নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী
Published:2024-11-19 23:07:26 BdST
রাজবাড়ীতে নিরাপত্তাহীনতায় শত শত ছাত্রছাত্রী
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় নদীর তীরবর্তী অনন্ত নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীর তীরবর্তী হওয়ার কারনে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। কোন কোনটার বিদ্যালয়ের কিছু অংশ নদীতে ভেঙ্গে গেছে অবকাঠামোসহ। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় নদীতে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার আশক্ষার কথা জানিয়েছে তাদের অভিভাবকরা।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় চর ধুনচী বিদ্যালয়টির
রাজবাড়ীতে ১৭ বছর ধরে সাত শতাংশ জমির উপর টিনশেড ঘরে চলছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ে নেই কোন খেলার মাঠ। রয়েছে শ্রেণীকক্ষের সংকট। পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলেও প্রতিবছরই কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর এলাকায় পদ্মার পাড়ে চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়টির অবস্থান ছিল বর্তমান স্থান থেকে আরও প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে। ৫বার বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের কবলে পরেছে। এতে করে বিদ্যালয়টি হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। সর্বশেষ ভাঙনের পর ২০০৭ সালে চরধুঞ্চি এলাকায় শহর রক্ষা বাধের পাশে মাত্র সাত শতাংশ জমির উপর একটি টিনশেড ঘরে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গঠন করতে হলে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ জমি থাকা লাগবে। নদী ভাঙনের কবলে পরে প্রতিষ্ঠানটি এই স্থানে এসেছে। পর্যাপ্ত জমি না পাওয়ার কারণে বিদ্যালয়টি অন্য কোথাও সরানো যাচ্ছে না। আবার আইনের জটিলতার কারণে কোন শিক্ষককে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বদলি বা সরানো যাচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালে সর্বশেষ ভাঙনের কবলে পরে স্কুলটি। পরে এখানে একটি ঘরের মধ্যে বিদ্যালয়ের পাঠদান পরিচালনা করা হয়। ২০১২ সালে স্থানীয় এক ব্যক্তি সাত শতাংশ জমি দান করলে স্কুলটি পুননির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিতে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়। এখনও স্কুলটি সেই অবস্থায় আছে। ঘরের চাল অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি নামলেই পানি পরে। বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১জন। এর মধ্যে শিশু শ্রেণীর ১৮জন। ১ম শ্রেণীতে ১১জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৬জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ৮ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ১৩জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ৫ জন। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ছয়জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। একজন সহকারী শিক্ষক মাতৃকালীন ছুটিতে আছেন। এখন মোট চারজন শিক্ষক ও একজন দাপ্তরিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের সোনাকান্দর এলাকায় শহররক্ষা বাধের দেড়শো মিটার দূরে পদ্মাপারে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। রাস্তা থেকে প্রায় ১০ ফুট নিচে নেমে পায়ে হাটা একটি সরু রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়। একটি আধাপাকা টিনসেড ঘর রয়েছে। বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেষে পূর্বপাশে মসজিদ। পশ্চিমপাশে একটি বসতবাড়ি। সামনে বারান্দার তিনফুট পরেই বাশের বেড়া দিয়ে আটকানো রয়েছে। টিনসেড ঘরটিতে ছোটবড় চারটি কক্ষ। এর একটিতে শিক্ষকরা বসেন। একটি শিশু শ্রণীর জন্য নির্ধারিত। ৫ম শ্রেণীর জন্য কোন ক্লাস বরাদ্ধ না থাকায় শিশু শ্রেণির কক্ষে মাদুরে বসে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। বিদ্যালয়টিতে নেই কোন খেলার মাঠ।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী ফারহান সুমন বলেন, ‘আমি ২০০৭ সালে স্কুলটিতে প্রথম শেণীতে ভর্তি হই। তখন বিদ্যালয়ের শুধু একটি কাঁচা টিনের ঘর ছিল। পরে কাঁচা ঘরটি আধাপাকা করা হয়েছে। আমি যখন বিদ্যালয়টিতে পড়তাম তখন সব ক্লাস মিলিয়ে ১৫০ জনের মত শিক্ষার্থী ছিল।’
স্থানীয় বাসিন্দা কবি নেহাল আহমেদ বলেন, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে সকল বৈশিষ্ঠ থাকা দরকার তার কোন কিছুই এখানে নেই। যেকোন সময় এটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখানে শ্রেণীকক্ষের সংকট রয়েছে। স্কুলে প্রবেশের কোন রাস্তা নেই। এই বিদ্যালয়ে যারা পড়লেখা করে তাদেরকে এক প্রকার বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ের দিকে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। আমরা চাই বিদ্যালটি অন্যত্র সরিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হোক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী কোহিনুর আক্তার বলেন, ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকেই বিদ্যালয়টি এখানে শিপট করা হয়। প্রথম দিকে কোনমত করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের এই টিনসেড ঘরটি নির্মাণ করা হয়। তারপর থেকেই বিদ্যালটি এভাবে পরিচালনা হয়ে আসছে। এই বিদ্যালয়ে এক সময় ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেসব সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার তার কোনটিই এখানে নেই। এই কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করেন না। এছাড়া এলাকাটি নদীর কাছে হওয়ায় যে সকল শিক্ষাথী এখানে ভর্তি হয় তারা নিয়মিত স্কুলে আসে না। অনেক সময় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে ক্লাস করাতে হয়। তাদের পরিবারের লোকজনের তেমন কোন আগ্রহ নেই।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস জাফরী বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। সবগুলো বিদ্যালয় ঘুরে দেখা হয়নি। এই বিদ্যালয়ের কথা আমি জানতে পেরেছি। বিদ্যালয়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.