বিশেষ প্রতিনিধি
Published:2024-11-05 17:13:51 BdST
শেখরের খালাতো ভাইআইয়ুব আলী এখনো বেপরোয়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের খালাত ভাই পরিচয় দানকারী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব আলীর দাপট কমেনি। তিনি বিআইডব্লিউটিএ'তে পতিত সরকার আমলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সব কাজ বাগিয়ে নিতেন। এখনো তারা ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে টেন্ডার সহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ।
আওয়ামী দুঃশাসন আমলে নিয়োগ, বদলী, টেন্ডার বাণিজ্য, ড্রেজার ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় গডফাদারের ভুমিকায় ছিলেন
তিনি। রাজস্ব বাজেটের আওতায় সকল ধরনের জাহাজ মেরামত কাজে করেছেন পুকুর চুরি। বিল প্রদানের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ক্ষমতার বলে সব কিছু করতেন থোড়াই কেয়ার। আইয়ুব আলী নিজের পছন্দসই ঠিকাদারকে কাজ দেয়ায় সম্প্রতি তাকে ঠিকাদাররা পিটুনি দিলেও তিনি আগের মতোই বেপরোয়া । ডিভিশনে কাউকেই তোয়াক্কা করেননা। পতিত সরকারের অনুসারী ঠিকাদারদের সাথে রয়েছে সখ্যতা।
আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের খালাতো ভাই পরিচয় দানকারী। মূলত শেখরের বদৌলতেই নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর একান্ত লোক হয়ে উঠেন তিনি। বিআইডব্লিউটিএ'তে তার ডিপার্টমেন্টে টেন্ডার বাণিজ্য করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্ত্রী, সন্তান ও আত্নীয় স্বজনদের নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। পাচার করেছেন বিদেশে কোটি কোটি টাকা। যেকোন সময় বিদেশ পাড়ি জমানোর সম্ভবনা রয়েছে বলে জানাগেছে । দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু আইয়ুব আলী এসব বিষয় অস্বিকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দুদকে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তিনি সৎ, মেধাবী, নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী একজন মানুষ।
আইয়ুব আলীর দুর্নীতির ফিরিস্তি এতোই ভয়াবহ যা রীতিমতো সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনি বিআইডব্লিউটিএ'তে সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যান্ত্রিক শাখায় চাকরির সুবাধে অনেক যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম, ভূয়া বিল ভাউচার এবং ছোট খাটো চুরির ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । গত ১৫ বছরে চুষে বেড়াচ্ছেন আইয়ুব আলী। ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরকে। সেসুবাধে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আইয়ুব আলীকে কাছে টেনে নেন। যতো প্রকার টেন্ডার আছে তার উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। শেখরের কথার বাইরে এক পা এগুতেন না আইয়ুব আলী। বিআইডব্লিউটিএ'তে একতছত্র কায়েম করে আওয়ামীলীগের দুর্নীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি পদে বিআইডব্লিউটিএ শাখার দায়িত্বে থাকা আইয়ুব আলী সরকার পতন হলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। আত্নগোপনে থাকা শেখরের সাথে এখনো নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে। সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন যেকোন সময় আবার শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন। তখন দেখে নিবেন সবাইকে।আইয়ূব আলী বঙ্গবন্ধুর পরিষদের সহ-সভাপতি নয় বলে দাবী করেছেন। তিনি বলেন সহ-সভাপতি হিসেবে আমার নাম দেওয়া হয়েছে।কে বা কারা দিয়েছেন তা আমি জানি না।
জানা যায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের ১৫ বছরে আইয়ুব আলী ড্রেজিং বিভাগের আওতাধীন ড্রেজার, ড্রেজার সহায়ক জলযান মেরামতের সকল প্রকার কাজ তার সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতেন। বিআইডব্লিউটিএ'র সমাপ্ত প্রকল্পের ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের ঊপ-প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তিনি। ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকও ছিলেন। আইয়ুব আলী চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পটিতে ড্রেজি এর নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে । এতে শুধু লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার গোষ্ঠী এবং স্বয়ং আইয়ুব আলী। সরকারের এক টাকার লাভের সম্ভাবনা নেই। আইয়ূব অলী অন্তবর্তীকালীন সরকারের সার্বিক উন্নয়ন মূলক কাজে ভেতরে ভেতরে সিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের উপ-পরিচালক থাকা অবস্থায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।আইয়ুব সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে নারায়নগঞ্জ গোডাউনে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দিয়ে সকল পাইপ, হুইজ পাইপ ইত্যাদি পুড়ে চাপিয়ে দিতেন বিএনপি পন্থী কর্মচারীদের উপর। সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেএই চক্রটি এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
