February 23, 2025, 12:14 am


বিশেষ প্রতিনিধি

Published:
2024-11-21 11:33:34 BdST

সিরাজদিখানের বিএনপি নেতা হায়দারের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের নিকট লিখিত অভিযোগ


দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেশের প্রথিতযশা বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন জায়গা দখল কিংবা চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষুদ্ধ বিএনপি’র ত্যাগী ও প্রকৃত নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি এসব অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দলীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে বহিস্কারও করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে আবাসন প্রকল্পের শত কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম হায়দার আলীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচারের আশায় লিখিত অভিযোগ করেছেন পুলিশ প্রধান মঈনুল হাসান এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিকট ।এদিকে অভিযুক্ত হায়দার বলেছেন, মো: আবুল হোসেন মানুষের কাছ থেকে প্লট বিক্রির নামে ৫-৬ কোটি টাকা আত্বসাৎ করেছেন। লিখিত ওই অভিযোগে জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম হায়দার আলীকে অভিযুক্ত করে গত ২০ অক্টোবর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে তারেক রহমান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন দক্ষিণা গ্রীণ প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হোসেন এবং কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জায়েদ আহমেদ। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর আইজিপির কাছে আইনী সহায়তা চেয়ে আরো একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও তার পরিবার নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। বিএনপি নেতা এম হায়দার আলী জোরপূর্বক তার মাস্তান বাহিনী দিয়ে কোম্পানীর শত কোটি টাকার জায়গা দখল করেছেন। খাসকান্দি গ্রামের আঃ মালেকের চার ছেলে সুমন, সুজন, মামুন, সোহাগসহ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে আবুল হোসেনের ক্রয়কৃত জমিতে টিনসেড ঘর তুলে দখলের পায়তারা করছেন। গত ২৪ আগষ্ট সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সুমন, সুজন, মামুন, সোহাগ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেডের সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করেন। জমির মালিক তাদেরকে বাঁধা প্রদান করেন। এ সময় আবুল হোসেনকে প্রাণ-নাশের হুমকী প্রদান করেন সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ২৫ আগষ্ট আবুল হোসেন সিরাজদিখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। যার নম্বর-৯৯০। জিডি করায় সুমন বাহিনী আরো ক্ষিপ্ত হন। তারা জমির মালিককে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।


জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেড কোম্পানীর সাইনবোর্ডের ওপর 'সাউথ ভ্যালী সিটি' নামে স্টিকার লাগিয়ে দিয়ে সাইট অফিসের রং পরিবর্তন করে সাউথ ভ্যালী সিটি' নাম লিখে দেয়া হয়। খাসকান্দি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম সাগর এবং আঃ মালেকের ছেলে সুমন ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেডের প্রজেক্ট দখল করেন। এরপর থেকে বিএনপি’র দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে এম হায়দার আলী এমডি বলে পরিচয় প্রদান করছেন। তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০২১ সালের ১৮ মার্চ উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চরপানিয়া, খাসকান্দি, চান্দের চর এ তিন মৌজা নিয়ে "দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে আবাসন প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত করা হয়। জয়েনস্টক কর্তৃক নিবন্ধিত আবাসন প্রকল্পটি বিগত ৪ বছর ধরে আবুল হোসেন চেয়ারম্যান ও মোঃ জায়েদ আহমেদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গত ১৬ জুলাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম হায়দার আলীর নেতৃত্বে আবাসন প্রকল্পটির সাইড অফিসের রং পরিবর্তন করে প্রকল্পের সাইনর্বোডের উপর "সাউথ ভ্যালি সিটি" নামে ষ্টিকার লাগিয়ে দিয়ে জোর পূর্বক কোম্পানীর সাইড অফিস দখল করেন। এরপর হতে প্রকল্পের মালিকদেরকে জমিতে যেতে দিচ্ছেন না উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম হায়দার আলী। তার অনুসারী সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক আঃ বাতেন, স্থানীয় দিলু মিয়া, সুমন মিয়া, নজরুল ইসলাম দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি বালুচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেনকে লিখিত ভাবে জানানো হলে তিনি একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। অবশেষে দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেড আবাসন প্রকল্পের শত কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল মুক্ত করতে এম হায়দার আলীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য
লিখিত অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। এদিকে রবিবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য দক্ষিণা গ্রীন প্রপার্টিজ লিমিটেডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিরাজদিখানা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান। এ সময় এম হায়দার আলীসহ বাদী আবুল হোসেন পক্ষের লোকজন ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।


এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি যতটুকু জানি ওখানে একটা পক্ষ একটা জমিতে বালু ভরাট করেছে আরেকটি পক্ষ সেই বালু কেটে একটা ক্যানাল তৈরি করেছেন। এটা নিয়ে দুই পক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব হয়েছে এবং তারা দুই পক্ষই ইউএনও এর সাথে বসবেন। পরে বিস্তারিত জানা যাবে। আপাতত: আমি সেখানে গিয়েছি যাতে দুই পক্ষের মধ্যে কোন সংঘাত না হয়। সেই সাথে আমি দুই পক্ষকে সংঘাতে না জড়াতে বলে এসেছি। এটাও বলা হয়েছে একটা তারিখ ঠিক করে তারা যেন ইউএনও স্যারের সাথে বসেন। অভিযুক্ত সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুঠোফোনে, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কথোপকথনের এক পর্যায় সংবাদটি যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য তিনি প্রতিেিবদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক প্রশ্নবানে বলেন, অভিযোগকারী আবুল হোসেন জমি ও প্লট বিক্রির নামে মানুষের কাছ থেকে ৫/৬ কোটে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে কোম্পানীর কতটুকু মালিকানা অভিযুক্ত হায়দারের আছে তা জানাতে পারেননি তিনি। ভুক্তভোগী আবুল হোসেন লিখিত অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। তার দখল হওয়া কোম্পানীর জায়গা দখল মুক্ত করতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান তিনি। পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে এমন কথা বলে ভুক্তভোগী আবুল সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বলে জানান। বিষয়টি খুব বড় কিছু নয় বলেও জানান তিনি।


এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরা সবাই সংঘবদ্ধ চক্র; একই সুতোয় গাঁথা। বিশেষ করে পদ্মাসেতু হবার পর এলাকার জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় গড়ে ওঠে এমন সব ব্যাঙের ছাতার মত হাউজিং কোম্পানী। যে যার যতটুকু জমি আছে তার উপরই সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে প্লট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ মানুষের নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা একমুঠো জমি কিনে শান্তিতে বসবাসের আশায় সংঘবদ্ধ চক্রকে টাকা দিয়ে নি:স্ব হয়েছেন। এরকম শত শত ভূক্তভোগী আছেন। সংঘবদ্ধ চক্রের পুঁজি হচ্ছে, তারা ঢাকায় একটি ছোটঘাট অফিস ভাড়া নিয়ে এবং স্টকএক্সচেঞ্জ থেকে লিমিটেট কোম্পানীর অনুমোদন নিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। প্রতিদিন স্থানীয় ভাবে এসব হাউজিং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শালীস-বিচার বসে। এরা মানুষের টাকা মেরে নিজেরা গাড়ী হাঁকিয়ে চলেন। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে একদল লুটপাট করেছে এখন বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.