
এদিকে, বুধবার পর্যন্ত ভারতের মুম্বাইয়ে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার প্রায় ১০৮.৯৮ টাকা এবং ভুটানে প্রতি লিটার ৯৬.০৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া, নেপালে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে ৩ টাকা বেশি অর্থাৎ ৮২.৮৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তুলনায় ডিজেলের দাম কম রয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় প্রতি লিটার ডিজেল ৪৭.২৫ টাকায় এবং পাকিস্তানে ৭১.৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ফলে, বিশ্বব্যাপী ডিজেলের বর্তমান গড় মূল্য লিটার প্রতি ১.১৩ ডলার বা প্রায় ৯৭ টাকা।
ধনী দেশগুলোতে সাধারণত জ্বালানির দাম বেশি এবং দরিদ্র ও উৎপাদক দেশগুলোয় তুলনামূলকভাবে দাম কম থাকায় জ্বালানি তেলের দাম একেক দেশে একেক রকম হয়।
ভোক্তাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বিশ্ববাজারে তেলের উচ্চ মূল্যের সঙ্গে মানিয়ে চলতে জ্বালানির দামে ভর্তুকি দেয়।
বিপিসি’র পরিচালক (অর্থ ও বিপণন) কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, “ডিজেল ও কেরোসিনের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোতে জ্বালানির দাম এবং অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি মূল্যসহ অনেক বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দাম বাড়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে দামসহ অনেক কারণ রয়েছে। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ভর্তুকি।”
তিনি আরও বলেন, “সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তেল চোরাচালান রোধে ইতোমধ্যেই বিপিসি একটি চিঠি জারি করেছে।”
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ডিজেলের ক্ষেত্রে করপোরেশন লোকসানের মুখে পড়েছে।
বিগত সাড়ে পাঁচ মাসে, পূর্বের ভর্তুকি মূল্যে ডিজেল বিক্রি করে বিপিসি প্রায় ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শুক্রবার বলেছেন, “সরকার জ্বালানি তেলে ধারাবাহিকভাবে ভর্তুকি দিয়ে আসছে, কিন্তু দেশে দাম কম থাকায় দুর্বৃত্তরা পাচার শুরু করেছে। তাই চোরাচালান রোধে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।”
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আরও জানিয়েছে, একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সর্বদাই জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে, সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উল্লেখ্য, এর আগে সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ডিজেলের দাম নির্ধারণ করেছিল প্রতি লিটারে ৭৮ টাকা। পরে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩ টাকা কমানো হয়েছিল।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.