February 23, 2025, 12:11 am


সালাহউদ্দিন মিঠু

Published:
2024-12-19 14:41:56 BdST

নতুন বাংলাদেশে অনন্য বিজয় দিবস


১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা প্রাপ্তির ঐতিহাসিক এক দিন। এ দিনে গোলামী জীবনের অবসানের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ নামের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। ৫৪ তম মহান বিজয় দিবস।


১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি তা প্রকৃতপক্ষে ছিল আমাদের জন্য দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীনতা লাভ। প্রথমবার বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে আমরা পৌনে দু’শ বছর পর মুক্তি লাভ করি ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। যে রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে আমরা সেই প্রথম স্বাধীনতা লাভ করি তার নাম ছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামের রাজনৈতিক সংগঠনটির জন্ম হয় ১৯০৬ সালে ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে। ঐ বছর নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঐ শিক্ষা সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক সম্মেলনের মাধ্যমে অবিভক্ত ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা নিয়ে ও আলোচনার কথা ছিল সে অধিবেশন। শিক্ষা সম্মেলনের উপস্থিত ডেলিকেটদের নিয়ে যে বিশেষ রাজনৈতিক অধিবেশনে যোগদানের জন্য তদানীন্তন উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু মুহম্মদ আলী জিন্নাহ সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেন এ যুক্তিতে যে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলে উপমহাদেশীয় জনগণের স্বাধীনতার জন্য যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কর্মকান্ডে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করা হবে। জাতীয় কংগ্রেসের কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি হয় এমন কিছু করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ তখন শুধু কংগ্রেসকে সমর্থন করে চলেন। এর ফলে তিনি হিন্দু-মুসলমান মিলনের দূত আখ্যা লাভ করেন। লক্ষ্য করার বিষয়, যে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠাকে অনাকাঙ্খিত মনে করতেন সেই মুহম্মদ আলী জিন্নাহই পরবর্তীকালে রূঢ় বাস্তবতার কারণে মুসলিম লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করে অবিভক্ত ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম প্রধান অঞ্চলসমূহ নিয়ে স্বতন্ত্র স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র (পাকিস্তান) প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জোরালো নেতৃত্বদান করে মুসলমান জনগণের কাছে ‘কায়েদে আযম’ হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বলা চলে, তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্বের ফলেই উপমহাদেশের মুসলিম জনগণ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এদেশি দুটি রাজনৈতিক দলকে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোভাবে দেখা যায়। এর একটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, আরেকটি নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। এর প্রথমটির দাবি ছিল, ভারতবর্ষকে অবিভক্ত, অখণ্ড ভারত হিসাবেই স্বাধীনতা দিতে হবে। পক্ষান্তরে মুসলিম লীগের দাবি ছিল, বৃটিশ রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে উপমহাদেশের পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মুসলিম প্রধান এলাকাসমূহ নিয়ে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।


নিখিল ভারত মুসলিম লীগের যে অধিবেশনে এই ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়, সেটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালে লাহোরে ঐ প্রস্তাব পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামেই খ্যাতি লাভ করে। বাঙ্গালী মুসলমানদের তৎকালীন জনপ্রিয় নেতা এ কে ফজলুল হক এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবের কোথাও ‘পাকিস্তান’ শব্দ ছিল না। কিন্তুু পরদিন অধিকাংশ হিন্দু পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয় ‘পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত’ বলে। মুসলিম লীগও পরবর্তী কালে তার মূল লক্ষ্য হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে স্বীকার করে নেয় এবং তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে পাকিস্তান আন্দোলন হিসাবে মেনে নেয়। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে উপমহাদেশে বৃটিশ রাজত্বের অবসানের মধ্য দিয়ে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এর একটি উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম প্রধান এলাকাসমূহ নিয়ে পাকিস্তান। আরেকটি বাকী এলাকাসমূহ নিয়ে হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র ভারত। এর মধ্যে ভারত একটি অবিচ্ছন্ন জনপদে অবস্থিত হওয়াতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তুু পাকিস্তান রাষ্ট্রের দু’টি অংশ প্রায় দুই হাজার মাইল ব্যবধানে অবস্থিত হওয়ায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুই অংশের মধ্যে সমস্যা শুরু হয়ে যায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের যাত্রা শুরুর কাল থেকেই।


