নেহাল আহমেদ
Published:2024-11-03 10:41:21 BdST
মধ্যস্বত্ব থেকে হোয়াইট কালার ডাকাত
মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই বিপর্যস্ত জীবন। এরই মধ্যে কিছু সুযোগসন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী পকেট কাটছে ক্রেতাদের। পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। ভোক্তাদের জিম্মি করতে তৈরি করা হচ্ছে পণ্যের কৃত্রিম সংকটও।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি ও পরিবহন খরচ, সরবরাহে ঘাটতি- নানা অজুহাতে অতি স্বল্পসময়ে অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে মরিয়া এই ধরনের ব্যবসায়ী।
সুযোগ নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরাও। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে পোয়াবারো হয়েছে এদের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বাজারকাঠামোর ওপর যার প্রভাব যত বেশি তিনি তত বেশি দাম বাড়াচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদা-জোগানের সূত্র মেনে নয়, বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা করছে সিন্ডিকেটের ইশারায়। বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নজরদারির ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে অসাধুরা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহন খরচের দোহাই দিয়ে পণ্যমূল্য অতিরিক্ত বাড়ানো হচ্ছে। এখন দেশে যেন দাম বাড়ানোর অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা চলছে। এর ফল- ডিমের দাম কয়েক দিনেই আকাশচুম্বী, ব্রয়লার মুরগি এখন আর সহজলভ্য নয়, ভালো ফলনের পরেও চালের দামে আগুন, সরকারের সিদ্ধান্তের আগেই বেড়ে গেছে চিনির দাম, সয়াবিন তেলের বোতলে আবারও সংকট, সস্তার সবজি কিনতেও বেজায় অস্বস্তি হচ্ছে ভোক্তার। ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্যের দামেও আগুন।
বাজার তদারকিতে বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের নানা সংস্থা কাজ করলেও তাদের সার্বিক কাজে সমন্বয়হীনতার চিত্রই বারবার সামনে আসছে। কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ও বাজার ব্যবস্থাপনার ফাঁক গলে ঘুরেফিরে সেই পুরনো সিন্ডিকেটের কারসাজিরই জয় হচ্ছে।
মধ্যস্বত্ব চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-উত্তরকালে সৃষ্ট জমিদারি ও রায়তি স্বত্বের মধ্যস্থিত এক অভিনব স্বত্ব। সব রকমের মধ্যস্বত্বের উদ্ভব ঘটেছে কোনও না কোনো স্থানীয় ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে এবং এগুলির কোনটিরই কোনো আইনগত বৈধতা ছিল না।
মধ্যস্বত্বভোগী
সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্বের মাধ্যমে সব রকমের মধ্যস্বত্বকে বৈধতা প্রদান করা হয়। মধ্যস্বত্বাধিকারীরা একটি বৃহৎ শক্তিশালী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয় উনিশ শতকের শেষ নাগাদ।
এখন মধ্যস্বত্বের ধরণ এবং ধারন পাল্টে গেছে। এখন কৃষক কষ্ট করে চাষাবাদ করে উপার্জন করে ২০ পয়সা আর মধ্যস্বত্বভোগীরা উপার্জন করে ৮০ পয়সা। যেমন কৃষকের কাছে আলু ২ টাকা কেজি দরে কিনে এনে বিক্রি করে ১০ টাকায়।
মজুদদার শ্রেনী
এরপরে রয়েছে মজুদদার শ্রেনী। ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে পণ্য ও মূল্যে যৌক্তিক বিনিময় আদান প্রদান হওয়া কাম্য হওয়া সত্ত্বেও যখন বিক্রেতা অতি মুনাফার লোভে চড়ামূল্যে বিক্রয় করার জন্য পণ্য সামগ্রী কুক্ষিগত করে রাখে, তখন একে বলে মজুদদারি। এর ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে।এরা হচ্ছে হোয়াইট কালার ডাকাত। সবাই জানে চিনে তবু এরা সমাজে সম্মানিত হিসাবে চলাচল করে।
উদাহরণ হিসাবে দেখা যায় কৃষকের হাতে যখন পিয়াজ থাকে তখন এর দাম থাকে ৩০ - টাকা কেজি যখন মজুদদারের হাতে থাকে তখন দাম হয় ১০০-২০০ টাকা।
সিন্ডিকেট
ব্যবসায় সিন্ডিকেট হলো বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক সত্তা নিয়ে গঠিত একটি গ্রুপ, কোম্পানি বা কর্পোরেশন, যা বাজারের সাধারণ স্বার্থ ভাগ করে নেয়। তবে সত্তাগুলো সাধারণত পরস্পরের সরাসরি প্রতিযোগী হয় না। বড় সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলো বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য সিন্ডিকেট গঠন করে।
ব্যবসাখাতে সিন্ডিকেটের ধারণা বোঝাতে মূলত সাম্প্রতিক কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কিছু দিন আগেও বাজারে কাগজ সংকট দেখা দিয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায় যেসব বড় বড় কোম্পানি কাগজ আমদানি করে তারা অধিক পরিমাণে কাগজ কিনে বিক্রি না করে গুদামজাত করে রেখেছে। এতে করে বাজারে কাগজের একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছিল। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকার পরও সংকট দেখিয়ে কোম্পানিগুলো বেশি দামে প্রকাশনীর কাছে কাগজ বিক্রি করে। এই যে বড় বড় কোম্পানিগুলো একজোট হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কাগজের দাম বাড়িয়ে দিল, তাদের এই জোটটিই হচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।
আমদানী
আমাদের দেশে যে শষ্য বা পন্যগুলো কম উৎপন্ন হয় অথবা পাওয়া যায় না যেমন গুড়োদুধ, তেল, ডিজেল, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহ আরো বেশ কিছু পন্য বাইরে থেকে আনতে হয়। বাইরে থেকে আনার জন্য নিদিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, সরকারের আস্থাভাজন অথবা সরকারকে খুশি করে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে পন্য আমদানি করে থাকে। অবস্থা বুঝে তাদের ইচ্ছেমতো সেসব আমদানিকৃত পন্য বেশী দামে দেশে বিক্রি করে থাকে।
বাজারে পন্যের এই অসম বণ্টন নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়তেই থাকবে। তখন উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মুল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত হয় সেক্ষেত্রে তারা পন্য উৎপাদনে উৎসাহ হারাবে। আমাদেরকে একটি বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে যে, কৃষক বাচঁলেই দেশের মানুষ বাঁচবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.