February 23, 2025, 8:58 am


বিশেষ প্রতিনিধি

Published:
2024-11-05 17:23:02 BdST

তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী পান্নাশত কোটি টাকার মালিক


বিআইডব্লিউটিএ সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাস শত কোটি টাকা মালিক! পান্নার পদবি “হিসাব সহকারী”। তিনি এ পদে বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। আর বাসা ভাড়া দেন ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে কেরানীগঞ্জের সানওয়ে স্যাটেলাইট সিটিতে প্লট, গ্রামের বাড়িতে এয়ারকন্ডিশন সম্বলিত বাড়ি নির্মাণ, ইন্ডিয়ায় আলিশান বাড়ি এবং ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানা গেছে।
নাম তার পান্না বিশ্বাস ওরফে পান্না। বিআইডব্লিউটিএ ২০১৩ সালে হিসাব সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরির শুরু থেকেই ডিউটি করেন মতিঝিলস্থ বিআইডব্লিউটিএ ভবনে। এ সুবাদে সিবিএ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও হয়েছেন। এর বাইরে নিজেকে গোপালগঞ্জের অধিবাসী পরিচয় দিয়ে পুরো ভবনে আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি কাজ না করে সারাক্ষণ আড্ডা দিতেন চেয়ারম্যান এর পিএ রনির চেম্বারে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাস হিসাব সহকারী পদে মাসিক বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। তার বাসা ভাড়া একচল্লিশ হাজার টাকা এবং বিদুৎ বিল, গ্যাস বিল, সার্ভিস চার্জ সহ ৬০ হাজার টাকার উপরে গুণতে হয় মাসিক বাসা ভাড়া । গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ধারেন্দা গ্রামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তিন তলা বিশিষ্ট ডুপলেশ বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির প্রতিটি কক্ষে লাগিয়েছেন এয়ারকন্ডিশন। তৃতীয় শ্রেণীর এই কর্মচারীর মাসিক কি পরিমাণ অবৈধ আয় থাকলে আলিশান জীবন যাপন করতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিআইডব্লিউটিএ'র সাধারণ কর্মচারীগণ।


পান্না বিশ্বাসের পদবী হিসাব সহকারী এ পদে থেকেই পতিত সরকার আমলে অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে প্রায় ১শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়ে তিনি কেরানীগঞ্জের সানওয়ে স্যাটেলাইট সিটিতে স্ত্রী দিপীকা দাসের নামে ১ কোটি টাকা দিয়ে ১টি প্লট ক্রয় করেছেন। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ধারেন্দায় কোটি টাকা খরচ করে তিন তলা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির সাজসজ্জা দেখে মনে হবে এটি কোন রাজকীয় ভবন তৈরি করা হয়েছে। টাইলস যুক্ত প্রতিটি রুমে লাগানো হয়েছে এয়ারকন্ডিশন।রুমগুলো সাজানো হয়েছে দামি সব ফার্নিচার দিয়ে। বাড়ির পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে মন্দির। গ্রামে অনেক সম্পদও কিনেছেন পান্না বিশ্বাস। সবচেয়ে বড়ো যে কাজ টি ভাগিয়েছেন, তা হলো ইন্ডিয়াতে আলিশান বাড়ি এবং ব্যবসা বাণিজ্য খুলে বসেছেন। তার অবৈধ আয়ের অধিকাংশ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ইন্ডিয়ায় পাচার করেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এজন্য পান্না বিশ্বাস চিকিৎসার নাম করে বছরে কয়েক দফা ইন্ডিয়ায় যাতায়াত করেন। সেখানে তার গেতিগোষ্টি আছে। তারাই মূলত ব্যবসা বাণিজ্য দেখবাল করেন।
খবরে আরো প্রকাশ, বাবা পঞ্চানন বিশ্বাস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তার মা ফেমেলি প্লানিং- এ মাঠ কর্মী ছিলেন। আর স্ত্রী দিপীকা দাস রাজধানীর উদয়ন স্কুলে শিক্ষীকা হিসেবে কর্মরত আছেন। স্ত্রীর চাকরি নিতেও মোটা অংকের টাকা খরচ করেছন বলে অভিযোগ আছে। এই হলো পান্নার পারিবারিক আয়ের উৎস।