এই সমস্যাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল: পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় যে রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠা হয় ঢাকায় ১৯০৬ সালে নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে। তাছাড়া ১৯৪৭ সালে একমাত্র বাংলাতেই মুসলিম লীগ জয়ী হয়ে হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দীর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে পাকিস্তান দাবিতে কায়েদে আজমের হাত শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়, যা বর্তমান পাকিস্তানের (সাবেক পশ্চিম পাকিস্তান) কোন প্রদেশেই সম্ভবপর হয়নি। এসব কারণে স্বাধীন পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের যেসব প্রত্যাশা পূরণ তো হয়ইনি, বিপরীতভাবে পাকিস্তানে একাধিক রাজধানী, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সমগ্র প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ায় এক ধরনের বঞ্চনা ও হতাশার মধ্যে স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে যাত্রা শুরু করতে হয় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে। উল্লেখ্য, সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ববঙ্গ প্রদেশের জনসংখ্যা ছিল বেশী এবং তারা সবাই ছিল বাংলা ভাষাভাষী। অথচ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ অফিসারদের অধিকাংশ অবাঙ্গালী উর্দুভাষী হওয়ার সুযোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ব্যবহার শুরুর একটা গোপন চক্রান্ত শুরু হয়ে যায়, যার প্রমাণ পাওয়া যায় পোস্ট গার্ড, এনভেলপ, মানি অর্ডার ফরম প্রভৃতিতে ইংরেজীর পাশাপাশি শুধু উর্দু ব্যবহার থেকে।


এই পরিস্থিতিতেই পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়ে যায় ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয় পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মীদের মাধ্যমে। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয়।
নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সকল দাবিদাওয়া মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন সেই নাজিমুদ্দিনই পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে এসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। নাজিমুদ্দিনের এই ডিগবাজির প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বহু ভাষা সৈনিক বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি আদায় করে নেন। পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব সর্বশক্তিক্রমে গৃহীত হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করার পর আর কেউ কোনোভাবে এর বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাননি। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই পরবর্তীকালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে এবং ক্রমে এদেশের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের প্রাক্কালে এই চেতনা যে প্রবল হয়ে ওঠে। দুর্ভাগ্যের বিষয় জনগণের এই চেতনাকে টিক্কা শাহী বর্বরতার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্ত চালালে সমগ্র দেশের জনগণ সর্বাত্মক সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে নয় মাসের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে। একারণেই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশকে আমরা সঠিক পন্থায় গড়ে তুলতে পারিনি। সুতরাং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গঠন করে তুলতে হলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য আমাদের অবশ্যই যথার্থভাবে অনুধাবন করতে হবে।


বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের এই বিজয় কিন্তু এক দিনে আসেনি। এই বিজয় অর্জনের ইতিহাস কেবল ১৯৭১ সালেও সীমাবদ্ধ নয়। ইস্পাত কঠিন ঐক্যে দৃঢ় জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম আর ত্যাগের সুমহান ফসল এ বিজয়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের এক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী আঘাত করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর। শুরু হয়ে যায় শোষণ-বঞ্চনা আর বৈষম্যের করুণ ইতিহাস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সেই শোষণ থেকে মুক্তি পেতে বিক্ষুব্ধ বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম স্ফুরণ ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই চেতনার ধারাবাহিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা তথা স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকারের জন্য গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০-এ নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সে বিজয় পাকিস্তানি সামরিক শাসক চক্র মানতে পারেনি।
ফলে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। এদিন রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতির পিতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার অমোঘ বাণী– ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মূলত সেদিন থেকেই গোটা জাতির মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার স্পৃহায় জেগে উঠেছিল গোটা জাতি। কিন্তু বাঙালিকে স্তব্ধ করতে ২৫ মার্চ কালরাতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। সেই গণহত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা।


তবে দিশেহারা জাতিকে আবারও জাগিয়ে তুলেছিল বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা। গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু এ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে দেশবাসীকে অনুরোধ ও নির্দেশ দেন তিনি।
শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস ধরে চলা সে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের আরেকটি মহান অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা। ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।


দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে ঘনিয়ে আসে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন হানাদার সেনা। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারের উপস্থিতিতে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানের পক্ষে লে. জেনারেল নিয়াজি এবং মিত্র বাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। আর অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তেই বিশ্ববাসীকে অবাক করে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং মানচিত্র। রক্তাক্ত পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি।


আজকের দিনটি তাই জাতির শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। তাই তো বিজয় দিবসের ৫২ বছর পূর্তির দিনে আজ বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.