বিশেষ প্রতিনিধি
Published:2022-10-09 03:43:02 BdST
সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও ইউরোলোজি বিভাগের ডাঃ এম.এ কাশেমের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা ও রোগী জিম্মি করার অভিযোগ
ঢাকা হাটখোলার সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিমিটেড ও হাসপাতালে ইউরোলোজি বিভাগে কর্তব্যরত ডাঃ এম.এ কাশেমের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসায় ভুক্তভোগী আব্দুল কাইয়ুম নামে একজন রোগী সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করেছে। ২০-০৯-২০২২ ইং তারিখে অভিযোগে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাঃ এম.এ কাশেমের বিরুদ্ধে তার উপর চালানো পৈশাচিক অপচিকিৎসার অভিযোগ আনেন। অভিযোগ পত্রসূত্রে ভুক্তভোগী রোগী এ জাতীয় অপচিকিৎসার স্বীকার যেন দেশের কোনো রোগীর ক্ষেত্রে না ঘটে তা তিনি উল্লেখ করেন। আবদুল কাইয়ুম (৬০) দ্য ফিন্যান্স টুডের সাথে তার জীবনের ঘটে যাওয়া অপচিকিৎসা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ এর কথা লিখিতভাবে তুলে ধরেন। আবদুল কাইয়ুম আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে সময় কাটাচ্ছনে। তার লখিতি বক্তব্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-
আমি নিম্নে স্বাক্ষরকারী আবদুল কাইয়ুম, এই মর্মে উল্লেখ করিতেছি যে, গত ২০/১১/২০২১ইং তারিখে সালাউদ্দিন স্পেলাইজড হাসপাতাল লিঃ-এ ডাঃ এম. এ. কাশেম (ইউরোলোজিস্ট) এর কাছে সাধারণ রুটিন চেক আপের জন্য গেলে তিনি আমাকে অনেক গুলো পরীক্ষা করাতে বলেন। পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে তিনি আমাকে জোর পূর্বক পোষ্ট গ্ল্যান্ট অপারেশনের নির্দেশ দেন, তিনি আমাকে নানান ভয়-ভীতি দেখিয়ে বলেন এই মুহূর্তে অপারেশন না করলে পোষ্ট গ্ল্যান্ট ক্যান্সারে রূপ নেবে। তাই অপারেশন করতেই হবে এবং তার মাধ্যমেই করতে হবে। আমি না চাইতেও ডাঃ এর ভয়ভীতির পরামর্শে ০৫/১২/২০২১ইং সকালে উক্ত হাসপাতালে ভর্তি হই। সন্ধ্যায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আমাকে স্বজ্ঞানে রেখেই অস্ত্রোপাচার চালায়। তখন আমি স্পষ্ট দেখতে পাই আমার মূত্রনালী থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং ব্যথা অনুভব করি। সেদিন অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাঃ তড়িঘড়ি করে অপারেশন স্থগিত করে দেন। তারপর আমাকে অবজারবেশন রুমে পাঠিয়ে দেন। অবজারবেশন রুমে ডিউটিরত ডাক্তার নার্সরা এবং অপারেশন সহকারী আমার অবস্থা নিয়ে আতঙ্কিত হলে, এই ব্যাপারে ডাঃ এম. এ. কাশেমকে ফোনের মাধ্যমে জানানো হয়। ঐদিন আমি অবজারবেশন রুমে থাকি পরেরদিন আমাকে ৯১৭নং রুমে ট্রান্সফার করা হয়। ঐ দিন থেকে আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরের দিন ডাঃ এম. এ কাশেম আমার শারীরিক অবস্থা দেখে শুক্রবার ১০/১২/২০২১ইং তারিখ ২য় বারের মতো অস্ত্রোপাচার করবেন বলে জানান। আমি ও আমার পরিবার আপত্তি জানালে এবং অন্যত্রে যেতে চাইলে ধমক দেন এবং রিলিজ নেওয়া যাবে না বলে চলে যান। ১০/১২/২০২১ইং ২য় অস্ত্রোপাচারে আমার উপর চালানো হয় পৈশাচিক অস্ত্রোপাচার। ডাক্তার অস্ত্রোপাচার শেষে এক মুহূর্ত ঐ হাসপাতালে না থেকে তড়িঘড়ি করে চলে যান। অপারেশন থিয়েটারে থাকা অবস্থাতেই আমার মরণ যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর অবজারবেশন রুমে নিয়ে গিয়ে উপস্থিত ডাক্তারগণ ও অপারেশন সহকারী মিলেও আমার মরণ যন্ত্রনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তাৎক্ষণাৎ ডাঃ এম. এ. কাশেমকে পুনরায় হাসপাতালে আসার জন্য জরুরি বিভাগ থেকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি আসলে ৩য় বারের মতো আমার অস্ত্রোপাচার করা হয়। অস্ত্রোপাচারে কোন ফল না পাওয়াতে আমার মরণ যন্ত্রনার ব্যাথা নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে আমাকে ব্যথা ও ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অবজারবেশন রুমে পাঠিয়ে দেন। ১১/১২/২০২১ইং আমার ৪র্থ বারের মতো অপারেশন করেন ঐ অপারেশনে আমি আমার জ্ঞান হারাই। তারপর আমার জ্ঞান ফিরে ১৯/১২/২০২১ইং তারিখে আজগর আলী হাসপাতালের আই.