নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী
Published:2024-12-20 11:52:21 BdST
ছাই থেকে সোনা
প্রথমে সংগৃহীত ছাই থেকে করে ময়লা আলাদা করা হয়। নিচের পাওয়া তরলে মিশে থাকে স্বর্ণ, রুপা, সিসা ও তামা। এবার নাইট্রিক এসিডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে সোনা ও রূপা আলাদা করা হয়। তাদের এই উদ্ধার করা স্বর্ণ ও রুপা শতভাগ খাঁটি।
প্রবাদ আছে ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’। এই প্রবাদের বাস্তব রূপকার কাদের আলী, বাদশা মিয়া, নুরুল হকরা। ছাই থেকে সোনা-রূপা খুঁজে বের করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। তাঁদের মতো রাজবাড়ীর এই পেশায় যুক্ত। এলাকায় তাঁরা ছাই কারবারি নামেই পরিচিত।
কাদের আলী বলেন, এখানে যারা এই পেশায় আছেন তাদের সবাই এসেছেন মানিকগঞ্জ থেকে। প্রায় ১২ বছর ধরে স্বর্নের দোকানের পাশের সোনা-রূপার অলঙ্কার তৈরির দোকানগুলো থেকে পরিত্যক্ত ছাই-ধুলো সংগ্রহ করেন। এরপর পানিতে ধুয়ে গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধাতুর গুঁড়া আলাদা করা হয়। এসব ধাতু গলিয়ে আলাদা করা হয় সোনা–রূপা।
কথা হয় ছাই ব্যবসায়ী বাদশা মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাঁচটি পরিবার এই গ্রামে বাস করি। এর মধ্যে অনেকেই নিজস্ব বাড়ি করেছেন। কেউ ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ছাই–ধুলি সংগ্রহের জন্য স্বর্ণকারদের মাসে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। ভাগ্য ভালো হলে ৩০-৪০ হাজার টাকাও আয় হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৭-১৮ বছর আগে মাত্র দুই-একজন ব্যবসায়ী এই এলাকায় আসেন। এখন আট–নয় বছর ধরে আছেন। কয়েক বছর আগে আরও বেশি লোক ছিলেন। তবে অলঙ্কার তৈরির দোকান থেকে পর্যাপ্ত ছাই-মাটি না পাওয়ায় অনেকে অন্য এলাকায় চলে গেছেন।
রাজবাড়ীর চারিগ্রাম বাজার এলাকার অলঙ্কার কারিগর জিতেন কুমার কর্মকার বলেন, আমি এখানে দুই যুগ ধরে কাজ করে আসছি। অনেক দোকানে কাজ করেছি। কাজের সময় সোনা বা রূপার কিছু অংশ পড়ে হারিয়ে যায়। ১৫-২০ বছর আগেও কারখানার ছাই-ধুলো ফেলে দেয়া হতো। এখন একটি বস্তায় জমা করা হয়। মাস শেষে বিক্রি হয়। এই ধুলো বেচে যা আসে তা দিয়ে বছরে অর্ধেক দোকান ভাড়া উঠে যায়।
চারিগ্রাম বাজারের অলঙ্কার ব্যবসায়ী লিপন বলেন, "বেশিরভাগ দোকানের ছাই-ধুলো মালিকরা বিক্রি করেন। এতে বছর বা মাস শেষে কিছু আয় হয়। আবার কারিগরদের কাজের সরঞ্জামের মধ্যেও কিছু গুঁড়ো পড়ে থাকে। সেগুলো তারাই বিক্রি করেন। এটা কারিগরদের একটা বাড়তি আয়।"
স্বর্ণের দোকানের পরিত্যক্ত এই ছাই থেকে শুধুমাত্র সোনা নয়, রূপা, তামা, সীসা ও ব্রোঞ্জ খুঁজে বের করেন ছালি ব্যবসায়ীরা। সোনা এবং রূপা বিকিকিনির জন্য চারিগ্রাম বাজারে গড়ে উঠেছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি জুয়েলারী দোকান। এসব দোকান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয় ছাই থেকে সংগৃহীত সোনা এবং রূপা।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.