February 26, 2025, 8:12 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-01-16 13:59:40 BdST

গ্যাসের তীব্র সংকট: দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা কম


গ্যাসের তীব্র সংকটে রাজধানীসহ দেশের অনেকস্থানে নিত্যপ্রয়োজনেও দিনের অধিকাংশ সময় আগুন জ্বলছে না। এছাড়াও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে সারসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা। এই সংকট থেকে উন্নতি খুব দ্রুত হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে।

নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রগুলো বলছে, দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। প্রায় তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে চলতি মাসে গড়ে সারা দেশে দুই হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে।

গত অক্টোবর থেকে শীত শুরু হওয়ায় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎখাতে কমেছে গ্যাসের চাহিদাও। তবে অন্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে সেই গ্যাস। এলএনজিরও সরবরাহ কমেছে। সাময়িক গ্যাস সংকটে বন্ধ রয়েছে জামালপুরের যমুনা সার কারখানা।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, এই গ্যাস সংকটের কারণে দেশীয় উৎপাদন কমছে। গ্যাসের এই সংকট থেকে অতিদ্রু উত্তরণের পথও দেখতে পাচ্ছেন না তারা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস সরবরাহ বাড়লেও সে সময় চাহিদা বাড়বে। কিন্তু, নতুন করে বাড়তি গ্যাস লাইনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে কারণে বাসাবাড়ি কিংবা সার কারখানায়ও এই সংকট থাকবে।

নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কারখানা টোটাল ফ্যাশনের উর্ধতন কর্মকর্তারা জানান গ্যাস সংকটে তাদের উৎপাদন কমেছে তিন ভাগের এক ভাগে।

কারখানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা শুধুমাত্র শুক্রবারে গ্যাসের চাপ পান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় তা কোনো কাজে লাগে না। সপ্তাহের অন্যান্য দিনে তাদের বয়লার চালু রাখার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় না।

স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম বলছে, গ্যাস সংকটে তাদের জ্বালানি চাহিদার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিজেল ব্যবহার করতে হয়, যাতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়।

প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, তাদের প্রতি টন রড উৎপাদন করতে খরচ বেড়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। আমরা এখন পর্যন্ত রডের দাম বাড়াইনি। তবে যেভাবে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে হয়তো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

অন্যদিকে, নিত্যদিনের রান্নার জন্য দরকারি গ্যাসের সংকট রাজধানীজুড়ে। রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, আজিমপুর, কামরাঙ্গীচর, ডেমরা, পূর্ব দোগাইর, হাজীনগর, কোলাটিয়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর, শ্যামলী, পল্লবী, বনশ্রী, গেন্ডারিয়া, নবাবগঞ্জ, নারিন্দা, মোহাম্মদপুর ও ভাসানটেকসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকটের একই অবস্থা।

আক্ষেপ করে পুরান ঢাকার হোসনে দালান এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন বাবু বলেন, আমরা প্রতি মাসে বিল দিচ্ছি, কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছি না। যদিও আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ জায়গায় গ্যাসের সংযোগ আছে, তবে বাসিন্দারা এলপিজি ব্যবহার করছে। কিন্তু এলপিজির ব্যয় বহন করা কষ্ট সাধ্য।’

তবে, গ্যাস সংকট নিরসনের বিষয়ে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, এলএনজি আমদানি করে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে তা আবার গ্যাসে রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে একটি টার্মিনাল গত ১ নভেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ আছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, 'শিগগিরই এটি চালু হবে। এটি চালু হলে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়বে।'

গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমার কথা জানিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, 'আমরা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। আমাদের ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন করছ ‘।

তাৎক্ষণিক গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন জনেন্দ্র নাথ সরকার।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.