বিশেষ প্রতিনিধি
Published:2024-10-02 13:45:40 BdST
বিজিএমইএ পরিচালক রাজীব চৌধুরী কৌশলী ও সুবিধাভোগীদের একজন
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে গণভবন থেকে হেলিকপ্টার যোগে ভারত পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রীসহ অধিকাংশ ক্ষমতাধর নেতা-কর্মী গা-ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগি ভোল পালটিয়ে বিএনপিতে যোগ দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। এরমধ্যে অন্যতম কৌশল হচ্ছে, বিএনপি নেতাদের সাথে ছবি পোস্ট করে জানান দিচ্ছেন যে, তারাও বিএনপি করেন।
কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এর আগে ওই সব নেতারা আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সরকারদলীয় নেতাদের সাথে ছবি, পোস্টার ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন তারা বিএনপির অনেক নেতাকে ম্যানেজ করে বিএনপি নেতা-কর্মী হবার জোর চেষ্টা করছেন। সারাদেশের ন্যায় এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর কচুক্ষেতে। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক রাজীব চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ঘোর আওয়ামী লীগ নেতা বনে বিজিএমইএ এর পরিচালক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এজন্য তাকে সহযোগিতা করেছেন বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি এসএম আব্দুল মান্নান কচি। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সদ্য বিএনপি নেতা বনে যাওয়া রাজীব চৌধুরী বিরুদ্ধে ব্যানার, ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে এলাকায় মিছিলও করা হয়েছে। তবে সব অভিযোগ অকপটে অস্বীকার করেছেন বিজিএমইএ এর পরিচালক রাজীব চৌধুরী। তিনি বলেছেন, "আমি কোন দল" করিনা। আমাকে ফাঁসানোর জন্য হেলেনা নামে একজন মাদক ব্যবসায়ী মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। তিনি এজন্য হেলেনার বিরুদ্ধে মানহানীর মামালা করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। এদিকে এলাকার মানুষের ভাষ্যমতে, রাজীব চৌধুরী ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি এস এম মান্নান কচি, আওয়ামীলীগের আমলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুর রহমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্?মেদ? পলকসহ এমপি মন্ত্রীদের সঙ্গে রীতিমতো ছবি তুলে এলাকার মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের বড় নেতা বনে গিয়ে ছিলেন। তার দাপটে ব্যবসায়ীরা থাকতেন তটস্থ। নেতাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্কের কারণে কচুক্ষেত এলাকায় জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ছিলো রাজিব চৌধুরীর। কাচা টাকার লোভে এখন কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিএনপি নেতাদের পেছনে ছুটছেন রাজীব চৌধুরী। শুধু একটু ভালো থাকার জন্য এবং শিল্পপতি হবার আশায় এহেন কিছু নেই যে তিনি পারেননা। তিনি এলাকার মানুষের কাছে ধর্মভীরু এবং দানবীর হিসেবেও পরিচিত।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের উত্তর এর ভোট পরিচালনা এবং অর্থ যোগানদাতা ছিলেন রাজীব চৌধুরী। শুধু তাই নয় ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, ভাষানটেক, কচুক্ষেত এলাকা নিয়ন্ত্রন করছেন রাজীব চৌধুরী। এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিস্তৃত এলাকা জুড়ে। তবে এবার তিনি বিএনপি পন্থী নেতাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজীব চৌধুরী একেবারেই অস্বিকার করেছেন। বলেছেন তিনি কোন দলের নয়। তিনি কোন দল করেননা। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সাথে ছবি গুলো এডিট বলে দাবি করেছেন রাজীব চৌধুরী। তাই তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এর সাথে নতুন করে ছবি প্রর্দশন করেছেন।