সি.ইউ-তে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায়। পরে আমি জানতে পারি ১১/১২/২০২১ইং তারিখ রাতে আমি যখন জ্ঞান হারাই আমার অবস্থা প্রায় মৃত্যুশয্যায়। যখন সালাউদ্দিন স্পেলাইজড হাসপাতাল লিঃ-এর ডিউটিরত ডাঃ সুমাইয়া এবং ডাঃ এম. এ কাশেমকে আমার অবস্থা সম্পর্কে জানান তাৎক্ষণাৎ ডাঃ এম. এ. কাশেম পলায়ন করেন এবং ফোন বন্ধ করে দেন। তখন আমার পরিবার স্বজন উক্ত হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের সুদ্বীপকে জানান তিনি ও ডাক্তার সুমাইয়া আমাদের হাসপাতাল ত্যাগ করার জন্য তাগিদ দিতে থাকেন। হাসপাতালে উপস্থিত ওয়ার্ড বয় এবং নার্সরা আমাদের জানায় এর আগেও ডাঃ এম. এ. কাশেম একই অপারেশনে একজন ব্যক্তিকে মেরে ফেলেছেন। এমতাবস্থায় সালাউদ্দিন স্পেলাইজড হাসপাতাল লিঃ-এর ভবনের মালিক পক্ষ মোঃ আদর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সে নিজ দায়িত্বে আমাকে আমার পরিবার স্বজনসহ আজগর আলী হাসপাতালে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নেন। ১২/১২/২০২১ইং মধ্যরাত আনুমানিক ১.০০ টার দিকে আমাকে আমার পরিবার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে আমি ৯ দিন আই.সি.ইউ-তে ও ১০দিন কেবিনে মোট ১৯দিন হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলাম এবং আজও আমি বাসায় আইসোলেশনে আছি। আমি অপারেশনের পূর্বে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছিলাম আর এখন আমার একা চলা দায়।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ নতুন নয়। দেশের একজন সাধারন নাগরিক ও যেনো চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা/অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর জীবন নাশের পরিস্থিতি না হয় তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দেশের প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় তা এখন সময়ের দাবি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য ডাঃ এম.এ কাশেমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি, ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গনমাধ্যমকে বলেন আমরা যে কোনো অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকি। চিকিৎসকদের মূল ধর্মই হলো রোগীর সেবা করা। যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনো চিকিৎসক রোগীকে জিম্মি করে অথবা তার দ্বারা ভুল চিকিৎসার স্বীকার হয়ে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দায় দায়িত্ব বিএমএ বহন করবে না। পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতাল ডাঃ বেলাল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ফিন্যান্স টুডে কে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধেই এ জাতীয় অভিযোগ আসছে। আমরা অভিযোগকৃত হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করতে বদ্ধ পরিকর।
বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট সেলিম রেজা বলেন, চিকিৎসার নামে সারাদেশে চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ আমরা গনমাধ্যমে প্রায় দেখে থাকি। চিকিৎসা সেক্টরে এক ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে, এর পেছনে মূল কারন হলো সেবার আড়ালে বানিজ্যিকরন। হিউম্যানিস্ট সোসাইটি ইতোমধ্যে চিকিৎসা খাতে সুস্থ্য ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষে দেশে ও দেশের বাহিরে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোগী যদি আমাদের নিকট প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত নিয়ে আবেদন করে তাহলে আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.