কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Published:2024-08-03 13:06:45 BdST
বাংলাদেশের সহিংসতায় চীনের ভূমিকা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পরপরই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নাশকতার রূপ নেয়। এই আন্দোলন কি শুধুমাত্র শিক্ষার্থী এবং বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্টি না এর পিছনে বাইরের হাত আছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এই ঘটনার ব্যাপারে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের ব্যাপারে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করলেও ভারতের সরকার বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছেন।
তবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশই এই ঘটনায় বাইরের হস্তক্ষেপের বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বরং এ নিয়ে আরও খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করছেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের সহিংস কোটা আন্দোলনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালা হয়েছে। এই অর্থ বিএনপি-জামায়াত, শিবির বা শিক্ষার্থীদের কাছে কীভাবে গেছে সেটি তদন্ত হওয়া দরকার গভীরভাবে। এরসঙ্গে চীনের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন মহল খতিয়ে দেখার দাবি করছেন।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় চীন বাংলাদেশে যে সমস্ত কৌশলগত বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল, তার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশেষ করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনের যে আগ্রহ ছিল তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু চীনের প্রস্তাবের বিপরীতে ভারতও তিস্তা মহাপরিকল্পনার একটি প্রস্তাব দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, দুই দেশের প্রস্তাবের মধ্যে তিনি ভারতের প্রস্তাবের ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ তিস্তা নদী বাংলাদেশ এবং ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। কাজেই ভারত যদি প্রস্তাব দেয় সে প্রস্তাবটি আমরা অধিকার দেব।
এছাড়াও চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সেই ক্ষেত্রগুলো বেছে নিচ্ছিল যে ক্ষেত্রগুলোতে ভারতের অস্বস্তি হবে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন তৈরি হবে। সেই ফাঁদে বাংলাদেশ পা দেয়নি। আর এই কারণেই কি কোটা সংস্কার আন্দোলনে চীনের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা ছিল?
উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু বলেনি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল আচরণ করছে। বারবার তারা বলছে, সকল পক্ষকে শান্ত থাকতে হবে। বল প্রয়োগ না করা, সুষ্ঠু তদন্তের কথা তারা বলছেন। সবকিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব খুব সোজাসাপ্টা এবং স্পষ্ট।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন দ্বৈত নীতি অনুসরণ করেছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল মিয়ানমার। মিয়ানমারে একদিকে যেমন তারা আরাকান বিদ্রোহীদেরকে মদদ দিচ্ছে, তাদের অস্ত্র সংগ্রহ করছে, অন্যদিকে সরকারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। এরকম দ্বৈত নীতি চীন অনেক দেশেই করে থাকে। এই অঞ্চলে চীনের রাজনৈতিক আগ্রহ ক্রমশ বেড়েছে। আর এই কারণেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বেগবান করে এটিকে ধ্বংসাত্মক করে সরকারের ওপর একটি চাপ সৃষ্টির কৌশল চীন নিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দরকার বলে কোনও কোনও কূটনৈতিক মনে করছেন।
কোটা আন্দোলনের ফলে চীনের বহুমাত্রিক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি মেটানোর জন্য বাংলাদেশের দ্রুত নগদ অর্থ সহায়তা দরকার। যেটি চীন দিতে পারবে। দ্বিতীয়ত, এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে কূটনৈতিক ‘বার্গেনিং পাওয়ার’ অনেকটা কমে যাবে। এর ফলে চীন নির্ভরতা বাড়তে পারে। তৃতীয়ত, এই আন্দোলনে ভারতবিরোধিতা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যেটি চীনের জন্য লাভজনত হবে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সহিংসতায় চীনের ভূমিকা নিয়ে এখন রীতিমতো গবেষণা চলছে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.