জানা যায়, ৫ই আগস্টের পর থেকেই রাজীব চৌধুরী আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কচুক্ষেত এলাকায় দলবল নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন বিএনপি নেতাদের পরিচয় বহন করে। বিজিএমইএ এর পরিচালক হওয়ায় কচুক্ষেত এলাকার ৮ টি গার্মেন্টস রাজীবের দখলে রয়েছে। কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত এলাকায় দখলবাজিই নয় ভূমিদস্যু নামেও বেশ পরিচিত তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এই এলাকার ৪ টি বাড়ি দখল করে নিজের নামে দলিল করে নিয়েছেন। গার্মেন্টস মালিকরা রাজীবের ভয়ে কারো কাছে জুট বিক্রি করতে পারেন না। চাঁদাবাজি ও অপরের বাড়ি দখলসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত রাজীব একসময় তার মামা মহিউদ্দিনের দোকানে ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করতেন। ৯৮ সাল থেকে বিন্দু বিন্দু করে রাজীবের চোখ খুলতে থাকে। সেখান থেকেই রাজীবের উত্থান শুরু হয়।
রাজিবের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী, রামগঞ্জ। মা রাজিয়া বেগম ১৯৯০ সালে কচুক্ষেতে ‘দিপ্তি ইন্ডাস্ট্রি সিবি-৪’ এর অপারেটরে চাকুরী করতেন। তার বাবা মোস্তফা রেশনের দোকানে কাজ করতেন। ছেলে রাজীব চৌধুরী দখলবাণিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য, বাড়ি দখল, চাদাবাজিসহ নানান অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত হয়ে অবৈধ পথে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
জানা গেছে, রাজীবের এসব অপকর্মের সাড়া দিয়েছেন, ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুর রহমান, ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মোল্লা। রাজীব চৌধুরীর টাকার কাছে প্রশাসন মুখ ঘুবড়ে বসে থাকতেন। রাজীব চৌধুরীর নামে থানায় মামলা নিতেও পুলিশ সদস্যদের হাটু কেঁপে উঠতো।
ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে রাজনৈতিকভাবে রাজীব চৌধুরীর বট গাছের ছায়া ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে গত ১৪ মার্চ নবনির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পেলে, পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকের দায়িত্ব পান রাজীব চৌধুরী। বিজিএমই এর পরিচালক হওয়ার সুবাধে কচুক্ষেত এলাকার গার্মেন্টস সেক্টর নিজের কব্জায় নিয়েছেন রাজীব ।
রাজীব চৌধুরীর নেতৃত্বে মিরপুর ১০ এ ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর গুলি চালানো অভিযোগ রয়েছে কচুক্ষেতের একটি ভবন থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনের দলীয় নির্দেশনা দিতেন রাজীব চৌধুরী । অভিযোগের বিষয়ে রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘আমি কখনো রাজনৈতিক কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না বরং হেলেনা নামের এক নারী আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট এবং আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ তুলেছে। আওয়ামীলীগের এমপি মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি এডিট করে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। আওয়ামীলীগের আমলে সে বিভিন্ন মাধ্যমে উল্লেখ করতো আমি বিএনপি পন্থী আর এখন সবাইকে জানান দিচ্ছে আমি আওয়ামীপন্থী ছিলাম। আমি কখনোই এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, আপনি চাইলে আমার এলাকায় এসে সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখতে পারেন’।
উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী পন্থী দখলবাজ, চাঁদাবাজ রাজীব বাহিনীরা এখনও পালায়নি, সময়ের রূপ ঝলসে দিয়ে বিএনপির পরিচয়ে চাঁদাবাজি সংসারের দায়িত্ব চালাচ্ছে রাজীবের মতো লোকেরা।
কচুক্ষেত এলাকার মানুষের বক্তব্যে মিশ্র প্রক্রিয়া কথা জানা গেছে, তারা বলেছেন, রাজীব এবং হেলেনার মধ্যে জুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। রাজীব চৌধুরী টাকার বিনিময়ে তার দলবল নিয়ে জুট ব্যবসা করেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে থাকেননা। সাধারণ মানুষ রাজীব চৌধুরীর উত্থান সম্পর্কে বলেন, তিনি এখন অনেক টাকার মালিক হলেও একসময় নুন আনতে পানতা ফুরাতো।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.