February 26, 2025, 7:47 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-11-03 11:39:27 BdST

জাতীয় চার নেতার উত্তরসূরিরা কে কোথায়?


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করার পর তাঁর চারজন ঘনিষ্ঠ সহচর ৩ নভেম্বর জেল হত্যার শিকার হন।

তৎকালীন আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা হলেন: সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান। এই চার নেতার উত্তরসূরিরা কে কোথায় কি করছেন তা এখানে তুলে ধরা হলো:

সৈয়দ নজরুল ইসলামের উত্তরসূরিরা

চার নেতার মধ্যে অন্যতম নেতা ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তার বড় ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মন্ত্রীর দায়িত্বও সফলতার সাথে পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলকে তিনি এতই ভালোবাসতেন যে দল সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা সংগঠন নয়, আওয়ামী লীগ একটি অনূভূতির নাম।’

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন তাঁর মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।

তিনি বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর ঐ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। সংসদ সদস্য হলেও সৈয়দা জাকিয়া নূর দলে বাবা কিংবা ভাইয়ের মতো বলিষ্ঠ কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ ছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে হিসেবে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও তাকে খুব একটা চেনেন না।

তাজউদ্দীন আহমদের উত্তরসূরিরা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুজিবনগর সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। জেলখানায় যে চারজনকে হত্যা করা হয়, তাদের একজন ছিলেন এই নেতা। জাতীয় চার নেতার মধ্যে তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন অন্যতম নেতা। ১৯৮১ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন এবং সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তখন তাজউদ্দিন আহমেদের সহধর্মিনী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসেন। এক সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। বয়সের ভারে নূয়ে পড়লে এক সময় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।

এরপর শেখ হাসিনা দলে নিয়ে আসেন তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে। দলে এসে প্রথমবার এমপিও হয়েছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও করেছিলেন। কিছু দিন মন্ত্রীত্ব করার পর তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগও করেছিলেন। তার বাবা তাজউদ্দিন আহমেদ রাজনীতিতে যেমন দ্ক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সোহেল তাজ তার বাবার মতো রাজনীতিতে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। সোহেল তাজ একটা বিভ্রান্তির মধ্যে ঢুকে গেছেন। বর্তমানে দেশে মাঝে মধ্যে আসলেও তিনি এখন বিদেশেই বসবাস করেন বলে জানা গেছে। তার বোন অর্থাৎ তাজউদ্দীন আহমেদের বড় মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

তাজউদ্দিন আহমেদ যে মাপের নেতা তার সন্তান হিসেবে সে ভাবে তারা এগুতে পারেননি বা আলোচনায় আসতে পারেননি।

ক্যাপটেন মনসুর আলীর উত্তরসূরিরা

জাতীয় চার নেতার আরেক অন্যতম নেতা ক্যাপটেন এম মনসুর আলী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। ক্যাপটেন মনসুর আলীর দুই ছেলে। একজন হলেন ডক্টর মোহাম্মদ সেলিম এবং অন্যজন হলেন মোহাম্মদ নাসিম। ছাত্র জীবন থেকেই নাসিম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও জড়িয়ে যান মোহাম্মদ নাসিম। বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম যদিও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন কিন্তু তিনি মোহাম্মদ নাসিমের মতো লাইম লাইটে আসতে পারেননি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থাকা অবস্থায় ড. সেলিম মারা যান।

মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম দাপটের সাথে রাজনীতি করে গেছেন। বেঁচে থাকা অবস্থায় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। মনসুর আলীর উত্তরসূরি হিসেবে যথাযথ ভাবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদ নাসিম মৃত্যু বরণ করলে তার ছেলে তানভির শাকিল জয় আওয়ামী লীগ থেকে সিরাজগঞ্জের একটি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে জাতীয় ভাবে জয় বাবার মতো ততোটা পরিচিত না হলেও সংসদ সদস্য হিসেবে তার কার্যক্রম সন্তোষজনক।

এ এইচ এম কামারুজ্জামানের উত্তরসূরিরা

জাতীয় চার নেতার আরেক বর্ষীয়ান নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানও মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন। অন্য তিন নেতার সাথে তাঁকেও নির্মমভাবে জেলখানায় হত্যা করা হয়। তাঁর ছেলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র হয়েছেন। জাতীয় ভাবে না হলেও রাজশাহীর রাজনীতিতে তিনি কিং।

বলা চলে, এখানকার আওয়ামী লীগের রাজনীতির শক্ত ভিত গড়েছেন খায়রুজ্জামান লিটন। এক সময় রাজশাহীতে বিএনপি এবং শিবিরের ঘাঁটি থাকলেও বর্তমানে এই অঞ্চলে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। দলকে এমন একটি পর্যায়ে নেওয়ার এই কৃতিত্ব খায়রুজ্জামান লিটনের।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ডের সময় এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তাঁর ছোট ভাই ভারতের কোলকাতায় একটি মিশনারী স্কুলে লেখাপড়া করতেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৮১ সালের ১৭মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। এর আগেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দলের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে জাতীয় চার নেতার স্ত্রী সন্তানদের যথাযথ সম্মান, স্নেহ ও মর্যাদা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বিদেশ থেকে নিয়ে এসে দলে স্থান দিয়েছিলেন। এক সময় তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক করেন শেখ হাসিনা। জাতীয় চার নেতার সন্তানদের রাজনীতিতে এনে তাদের প্রতি শেখ হাসিনার যে অকৃত্তিম ভালোবাসা তার প্রমান মিলেছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.