পান্না বিশ্বাস এর অবৈধ আয়ের উৎস সন্ধান করে জানা যায় যে, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান এবং গোপালগঞ্জের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে যতো সব অপকর্মে লিপ্ত পানা বিশ্বাস। অফিস ডিউটি বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের পিএ রনির দপ্তরে সারাক্ষণ আড্ডায় মগ্ন থাকতেন। রনির যোগসাজশে পান্না বিশ্বাস কর্মচারিদেরকে সব সময় চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতেন। চেয়ারম্যানকে পান্না যা বলবেন তাই কার্যকর করা হয়, এমন সব উপরি গল্প করে বিভিন্ন কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের নিকট থেকে নিয়মিত বখরা (চাঁদা) আদায় করা পান্না এখনো বেপরোয়া । পান্নার বেনামে ঠিকাদারি এবং ঘাট পয়েন্টে ইজারাদার ব্যবসা চলচ্ছে জমজমাট। যেকোন টেন্ডারে পান্না বিশ্বাস এবং চেয়ারম্যানের পিএ রনিকে দুই পাসেন্ট কমিশন দিতে হতো। টেন্ডার হবার আগেই ঠিকাদারকে রেড নির্ধারন করে দেয়া হতো বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রযেক্ট ডিরেক্টর (পিডি)'র সাথে আগ থেকেই দেন-দরকার পাকাপোক্ত করা হতো। বিভিন্ন ঠিকাদারের অফিস কিম্বা বড়ো কোন রেস্টুরেন্টে খাবার টেবিলে বসে এসব মিলতাল করতেন পান্না সিন্ডিকেট।


ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পান্না বিশ্বাস প্রতি দিন অফিসে ঢুকেন খালি হাতে আর বাসায় ফিরেন পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে। রনির মাধ্যমে চেয়ারম্যানের অতি নিকটতম এবং বিশ্বস্থ হওয়ায় পান্নার বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ করলেও উল্টো তাকেই খড়গ পোহাতে হয় । পান্না এতোটাই বেপরোয়া যে, প্রকাশ্যে অন্যায় অনিয়ম এবং দুর্নীতি করেও অছেন বহাল তবিয়তে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বি-২১৭৬ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (মেয়াদ উত্তীর্ণ ) পান্না বিশ্বাস কাউকেই তোয়াক্কা করেননা। পান্না বিআইডব্লিউটিএ ভবনে নিজস্ব বাহিনি গড়ে তুলেছেন। এই লাঠিয়াল বাহিনীকে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ঘাট ইজারা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া পান্না বিশ্বাস গোপালগঞ্জের কয়েক জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বড়ো সব কাজও ভাগিয়ে নিতেন। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলে মুহুর্তের মধ্যেই বদলি বা বেতন ভাতা আটকে দিয়ে হয়রানি করতেন। বহু কাজের কাজি পান্না বিশ্বাস মতিঝিল পাড়ায় গড়ে উঠা ক্লাব গুলোতেও নিয়মিত যাতায়াত করেন বলে বিশ্বস্থ সূত্রে খবর জানা গেছে। তার নামে বেনামে যে সব ধন সম্পদ আছে তা আয়কর রিটার্ন এর সাথে অসামজস্য। তার মাসিক অবৈধ আয়ের উৎস এবং পরিসংখান অনুমান করার মতো কোন সূত্র পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে তার মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা বৈধ। বাকি সব অবৈধভাবে রোজগারের টাকায় পান্না বিশ্বাস শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।


সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাস এর কাছে তার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে এসব তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়। পাশাপাশি পান্নার এক আত্মীয় উপজেলা চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দেন। পরে অবশ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলে জানান। তাছাড়া বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন, মা সরকারি চাকরি করতেন এবং বড়ো ভাই স্কুল শিক্ষক। অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, কেরানীগঞ্জে সানওয়ে স্যাটেলাইট সিটি তে স্ত্রীর নামে প্লট কেনার বিষয় টি ডাহা মিথ্যা। আর বেতনের চেয়ে অনেক বেশি বাসা ভাড়ার বিষয় টি জানতে চাইলে বলেন, আমার স্ত্রী উদয়ন স্কুল এর শিক্ষীকা। তাই বাসা ভাড়া তো একটু বেশি হতেই পারে। তাহলে কি আপনি স্ত্রীর উপার্জনের উপর নির্ভর? এমন প্রশ্নের জবাবে পান্না বিশ্বাস বলেন, না, তা হবে কেন।
পান্না বিশ্বাস সম্প্রতি শ্রমিক দলের সভাপতি মাজহারুল ইসলামকে মারধর এর মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা থাকলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। পান্না সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের তলপিবাহক ছিলেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.