আইয়ুব আলী বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পের দুই টি নৌপথের ড্রেজিং কাজের জন্য দুইটি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী এবং বঙ্গ ড্রেজার্স লিঃ এর নিকট হতে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে চুক্তি করেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
আরো অভিযোগ হচ্ছে, নরসিংদি ও বাঞ্চারনামপুর এলাকায় দুইটি রুটে ড্রেজিং কাজে বড় ধরনের জাািলয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কর্ণফুলীর কম্পানীর সাথে জোগসাজসে বিল ভাগবাটোয়ারা করেন। সর্বশেষে গত ৫ আগস্ট যেদিন শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। ওই দিন বিকেল ৪.৩০ টার দিকে বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বুড়ীগঙ্গার তীরে শ্মাশান ঘাট এলাকায় বিল্ডিং নির্মাণ কাজের একটি দরপত্র আহ্বান করেন। নৌ প্রতিমন্ত্রীকে ব্যবহার করে ৩০০ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন করিয়ে নেন। সরকার পতনের দিনও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন আইয়ুব আলী। খালিদ মাহমুদ এবং আইয়ুব আলী ওই দিন নগদ ৩০ কোটি টাকা ঠিকাদারের কাছ ঘুষ গ্রহণ করেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। টাকার লোভে অন্ধের মতো সই করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আইয়ুব আলী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে কোটি টাকা খরচ করেছেন বলেও ডিবিশনে বলে বেড়াতেন ।এখন তিনি সব কিছুই অস্বীকার করছেন। বিভিন্ন সূতে বলছে আইয়ুব আলী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালনি সময়ে উচ্চস্বরে বলতেন যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনা সরকারকে টিকেিয় রাখতে হবে। এতে যত কোটি টাকা লাগে খরচ করা হবে। ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএ‘র চেয়ারম্যানকে চাপ প্রয়োগ করেন । খালিদ মাহমুদ এবং শেখরের খুটির জোরে আইয়ুব আলী চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। সবার উপরেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। এখনো অপ্রতিরোধ্য আইয়ুব আলী আগের কায়দায়ই চলছেন। নিজের বাইরে কাউকে পাত্তাদেননা।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ঘুষ-দুর্নীতি এবং খালাতো ভাই শেখরের প্রভাব খাটিয়ে আইয়ুব আলী কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুই ছেলেই থাকেন অষ্ট্রেলিয়ায়। তাদের কাছে পতিত সরকার আমলে আইয়ুব আলী দেদারছে টাকা পাচার করেছেন। আইয়ুব আলী ২০২১ সালে লন্ডনে এবং ২০২৩ সালে নিওইয়র্কে বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে দুদকের অভিযোগে উল্লেখ আছে। তবে আইয়ুব আলী বলেছেন আমার লন্ডব বা নিউইয়ার্কে কোথায় ও বাড়ি নেই। যে বলেছে মিথ্যা ত্যথ দিয়েছে আমাকে হয়রানী কারার জন্য।আর বিদেশে বাড়ি থাকলে অনেক আগেই চলে যেতাম। ছেলেদের একাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়টি অসত্য বলে দাবী করেনতিনি।ঢাকার ২৯৫/এ/১ তালি অফিস রোড, রায়ের বাজার, জিগাতলা, হাজারিবাগ এলাকায় ২৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট স্ত্রীর নামে কিনেছেন।তার ফ্লাট আছে এ কথা স্বীকার করলেও ২৩০০ বর্গফুটের ফ্লাটের কথা অস্বীকার করেন।তাছাড়া তার অরো বাড়ি, ফ্লাট এবং জায়গার কথাও অস্বীকার করেন।
বিআইডব্লিউটিএ-তে চরম ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, যান্ত্রিক ও পিডি, বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্প এর পরিচালক আইয়ুব আলী পতিত সরকারের এজন্ডা বাস্তবায়নে ব্যাপক তৎপর রয়েছেন বলে খবর জানা গেছে।পতিত সরকারের দাপট খাটিয়ে এখনো নিজের মত করে টেন্ডার বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিআইডব্লিউটিএ’র সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের দাবি আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এদিকে দুদক এর একজন পরিচালক বলেছেন আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের প্রভাবে ওই সময়ে কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিআইডব্লিউটিএ'র সাবেক নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক তিন চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। তাদের অনুসারীদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও তাদের দোষররা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ঘাপটি মেরে আছেন প্রতিটি সেক্টরে। বিআইডব্লিউটিএ' থেকে গত ১৫ বছরে যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শত শত কোটি টাকা মারিংকাটিং করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন গড়েছেন সম্পদের পাহাড় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.