February 25, 2025, 1:00 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2022-10-04 06:00:27 BdST

গনপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ


নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল

গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সাবেক ভাগ্যবান সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের মত আরেকজন ভাগ্যবান নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দাপটের সাথে চাকুরী করছেন।

সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী তিন বছর পরপর জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে বদলির বিধান থাকলেও স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের ক্ষেত্রে সেই বিধান অকার্যকর। এক গোপন অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল নিজেই দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সকল প্রকার নিয়োগ, বদলী এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। অতএব, তাকে বদলী করার সাধ্য কার?

নিজেকে সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বলে সবাইকে পরিচয় দিতেন  গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল। যেহেতু দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং নিয়ে অত্যন্ত দাপটের সাথে চাকুরী করছেন অতএব তার বলে বেড়ানো কথার প্রতিধ্বনি কর্মের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়েছে।

স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে নিশ্চিত করেছে। প্রতি বছর শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলীদের সারা দেশে বদলী করা হলেও 'নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলকে কেন বদলী করা হয়নি' এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির এই কর্মকর্তা সাবেক সচিবের সাথে একটি সুসম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হন। শুধু তাই নয়, নিজেকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর হিসেবে জাহির করতে গিয়ে তিনি এমন কিছু সংস্থার সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সবাইকে বলে বেড়াতেন যাতে করে তাকে নিয়ে কেউ ঘাটাঘাটি না করে। এছাড়াও বদলী বানিজ্য ও বড় বড় ঠিকাদারদের সাথে তার সখ্যতা তাকে অসীম শক্তির অধিকারী করে তুলে। তার রয়েছে একটি শক্তিশালী মাফিয়া সিন্ডিকেট।

সাবেক গনপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের আশীর্বাদেই তিনি ঢাকা নগর গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলী হন। জানা গেছে, স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল ২০০৪ সালে গনপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকুরী লাভ করেন। বিএনপির তৎকালীন এক মন্ত্রীর সুপারিশে তিনি ঢাকায় পোস্টিং পান। এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এক পর্যায়ে সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের সাথে সখ্যতার কারনে তিনি সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন।

স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তার নির্ধারিত বরাদ্দের বাহিরে ঘুপচি বিজ্ঞাপন করে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে নিশ্চিত করেছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে তার বিভাগে যত টাকা বরাদ্দ হয় তার প্রায় দ্বিগুন টাকা তিনি খরচ করতেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রধান প্রকৌশলীদের পর্যন্ত পাত্তা দিতেন না। তিনি অধিকাংশ সময় মন্ত্রনালয়ের সচিবের দপ্তরে ব্যয় করতেন।  

ঢাকা জোনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হল ঢাকা নগর গনপূর্ত বিভাগ। এই বিভাগের প্রতিটি কাজ, ঠিকাদার নির্বাচন এবং কমিশন তিনি নিজেই ঠিক করতেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের কর্মকালীন সময়ে বরাদ্দ এবং তার নিয়ন্ত্রনে কি পরিমান টাকার কাজ হয়েছে তা একমাত্র দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক অনুসন্ধান করলেই দুর্নীতির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল নিজ কর্মস্থলে কাজের চেয়ে তদবির বানিজ্যে বেশী ব্যস্ত বলে একাধিক সূত্র 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে নিশ্চিত করেছে।

'একজন নির্বাহী প্রকৌশলী কেন বদলী হবেন না, তার উপর কেন প্রধান প্রকৌশলীদের কর্তৃত্ব থাকবে না' এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর কারো কাছে নেই। এমনটি চলতে থাকলে পুরো অধিদপ্তরেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা দেয়া হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি। এমনকি তার কার্যালয়ে যেয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

গনপূর্ত অধিদপ্তরে দুর্নীতি ও অনিয়ম নতুন কিছু নয়। ঠিকাদার ও কর্মকর্তারা মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখানে গড়ে তুলেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্ট্যারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে বলেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যদি চাকুরী বিধিমালা পুরোপুরি প্রয়োগ করা না হয় অথবা ব্যহত হয় তাহলে একদিকে কর্মকতা কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে অপরদিকে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। 

তিনি আরো বলেন, "দুদক যতো শক্তিশালী ও সক্রিয় হবে দুর্নীতি ততই কমে আসবে।"

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.