February 23, 2025, 9:20 am


বিশেষ প্রতিনিধি

Published:
2024-11-05 17:19:10 BdST

বিআইডব্লিউটিএ’র গড ফাদারসিবিএ নেতা সারোয়ার টাকার মেশিন


সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসাইন বিআইডব্লিউটিএ’র গড ফাদার। সংখ্যাটির এহেন কোন বিভাগ নেই যে তার পদচারণা ছিলোনা। তিনি সব জায়গায় ছিলেন নাটের গুরু। পতিত সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান এবং প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হার অনুপাতে টাকা কামিয়েছেন এই সিবিএ নেতা । সারোয়ার হোসাইন এখনো বিআইডব্লিউটিএ'র সিবিএ নেতা। আছেন ফুরফুরে মেজাজে। তার সম্পদের পাহাড় সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সে বিগত সরকার আমলে চারজন মন্ত্রীর সমান টাকা একাই কামিয়েছেন। জাহাজ ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। বিদেশে পাচার করেছেন অগণিত টাকা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে পতিত সরকারের পক্ষে খরচ করেছেন কোটি কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট ভবন থেকে সারোয়ার পালিয়ে যান। কিন্তু তার অফিসের আলমারিতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আটকা পড়ে।পরবর্তীতে টাকাগুলো তার এক অনুসারী দিয়ে সরিয়ে নেন।এ পর্যন্ত নয়,সারোয়ারের বাসায় থাকা কয়েক কোটি টাকা ৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে সরিয়ে ফেলেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।


বিআইডব্লিউটিএ’তে কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এই সিবিএ নেতার যোগসাজশে সংস্থাটির রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষও অজ্ঞাত কারণে সারোয়ার হোসাইন এর অপরাধ ও অপকর্ম ক্ষতিয়ে দেখছেননা। তবে এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।সারোয়ার ঠান্ডা মাথার একজন মানুষ । টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না তিনি। সব কিছুতেই টাকা আর টাকা। সারোয়ার সামান্য একজন কর্মচারী হয়ে সিবিএ নেতা হবার সুবাদে রামরাজস্ত কায়েম করে ক্ষমতার দাপটে পতিত সরকারের পূজারীতে মগ্ন ছিলেন।
অবৈধ আয়ের মাধ্যমে ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সারোয়ারের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে । ইতোমধ্যে দুদক এ বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে বলে জানাগেছে। সূত্রমতে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে দুদকের অনুসন্ধান টিমকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন সারোয়ার।তার অর্থ ভান্ডারে শত শত কোটি টাকা রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর জানাগেছে ।
তিনি পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের চাকরি দিয়ে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএতে। সারোয়ার হোসাইন একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। সিবিএ নেতা হবার বদৌলতে অসম্ভবকে সম্ভব করে সংস্থায় একতছত্র কায়েম করেন এই নেতা। তিনি এতোই ক্ষমতাধর যে, শ্যালকের চাকরির বয়স সীমা পেরিয়ে গেলেও তাকেও চাকরি দিতে সক্ষম হয়েছেন। স্ত্রী কামরুন নাহার মলি ট্রেসার পদে চাকরি করেন। কিন্তু স্বামী সিবিএ নেতা হওয়ায় তিনি অফিস না করেই শুধু হাজিরা খাতায় সই করে মাসিক বেতন ভাতা ভোগ করেছেন। তার খুটির জোর ছিলো শক্তিশালী। এখনো দাপট কমেনি সারোয়ারের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিবিএ'র প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তার একনিষ্ঠ সমর্থক ও কর্মী ছিলেন সারোয়ার। তিনি অবস্বরে যাওয়ার পর সবাইকে ম্যানেজ করে সারোয়ার হোসাইন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। আবুল-সারোয়ার জুটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় প্রায় ১৮শ' কর্মচারীর অধিকাংশই তাদের উপর ক্ষুব্ধ। কারণ তাদের দুর্নীতির পরিমাণ এতোই বেশি যে, যা কর্মচারীদের ভাবিয়ে তুলেছেন। তবে উপরের স্যারদের সাথে সারোয়ার হোসাইনের বেশ সখ্যতা থাকায় দুদক এর মামলা সহ সব অনিয়ম দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তেই আছেন। বিআইডব্লিটএ'র কর্মচারীদের প্রশ্ন, একজন সিবিএ নেতার নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, ধন-সম্পদ এবং ব্যাংক ব্যালেন্স এর অভিযোগ থাকা সত্বেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। দুর্নীতিপরায়ণ এই ব্যক্তির নিকট থেকে সাধারণ কর্মচারীরা তেমন কোন লাভবান না হলেও তার আত্মীয়-স্বজনরা সব সুবিধাই ভোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা থাকার পরও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। উপরন্ত সারোয়ার হোসাইন এর প্রতিনিয়ত ডিমান্ড বাড়ছেই বাড়ছে।
টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ, বদলি এবং ইজারা ঘাট সহ বিভিন্ন তদবিরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম ব্যবহার করতেন এই সিবিএ নেতা। যা মন্ত্রী নিজেও অবগত ছিলেন। মন্ত্রীর এপিএস আবুল বাশার তাকে সর্বদা সহযোগিতা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এপিএস বাশার সারোয়ার হোসাইনের আস্তাভাজন হয়ে নিজেও আখের ঘুচিয়েছেন।
জানা যায়, সারোয়ার হোসাইনের শালি যুক্তরাজ্য প্রবাসী নুরুন্নাহার পারভিনের নামে রাজধানীর খিলগাঁও, চৌধুরীপাড়া, মাটির মসজিদ সংলগ্ন বি- ১০৮ নাম্বার বাড়ির ৭ম তলায় প্রায় কোটি টাকা খরচ ১৬ শ' বর্গফুটের ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন সারোয়ার। বর্তমানে সপরিবারে সেখানেই বসবাসা করেন তিনি। নিজের টাকায় কেনা এই ফ্ল্যাট টি শালিকার টাকায় ক্রয় করা হয়েছে বলে সারোয়ার হোসাইন এর দাবি। তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে থাকেন শুধু। টাংগাইলের কাগমাড়ায় ( কাইয়্যামাড়া) কোটি টাকা খরচ করে জমিও ক্রয় করেছেন । জাহাজ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা। সারোয়ারের সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের ছিলো সখ্যতা। তাদের বিভিন্ন ব্যবসায় পুজি বিনিয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দেলডা গ্রামে সারোয়ার হোসাইনের বাড়ি। সারোয়ার হোসাইন এলাকার মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয়। চাকরী দেয়ার সুবাধে আত্নীয় স্বজনদের কাছে অনেক প্রিয় সারোয়ার হোসাইন। তবে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে নগদ টাকা নিয়েই চাকরি দিয়েছেন বলে জানাগেছে ।
সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসেন পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে যাদের চাকরি দিয়েছেন তারা হলেন, স্ত্রী কামরুন নাহার মলি, পদবি -ট্রেসার।
আপন ফুফাতো ভাই আব্বাস আলী। আপন মামাতো ভাই আশরাফ। আপন চাচাতো শ্যালক আহসানুল হক কাইয়ুম, পদবি-শুল্ক আদায়কারী।
চাচাতো ভাই শামসুল আলম মনি।,আপন খালু আব্দুল জলিল, পদবী - শুল্ক আদায়কারী।
ভাবি - নাজমা বেগম, পদবি -সহকারি। খালাতো ভাই - আনিসুর রহমান, পদবি -শুল্ক আদায়কারী।
আপন ভাতিজির জামাই - তাইজুল, পদবি -ট্রেসার।
আপন খালাতো ভাই আনু, পদবি -সহকারি। আপন মামা ইউসুফ। চাচাতো শ্যালক কাইয়ুমের স্ত্রী রুমেনা আক্তার, পদবী -নিম্নমান সহকারী।
আপন খালাতো ভাই নজরুল ইসলাম, পদবি -গাড়ি চালক।
চাচাতো ভাই - মোজাফফর হোসেন, পদবি -অফিস সহায়ক। আপন খালাতো ভাতিজা আরশাদ, পদবি -অফিস সহায়ক। আপন ভাতিজা -আতিক হাসান, পদবী -অফিস সহায়ক।
চাচতো ভাতিজা -আতোয়ার রহমান, পদবি - অফিস সহায়ক। ভাতিজা হযরত আলী, পদবী -টার্মিনাল গার্ড। আপন ভাতিজা -জুয়েল রানা, পদবী -টিসি।
ফুফাতো ভাই আজগর, পদবী -নিম্নমান সহকারি। ভাগিনা -আনারুল ইসলাম -রেকর্ড কিপার। ভাতিজা -সোহেল রানা, পদবী -পাইলট। চাচাতো ভাতিজা -আব্দুল মালেক -পদবি- লস্কর। ভাতিজা -হাসান, পদবী -অফিস সহায়ক।
চাচাতো ভাতিজা -হযরত আলী, পদবী- টার্মিনাল গার্ড। চাচাতো ভাতিজা শান্ত, পদবি -লস্কর।
ভাতিজা সবুজ শেখ, পদবী- লস্কর। ভাতিজা মশিউর রহমান, পদবী -গ্রীজার।
ভাতিজা হাফিজুল ইসলাম, পদবী -গ্রীজার। ভাতিজা ইমরান হাসান, পদবী -গ্রীজার। ভাতিজা -আতিকুর রহমান -পদবি -মার্ক ম্যান। ভাতিজা আল আমিন, পদবী মার্ক ম্যান।
ভাতিজা জামাল, পদবী - অফিস সহায়ক। তিনি ,চেয়ারম্যানের দপ্তরে কর্মরত আছেন। ভাগিনা জিয়াউর রহমান, পদবি - নিম্নমান সহকারী। মামতো ভাইয়ের ছেল - আবদুল্লাহ, (অনিক), পদবি- সহকারী।
মামাতো ভাই আনিছুর রহমান, পদবি- শুল্ক প্রহরী এবং ভাগিনা শামিম, পদবি- ট্রাফিক। তিনি সুপারভাইজার পদে অবৈধভাবে অফিসে নিম্নমান সহকারী ডিউটি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে নোয়াখালী বেল্টের অনেক লোকের চাকরি দিয়েছেন সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসেন। সব মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক লোকের চাকরি হয়েছে এই সিবিএ নেতার হস্তক্ষেপে। তার অনুসারীরা চাকরির বিষয় টি পজেটিভ দেখছেন। তবে এতো গুলো মানুষের চাকরি দিয়ে বিআইডব্লিটিএ তে নজির স্থাপন করেছেন সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসাইন। সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ-কে ঘিরে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে যে তান্ডব শুরু হয়েছে তার একটি অংশের লিড দিচ্ছেন সারোয়ার হোসাইন। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু সক্রিয় নয় মতিঝিল এলাকায় তার বাহিনী দিয়ে তান্ডব চািিলয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সারোয়ার হোসাইনকে ফোন করে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, সারোয়ার হোসাইন এর অবৈধ ধন-সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষমতার অপব্যহার সাবেক দুই মন্ত্রীর সাথে সখ্যতা,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে টাকা বিনিয়োগ এবং বিদেশে টাকা পাচারের ফিরিস্তি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.